লিমনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র

রাষ্ট্রের এরূপ আচরণে দেশবাসী ক্ষুব্ধ র‌্যাবের গুলিতে ঝালকাঠির লিমন পঙ্গু হয়ে যান গত বছর। এই মর্মান্তিক ঘটনার বিবরণ পত্রপত্রিকায় প্রকাশ হলে দেশব্যাপী আলোচনায় উঠে আসে লিমনের কথা। পাশাপাশি র‌্যাবের বিরুদ্ধে 'ক্রসফায়ার'-এর অভিযোগ বা বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড নিয়ে নতুন করে দেশ-বিদেশে সমালোচনার ঝড় ওঠে।


লিমনের পাশে প্রত্যক্ষ সহযোগিতার হাত প্রসারিত করে বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন। মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমানের উদ্যোগে লিমনের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসা সম্ভব হয় এবং কৃত্রিম পা নিয়ে চলাফেরা করেন এখন। গত বছর এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিলেন লিমন। গ্রামের গরিব মা-বাবার কিশোর বয়সী লিমনের সঙ্গে রাষ্ট্রের বিদ্বেষপূর্ণ আচরণের কী কারণ থাকতে পারে? এখন আবার রাষ্ট্র ন্যায়নীতি, আইন, বিচার ও সর্বোপরি মানবতার মুণ্ডপাত করে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দিয়েছে। তাও অত্যন্ত গোপনীয়তার সঙ্গে। যেন কেউ জানতে না পারে। র‌্যাবের মামলা তৎক্ষণাৎ গ্রহণ করা হচ্ছে। অথচ লিমনের মায়ের মামলার কোনো গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না। র‌্যাব গুলি করে তাঁর ছেলেকে পঙ্গু করেছে বলে যে অভিযোগ, তার কোনো গুরুত্বই রাষ্ট্রের কাছে নেই।
আমাদের প্রশ্ন- এ দেশে অপরাধ দমন করতে বিশেষ বাহিনী গঠন করা হয়েছে। উদ্দেশ্য, এ দেশের জনগণ ও সাধারণ নিরীহ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। অথচ গ্রামের অতি দরিদ্র লিমন ও তাঁর পরিবারের সঙ্গে রাষ্ট্রের যে প্রতিহিংসাপ্রবণ আচরণ, তাতে সরকার, র‌্যাব, আইন ও বিচারের প্রতি মানুষের আস্থা আর অবশিষ্ট থাকবে কি? এ পর্যন্ত লিমনের ব্যক্তিগত জীবন, তাঁর পঙ্গুত্ব, শিক্ষা অর্জন ও ভবিষ্যৎ- সব কিছু তছনছ হয়ে গেছে একেবারেই অনাকাঙ্ক্ষিত বর্বরতার কারণে। মানবাধিকার কমিশন ও দেশবাসীর সমর্থন না থাকলে অন্ধকারেই হারিয়ে যেতে হতো একটি জীবন ও একটি পরিবারকে। যেটুকু ঘটে গেছে, তা এ যাবৎ, এ পর্যন্তই রাষ্ট্রের থেমে যাওয়া কি উচিত ছিল না? জনগণের বিরুদ্ধে একটি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অহমিকাকে দাঁড় করানোর খেসারত দিতে হবে, যে বাহিনীর কর্মকাণ্ড নিয়ে দেশ-বিদেশের মানবাধিকার সংগঠনগুলো সোচ্চার। অবশ্য ড. মিজান তাই যথার্থই বলেছেন- '...মনে হচ্ছে পঙ্গু, নিরস্ত্র, অতি দরিদ্র ছেলেটির প্রতি রাষ্ট্র বিদ্বেষপূর্ণ আচরণ করে চলেছে। এটা কেন করা হচ্ছে, কার উদ্দেশ্যে করা হচ্ছে, কার অহমিকায় আঘাত করেছে- এটা বোধগম্য হচ্ছে না।'
আশা করছি, সরকারের মেধা ও বিচক্ষণতা কাজে লাগিয়ে লিমন অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি টানা হবে। লিমন নামটি র‌্যাবের অমানবিকতার প্রতীকরূপে সাধারণ মানুষের মনে গেঁথে আছে। এই বীভৎস নির্যাতন ও রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের চিহ্ন যত দ্রুত মুছে ফেলা যায়, ততই মঙ্গল। এ জন্য লিমনকে নিরপরাধ প্রমাণের সুযোগ করে দিয়ে তাঁকে শান্তিতে বাঁচার ব্যবস্থা করতে হবে সরকারকে।

No comments

Powered by Blogger.