গানের সুরে আমার মুক্তি কবিগুরুর স্বরূপ অন্বেষণ-সংস্কৃতি সংবাদ

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথের সমগ্র সৃষ্টিসম্ভারের অনন্য সৃষ্টি তাঁর গান। কালে কালে বাঙালীর জীবনের অবলম্বন ও আশ্রয়ের সঙ্গে আনন্দের অনুষঙ্গ হয়েছে রবীন্দ্রসঙ্গীত। পৃথিবীর নানা রকম সুর, ছন্দ, রূপ-রস ও বৈচিত্র্যকে আশ্রয় করে রচিত হয়েছে তাঁর গান। শুক্রবার সঙ্গীত সংগঠন সুরতীর্থ যেন এই গানে গানেই অন্বেষণ করল কবিগুরুর স্বরূপকে।


সন্ধ্যায় জাতীয় জাদুঘরের প্রধান মিলনায়তনে দু’দিনব্যাপী এ অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। গানের সুরে আমার মুক্তি শিরোনামের এ আয়োজন আজ শনিবার একই প্রাঙ্গণে একই সময়ে অনুষ্ঠিত হবে।
অনুষ্ঠানের প্রথম দিনে উত্তর ভারতীয় এবং পাশ্চাত্য সুরের যে মূল গানগুলোর মাধ্যমে কবিগুরু অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন, সেগুলোকে নিয়ে তাঁর রচিত ভাঙ্গাগান এবং একই শৈলীর মৌলিক গানের সম্ভার নিয়ে সাজানো হয় এই সঙ্গীতসন্ধ্যা। ছুটির দিনে এমন সান্ধ্যকালীন গানের আসরে ছিল শ্রোতার সরব উপস্থিতি। শ্রোতায় শ্রোতায় পরিপূর্ণ ছিল মিলনায়তন। সবাই যেন রবীন্দ্র সুরের মায়াজালে সমর্পণ করলেন নিজেকে। গানে গানে, সুরে সুরে স্নাত হলেন রবীন্দ্র গানের অনুরাগীরা। রবীন্দ্রনাথের সৃষ্টির মাঝেই খুঁজে নিলেন তাঁর স্বরূপকে।
উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতানুষ্ঠান ॥ শুক্রবার থেকে বর্ষা ঋতুভিত্তিক রাগ নিয়ে শুরু হলো দুই দিনের মলহার উৎসব। শুক্রবার সন্ধ্যায় ছায়ানট সংস্কৃতি ভবনে মিলনায়তনে ঋতুভিত্তিক এই উচ্চাঙ্গের গানের আসর। শনিবারও একই সময়ে একই স্থানে বসবে এই বর্ষাভিত্তিক উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের আসর। উৎসবের প্রথম দিনে কণ্ঠ ও যন্ত্রসঙ্গীতে বর্ষার রাগ-রাগিনীর নানা সুর তোলেন শিল্পীরা। রেজোয়ান আলীর পরিচালনায় সম্মেলক কণ্ঠে মেঘমল্লার রাগের পরিবেশনা পরিবেশনা দিয়ে শুরু হয় উচ্চাঙ্গের এই গানের আসর। বেহালায় মেঘ রাগের সুর তোলেন আলাউদ্দিন মিয়া। রাগ জয়ন্ত মলহার উপস্থাপন করেন রেজোয়ান আলী। মিয়া মলহার রাগ পরিবেশন করেন চন্দনা দেবী হাজং। ড. হারুন অর রশীদ পরিবেশন করবেন রাগ কাজরী। সরোদের সুরে সুরে দেশ মলহার পরিবেশন করেন কামাল জহীর শামীম। ফকির শহিদুল ইসলামের কণ্ঠে ধ্বনিত হয় রাগ গৌড় মলহার।
রবীন্দ্র- নজরুল- সুকান্ত স্মরণ ॥ মানবতাবাদ, মানুষের মুক্তি, স্বাধীনতা, গণতন্ত্র ও বৈষম্যের অবসানে বিশ্বাসী বাঙালী। আর বাঙালীর এই বিশ্বাসে প্রেরণা যুগিয়েছে বাংলা সাহিত্যের প্রধান তিন কবি কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম ও কিশোর কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য্য। এদের প্রত্যেকেই নিজেদের সৃষ্টির মাধ্যমে জাতীয়তা থেকে আন্তর্জাতিকতাবাদের আদর্শে মহামানবের মিলনক্ষেত্রে সম্মিলিত হওয়ায় প্রয়াসী ছিলেন।
বাংলা সাহিত্যের এ তিন মহাপুরুষকে শুক্রবার বিকেলে এক অনুষ্ঠানে বিনম্র শ্রদ্ধায় স্মরণ করে উদীচীর ঢাকা মহানগর সংসদ। কবিত্রয়ের জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরসি মজুমদার মিলনায়তনে সেমিনার, সঙ্গীত, আবৃত্তি ও নৃত্যানুষ্ঠান দিয়ে সাজানো হয় এ অনুষ্ঠান।
এতে প্রধান এই তিন কবির জীবন ও কর্ম নিয়ে প্রবন্ধ পাঠ করেন অধ্যাপক নিরঞ্জন অধিকারী, অধ্যাপক এম এম আকাশ ও অধ্যাপক সৌমিত্র শেখর। তাদের প্রবন্ধের ওপর আলোচনা করেন ড. তপন বাগচী, ড. শামসুদ্দিন আহমেদ ও লালমাটিয়া মহিলা কলেজের সহযোগী অধ্যাপক শম্পা দাস। উদীচী ঢাকা মহনগর শাখার সভাপতি প্রকৌশলী কাজী মোহাম্মদ শীশের সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জন দে।
সেমিনার শেষে সঙ্গীত, আবৃত্তি ও নৃত্য পরিবেশন করেন উদীচীর ঢাকা মহানগর শাখার শিল্পীরা।
সংবৃতার আবৃত্তি উৎসব ॥ প্রগতিশীল স্বেচ্ছাসেবী আবৃত্তি সংগঠন সংবৃতা আবৃত্তিচর্চা ও বিকাশ কেন্দ্র। প্রায় সহস্রাধিক সদস্যের সংগঠনটি নিয়মিত প্রযোজনা মঞ্চায়ন ও কর্মশালা আয়োজনের মাধ্যমে আবৃত্তির বিকাশে কাজ করে যাচ্ছে। সংগঠনের প্রতিষ্ঠার ৭ম বর্ষে পদার্পণ উপলক্ষে শুক্রবার থেকে শুরু হলো দুই দিনব্যাপী পঞ্চম সংবৃতা আবৃত্তি উৎসব ২০১২।
বিকেলে সুফিয়া কামাল জাতীয় গণগ্রন্থাগারের শওকত ওসমান মিলনায়তনে উৎসবের আয়োজন করা হয়। এতে দেশবরেণ্য আবৃত্তিশিল্পীদের একক আবৃত্তি, বিভিন্ন সংগঠনের বৃন্দ প্রযোজনা এবং পূর্ণাঙ্গ প্রযোজনা পরিবেশিত হয়। এর পাশাপাশি বিদ্যালয়, মহাবিদ্যালয়, বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে আবৃত্তি প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিযোগিতায় বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে সহস্রাধিক প্রতিযোগী অংশগ্রহণ করে। আবৃত্তি প্রতিযোগিতায় ক বিভাগে শিশু পর্যায়ে কবি শামসুর রাহমান পদক খ বিভাগে বিদ্যালয় পর্যায়ে শিল্পী ওয়াহিদুল হক পদক, গ বিভাগে মহাবিদ্যালয় পর্যায়ে বাক্-শিল্পাচার্য নরেন বিশ্বাস পদক, ঘ বিভাগে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে আবৃত্তি শিল্পী গোলাম মুস্তাফা পদক প্রদানের পাশাপাশি অংশগ্রহণকারী সবাইকে পুরস্কৃত করা হবে।
গীতাঞ্জলি সম্মাননা পদক ॥ শিল্প-সাহিত্য ও সংস্কৃতিক চর্চায় নিবেদিত প্রতিষ্ঠান গীতাঞ্জলি ললিতকলা একাডেমী। পথচলার ৮ বছর পূর্ণ করল সংগঠনটি। আর অষ্টম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে গীতাঞ্জলি সম্মাননা পদক প্রদান ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। গীতাঞ্জলি সম্মাননা পদক পেয়েছেন ভাষাসৈনিক আব্দুল মতিন ও শিক্ষাবিদ ড. আনিসুজ্জামান।
শুক্রবার বিকেলে উত্তরার ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট (স্কিটি) মিলনায়তনে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন সাবেক সিভিল সার্ভিস কর্মকর্তা এমএ আউয়াল। সভাপতিত্ব করেন নজরুল গবেষক অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন একাডেমীর পরিচালক মাহবুব আমিন মিঠু। ড. আনিসুজ্জামানের অনুপস্থিতিতে অনুষ্ঠানে তার কাছে সম্মাননা পদক পৌঁছে দেয়ার কথা ঘোষণা করা হয়। আব্দুল মতিনের হাতে পদকের পাশাপাশি ২৫ হাজার টাকা তুলে দেন ইন্টারফ্যাব শার্ট ম্যানুফ্যাকচারিং লিমিটেডের সিওও মেজর (অব) ফাতেহ্ উল ইসলাম এবং আজীবন বিনামূল্যে চিকিৎসা প্রদান সম্মাননাপত্র তুলে দেন উত্তরা ক্রিসেন্ট হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. আরিফুর রহমান ভূঁইয়া। সম্মাননা প্রাপ্তির পর আব্দুল মতিন অনুভূতি প্রকাশ করে বলেন, জীবনে অনেক সম্মাননা পেয়েছেন, কিন্তু গীতাঞ্জলির সম্মাননা ব্যতিক্রম এ জন্য যে সংগঠনটি শিশুদের মানসিক ও সাংস্কৃতিক বিকাশসহ দেশবরেণ্যদের প্রতিবছর সম্মাননা প্রদান করে এটা অত্যন্ত গর্বের।
সম্মাননা পদক প্রদান শেষে অনুষ্ঠানে সাংস্কৃতিক আয়োজনে একাডেমীর শিল্পীরা নৃত্য-গীত, বাদ্য ও নাটিকা পরিবেশন করে।

No comments

Powered by Blogger.