নির্বাচনের প্রাকপ্রস্তুতি ॥ রমজানে গণসংযোগ করবে বিএনপি-নেতাদের নিজ নিজ এলাকায় অবস্থানের নির্দেশ by শরীফুল ইসলাম

আপাতত রাজপথের আন্দোলন কর্মসূচী সঙ্কুচিত করে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাক প্রস্তুতি নিতে যাচ্ছে বিএনপি। এরই অংশ হিসেবে আসন্ন রমজান মাসে সারাদেশের সকল সংসদীয় এলাকায় গণসংযোগ করবে বিএনপি। এ সময়ে দলের জাতীয় নির্বাহী কমিটি ও জেলা-উপজেলা কমিটির নেতাদের নিজ নিজ এলাকায় অবস্থান করে


গণসংযোগ কর্মসূচী জোরদার করতে ইতোমধ্যেই হাইকমান্ড থেকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব) মাহবুবুর রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, আমরা রমজান মাস ও ঈদকে সামনে রেখে নিজ নিজ এলাকায় গণসংযোগ করব। আমি আমার এলাকায় যাব। অন্য নেতারাও তাদের নিজ নিজ এলাকায় যাবেন।
জানা যায়, সরকারবিরোধী আন্দোলনে দলের অনেক নেতাকর্মী মামলায় জড়িয়ে পড়াসহ বিভিন্ন সমস্যার কারণে আপাাতত বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে কঠোর আন্দোলন কর্মসূচী পালনের ব্যাপারে পিছুটান দিয়েছে। তবে সাংগঠনিক দুর্বলতা কাটানোর পাশাপাশি রমজান মাসে সারাদেশে গণসংযোগ কর্মসূচী পালনের মধ্য দিয়ে ঈদের পর থেকে আবার মাঠের আন্দোলন জোরদারের কৌশল নেবে দলটি। এ কৌশলের অংশ হিসেবে ধীরে ধীরে সাংগঠনিক শক্তি ও আন্দোলন কর্মসূচী জোরদার করার মাধ্যমে বর্তমান সরকারের মেয়াদের শেষ দিকে রাজপথে বড় ধরনের শোডাউনের মাধ্যমে আগামী নির্বাচনে জয়লাভের চেষ্টা চালবে। আর বর্তমান সরকার তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহালের ব্যবস্থা না করলেও ভিন্নভাবে যে কোনভাবে একটি নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দিলেই বিএনপি সমমনা দলগুলোকে সঙ্গে নিয়ে সে নির্বাচনে অংশ নেবে।
সূত্র মতে, বিএনপি হাইকমান্ড আসন্ন রমজান মাসে দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের নিজ নিজ এলাকায় উপস্থিত থেকে গণসংযোগ কর্মসূচী পালনকালে বর্তমান সরকারের ব্যর্থতা তুলে ধরার পাশাপাশি আগামী নির্বাচনে বিএনপি যাতে জয়লাভ করতে পারে সে ব্যাপারে জনগণের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে বলেছে। বিশেষ করে পদ্মা সেতু দুর্নীতি, শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারি, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি, দ্রব্যমূল্য, বিদ্যুত সঙ্কট, গুম, সাগর-রুনীসহ সাংবাদিক হত্যা, সরকারী দলের নেতাকর্মীদের বিভিন্ন অনিয়ম, প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে করা বিভিন্ন বিষয়ে চুক্তি, বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা-মামলাসহ বিভিন্ন ইস্যু তুলে ধরবে।
গণসংযোগকালে কেন্দ্রীয় নেতারা প্রতিটি সংসদীয় এলাকায় আগামী নির্বাচনের সম্ভাব্য প্রার্থীদের ব্যাপারেও খোঁজখবর নেবে। সেই সঙ্গে প্রতিটি এলাকায় দলের কি কি দুর্বলতা রয়েছে তাও পর্যবেক্ষণ করবে তারা। দুর্বলতা পর্যবেক্ষণের পর তা সমাধানেরও চেষ্টা চলাবে কেন্দ্রীয় নেতারা। কোন কারণে তা সম্ভব না হলে দলের হাইকমান্ডের কাছে রিপোর্ট করে তা সমাধানের চেষ্টা চালানো হবে।
উল্লেখ্য, ওয়ান-ইলেভেন পরিস্থিতির পর সাংগঠনিক দুর্বলতাসহ বিভিন্ন কারণে ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শোচনীয় পরাজয় বরণ করে বিএনপি। ৩০০টি আসনের মধ্যে মাত্র ৩০টি আসনে বিজয়ী হয় এ দলের প্রার্থীরা। এর ফলে ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর প্রতিষ্ঠার পর এই প্রথমবারের মতো বড় ধরনের ধাক্কা খায় দলটি। এই ধাক্কার রেশ এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেনি দলটি। আর এ কারণেই সরকারের বিরুদ্ধে কঠোর আন্দোলন কর্মসূচী দেয়ার হাঁকডাক দিয়েও কৌশলে এ ব্যাপারে পিছুটান দিয়েছে। এখন ঈদের পর কঠোর আন্দোলন করার কথা বললেও আসলে তারা আরও সময় নিয়ে আন্দোলন চাঙ্গা করার চেষ্টা চালাবে। তবে তার আগে নেতাকর্মীদের হতাশা কাটাতে মাঝে মধ্যে কিছু কর্মসূচী পালন করবে।
সারাদেশে গণসংযোগ চলাকালে ১৮ দলীয় জোটের স্থানীয় নেতাকর্মীদের সহযোগিতা নিতেও বিএনপি হাইকমান্ড দলীয় নেতাদের জানিয়ে দিয়েছেন বলে জানা গেছে। সেই সঙ্গে সংসদীয় এলাকাগুলোতে গণসংযোগ চলাকালে কোন কারণে যাতে শরিক দলগুলোর সম্ভাব্য প্রার্থীদের সঙ্গে কোন বিরোধ সৃষ্টি না হয় সে বিষয়টিও খেয়াল রাখতে বলা হয়েছে। বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটে থাকা শরিক দলগুলোর মধ্যে রয়েছে জামায়াত, ইসলামী ঐক্যজোট, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি), খেলাফত মজলিশ, লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (এলডিপি), কল্যাণ পার্টি, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগ্্পা), ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি), ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (এনডিপি), বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ), মুসলিম লীগ (কামরুজ্জামান), ইসলামিক পার্টি, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ), জমিয়তে ওলামায়ে ইসলাম, বাংলাদেশ লেবার পার্টি, ডেমোক্র্যাটিক লীগ ও বিকল্প ধারা। এসব দল আগামী নির্বাচনে বিএনপির সঙ্গে জোটবদ্ধভাবেই নির্বাচন করবে। জানা যায় আগামী দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি জোটের শরিক দলগুলোকে ৩০০ আসনের মধ্যে ৫০টি আসন ছেড়ে দেবে।
বিএনপির পাশাপাশি এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদেরও আসন্ন রমজানে নিজ নিজ এলাকায় গণসংযোগে অংশ নিতে বলা হয়েছে। বিএনপির ১১টি অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের মধ্যে রয়েছে ছাত্রদল, যুবদল, কৃষক দল, স্বেচ্ছাসেবক দল, শ্রমিক দল, মহিলা দল, জাসাস, ওলামা দল, মুক্তিযোদ্ধা দল, মৎস্যজীবী দল ও তাঁতী দল। এসব সংগঠনকে মূল দল বিএনপির সঙ্গে গণসংযোগের পাশাপাশি স্থানীয় পর্যায়ে নিজ নিজ সংগঠনের সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চলবে বলেও সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
বিএনপির একজন কেন্দ্রীয় নেতা জানান, আসন্ন রমজান মাসে দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা গণসংযোগ কর্মসূচী পালন করবে। ইতোমধ্যেই দলীয় হাইকমান্ডের নির্দেশ সারাদেশে পৌঁছে গেছে। গণসংযোগ কর্মসূচী সফল হলে ঈদের পর থেকে আস্তে আস্তে রাজপথে আন্দোলন কর্মসূচী জোরদার কারার চেষ্টা করা হবে। আর এরই মাধ্যমে বিএনপি একদিকে আন্দোলন ও আরেক দিকে নির্বাচনের প্রস্তুতি চালিয়ে যাবে। আসন্ন রোজা ও ঈদে দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরা নিজ নিজ এলাকাবাসীর সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন। সেই সঙ্গে যেসব এলাকায় দলের কমিটি নিয়ে সমস্যা আছে তা সমাধানের চেষ্টা চালানো হবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব) মাহবুবুর রহমান বলেন, পবিত্র রমজান মাসে সাধারণত কোন রাজনৈতিক কর্মসূচী থাকে না। তাই এ সুযোগে সকল স্তরের নেতাকর্মী নিজ নিজ এলাকায় গণসংযোগের সুযোগ পায়। আমরাও এবার রমজান মাস ও ঈদকে সামনে রেখে নিজ নিজ এলাকায় যাব। সমাজের সাধারণ মানুষের সঙ্গে গণসংযোগের পাশাপাশি তৃণমূল পর্যায়ে দলের সাংগঠনিক অবস্থার খোঁজখবর নেব। সংগঠনের কোন সমস্যা থাকলে তা সমাধান করব। আর এ গণসংযোগের মধ্য দিয়ে আগামী নির্বাচনের প্রাথমিক প্রস্তুতিও নেয়া হয়ে যাবে। কারণ গণসংযোগ নির্বাচনেরই একটি অংশ।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান বলেন, আমি রমজান মাসে নিজ এলাকায় যাব। এ সময় এলাকাবাসীর সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করব। সেই সঙ্গে এলাকায় সাংগঠনিক অবস্থার খোঁজখবর নেব। এ ছাড়া রমজান মাসে এলাকার মসজিদ-মাদ্রাসায় কিছু দান-খয়রাত করব।

No comments

Powered by Blogger.