বাংলালিংক-প্রথম আলো মাদকবিরোধী কনসার্ট-বৃষ্টি উপেক্ষা করে মাদককে ‘না’ by মোছাব্বের হোসেন

বিকেলের কাঠফাটা রোদ্দুরে দর্শকেরা ঘেমে একাকার, তার পরও তুমুল উত্তেজনা। তা দেখেই কিনা কে জানে, রোদ সরে গিয়ে আষাঢ়ের মেঘ জমে আকাশে! অতঃপর বৃষ্টি। রাজশাহী জেলা স্টেডিয়াম মাঠে গতকাল শুক্রবার ‘বাংলালিংক-প্রথম আলো মাদকবিরোধী কনসার্ট ২০১২’-তে ছিল হাজার হাজার দর্শকের সরব উপস্থিতি।


বৃষ্টি উপেক্ষা করে তাঁরা দৃপ্ত কণ্ঠে মাদককে ‘না’ বলে এর বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন। প্রথম আলো ট্রাস্টের আয়োজনে প্রথম আলো বন্ধুসভার সহযোগিতায় এই কনসার্ট অনুষ্ঠিত হয়। হাজার হাজার দর্শকের বেশির ভাগই ছিলেন তরুণ। অনুষ্ঠান শুরুর খানিক আগেই স্টেডিয়ামের মাঠ ও গ্যালারি কানায় কানায় ভরে যায়।
প্রচণ্ড গরমের শেষে প্রশান্তির বাতাস উপস্থিত দর্শককে আরও উদ্দীপ্ত করে তোলে। অনুষ্ঠানের সঞ্চালক ইকবাল কবীর মঞ্চে শিল্পী মাহমুদুজ্জামান বাবু ও তাঁর ব্যান্ডদল মৃত্তিকাকে আসার ঘোষণা দেন। তুমুল করতালি পড়ে যায় চারদিকে। মাহমুদুজ্জামান বাবু মঞ্চে এসেই বললেন, ‘মাদকের বিরুদ্ধে আমাদের রুখে দাঁড়াতেই হবে। মাদক সারা পৃথিবীতে যৌবন ও তারুণ্যের সম্ভাবনাময় শক্তি ধ্বংস করে দেয়, তাই আমরা এর বিরুদ্ধে।’ তিনি বলেন, ‘অনেক বিদেশি আমাদের জন্য কবিতা ও গান লিখে বিশ্বের দরবারে স্বাধীনতার পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন।’ তেমনই একজন গীতিকার ও সুরকার জোয়ান বায়েজের ‘বাংলাদেশ’ গানটি দিয়ে তিনি পরিবেশনা শুরু করেন। একে একে গেয়ে শোনান ‘চে গুয়েভারা’, ‘ভয় নেই’, ‘আমি বাংলায় গান গাই’ গানগুলো। এর পরে মঞ্চে আসে রাজশাহীর মেয়ে নদী। ‘শ্রাবণের মেঘগুলো জড়ো হলো আকাশে’—তাঁর এই গানের সঙ্গে দর্শকও কণ্ঠ মেলালেন। তবে শ্রাবণের মেঘ জড়ো না হলেও আকাশে তখন ঘন কালো আষাঢ়ের মেঘ ভর করেছে। সেই মেঘের সঙ্গে কি বৃষ্টির কণা চাই? সঞ্চালকের ঘোষণা দর্শকের বুঝতে দেরি হয় না যে মঞ্চে সংগীতশিল্পী কনাই আসছেন। কনা এসে বললেন, ‘কী বলেন, বৃষ্টি তাহলে নামিয়েই ফেলি।’ এর পরে এমন গান গাইলেন, আকাশও যেন সেই গান শুনতে পেল! ‘ঝুমঝুম বৃষ্টি, কী অনা সৃষ্টি’ গানের সঙ্গে সঙ্গে শুরু হলো অঝোরে বৃষ্টি। কিন্তু বৃষ্টি হলেই যে ছুট দেওয়া নয়, তা বোঝা গেল দর্শকের মনোভাবে। বৃষ্টির মধ্যেই ভিজে নেচে-গেয়ে মাদকের বিরুদ্ধে ‘না’ বলে তাঁরা জানান দিলেন, ‘আমরা শিল্পীদের সঙ্গেই আছি।’ বৃষ্টিতেই কনা গাইলেন আরও দুটি গান।
মঞ্চে এলেন এলআরবি, মৃত্তিকা, শিরোনামহীন, আসিফ আকবর, কনা, প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান, বিশেষ প্রতিনিধি কামরুল হাসান ও মনোরোগ চিকিৎসক আহমেদ হেলাল। তাঁরা দর্শকের উদ্দেশে মাদককে ‘না’ বলতে বলেন। দুই হাত উঁচু করে দর্শকেরা চিৎকার করে মাদককে ‘না’ বলেন।
প্রথম আলোর সম্পাদক মাদকের ভয়াবহতা তুলে ধরে দর্শককে মাদক থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানান। মনোরোগ চিকিৎসক আহমেদ হেলাল বলেন, ‘প্রতিবছর আমাদের দেশে মাদকের জন্য প্রায় নয় হাজার কোটি টাকা নষ্ট হয়। মাদক থেকে বিরত থেকে আমরা এই টাকা দিয়েই পদ্মা সেতু তৈরি করতে পারি।’
তখন প্রচণ্ড বৃষ্টি। এই বৈরী আবহাওয়ায় শিল্পীরা বৈদ্যুতিক যন্ত্র চালাতে পারছিলেন না। গানের অনুষ্ঠানের ইতি টেনে মঞ্চে এসে দর্শকের ডাকে সাড়া দেন শিল্পী আসিফ আকবর ও আইয়ুব বাচ্চু। তুমুল বৃষ্টিতেও তাঁদের হাত নেড়ে জবাব দিলেন দর্শকেরা। ভালোবাসার কথাটা জানাতেও ভুললেন না। আবার রাজশাহীতে আসার আমন্ত্রণ জানালেন।
ব্যান্ডদল শিরোনামহীনের শিল্পী তুহিন দর্শককে শোনালেন এমন একজনের কথা, যিনি মাদক নিতে প্রতিদিন ২০০ টাকা খরচ করতেন। এক দিন তিনি নিজের ভুল বুঝতে পারেন। তাঁর জীবনটা বদলে যায়। অনুষ্ঠান শেষ হলেও দর্শকেরা অনেকেই বৃষ্টিতে ভিজে মজা করছিলেন। তাঁদের দেখে কে বলবে, অনুষ্ঠান শেষ!

No comments

Powered by Blogger.