খাদ্য সঙ্কটে বিলুপ্ত হচ্ছে কালোমুখা হনুমান-দল ছেড়ে ছড়িয়ে পড়ছে বিভিন্ন শহরে by মিজানুর রহমান

সাতক্ষীরা ॥ লেজসহ প্রায় ৫ ফুট দীর্ঘ কালোমুখা হনুমানটি প্রায় ১৫দিন ধরে সাতক্ষীরা শহরের নতুন অতিথি। শহরের দোকান, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আর বাসা বাড়িতে খাবারের জন্য ওর আকুতি প্রতিদিনের। খাবার না পেলে জোর করে দোকান থেকে কলা, বিষ্কুট, আর বাসা বাড়ি থেকে বিভিন্ন খাবার নিয়ে চলে যাওয়াই হচ্ছে ওর নিত্যদিনের কাজ।


তবে মাটিতে নেমে থাকার উপায় নেই। কুকুরের হামলার মুখে বেশিরভাগ সময়ই খাবার না পেয়েই গাছে আর বাড়ির ছাদে আশ্রয় নিয়ে প্রাণ বাঁচাতে হয় হনুমানটির। শুধু সাতক্ষীরা শহরেই নয়। খুলনা, বাগেরহাট, যশোরসহ বিভিন্ন শহর আর গ্রামে এখন দল ছুট কালোমুখা হনুমানদের পদচারণা। তবে বেশি দিন এদের দেখা যায় না। কয়েক দিনের মধ্যেই দল ছুট হয়ে এলাকা ছাড়ার পর এই হনুমানগুলো হারিয়ে যাচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে মারাও পড়ছে বিভিন্নভাবে। বিরল প্রজাতির কালোমুখা হনুমানের একটি আবাস রয়েছে যশোরের কেশবপুরের রামচন্দ্রপুর এলাকায়। বেসরকারী একটি সংস্থার জরিপ রিপোর্টে এই হনুমানের সংখ্যা প্রায় ৫ শতাধিক। তবে প্রতি বছর হনুমানের বংশ বৃদ্ধি হলেও এই বংশবৃদ্ধি টিকছে না বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসি। খাদ্যের অভাবে প্রতিদিন হনুমান এলাকা ছাড়ছে বিচ্ছিন্ন ভাবে। বিভিন্ন বাস, ফলের ট্রাক, আর মালবাহী যানবাহনের ছাদে চড়ে এরা চলে যাচ্ছে দেশের বিভিন্নস্থানে। গত কয়েক বছর সরকারীভাবে এই হনুমানদের জন্য খাদ্য সরবরাহের ব্যবস্থা করা হলেও চলতি বছর জুন মাস থেকে এই সরকারী খাদ্য সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে। অভিযোগ, ঠিকাদারের মাধ্যমে এই খাবার সরবরাহ করা হলেও প্রতিদিন নির্ধারিত পরিমাণ খাবারের থেকে অনেক কম এবং নিম্নমানের খাবার সরবরাহ করার কারণে ক্ষুধার্ত হনুমানরা এলাকার বাসাবাড়িতে হানা দিতে শুরু করে। এক পর্যায়ে এরা এলাকা ছাড়তে শুরু করে। ইতোমধ্যে নিম্নমানের ও পরিমাণে অল্প খাবার সরবরাহ করার কারণে ঠিকাদারের লোকজনদের কয়েকদফা জরিমানা ও আটক করা হয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে।
২০০১ সালে বিপন্ন এই হনুমান রক্ষায় প্রথম এগিয়ে আসে পিস নামের একটি সংস্থা। পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিয়ে কেশবপুরে বিলুপ্তপ্রায় এই প্রজাতির হনুমান সংরক্ষণ ও পরিচর্যার নামে তারা ৫ বছরের একটি প্রকল্প গ্রহণ করে। এর কিছুদিন পরে সরকারের বন বিভাগ স্থানীয় ঠিকাদারের মাধ্যমে প্রতিদিন এক হাজার ৮’শ ৩০ টাকার খাবার বরাদ্দ করে। গত বছর এ বরাদ্দ কমিয়ে এক হাজার ৫’শ ৩০ টাকা করা হয়। প্রায় ৫’শ হনুমানের জন্য এ বরাদ্দ একেবারে কম। এর পরও ঠিকাদার ৩ ভাগের একভাগ খাদ্যও সরবরাহ করে না বলে অভিযোগ রয়েছে। ফলে খাদ্যের অভাবে বিভিন্ন সড়কে, হাসপাতালের সামনে ব্যারিকেড দিয়ে হনুমানগুলো মানুষের হাতের ও ব্যাগের খাবার কেড়ে খায়। বিভিন্ন মুদি দোকানে হামলা করে রুটি, বিস্কুট কলা নিয়ে ছুট দেয়। সুযোগ বুঝে বাসাবাড়িতে ঢুকে খাবার নিয়ে যায়। এ ধরনের উৎপাতের কারণে হনুমানদের নানাভাবে মানুষের রোষানলে পড়ে আঘাত প্রাপ্ত এবং জীবন খোয়াতে হয়েছে। খাবার সন্ধানে ভবঘুরে হনুমান দলছুট হয়ে বিভিন্ন যানবাহনের ছাদে উঠে অন্যত্র চলে যাচ্ছে এবং মারাও পড়ছে।
মহাভারতের রামভক্ত হনুমানকে ঘিরে রামচন্দ্রপুর এলাকা এখন পরিচিত জনপদ। কিন্তু যে হনুমান নিয়ে এই পরিচিতি সেই কালোমুখা হনুমানরা ভালো নেই। হারিয়ে যাচ্ছে এই বিরল প্রজাতির হনুমানের অস্তিত্ব সরকারীভাবে খাদ্য সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় খাদ্যের সন্ধানে হনুমানগুলো কলা বোঝাই ট্রাক, পিকআপসহ বিভিন্ন যানবাহনের ওপর চড়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে চলে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে ঝালকাঠি, পিরোজপুর, পাইকগাছা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, ঝিনাইদহ, মাগুরাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে হনুমান খাদ্য অন্বেষণে চলে গেছে। বাইরে চলে যাওয়া এসব হনুমান আর ওদের আবাস স্থানে ফিরে আসতে পারে না। নানা প্রতিকূল পরিবেশে তারা মারা পড়ে।

No comments

Powered by Blogger.