গাজীপুরে দুর্ঘটনায় নিহত ১, আহত অর্ধশত

গাজীপুরের ধীরাশ্রমে খুলনাগামী ট্রেন সুন্দরবন এক্সপ্রেস লাইনচ্যুত হলে একজন নিহত এবং প্রায় ৫০ জন যাত্রী আহত হন। গতকাল শুক্রবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত ব্যক্তির নাম রুহুল আমিন হেলাল (২৮)। তিনি পাবনা জেলার ভাঙ্গুরা উপজেলার চরভাঙ্গুরা গ্রামের আব্দুল গফুর সরকারের ছেলে।


দুর্ঘটনায় ট্রেনের ইঞ্জিন ও তিনটি বগি লাইনচ্যুত হয় এবং দুমড়ে-মুচড়ে যায়। ঘটনার পর থেকে ঢাকার সঙ্গে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
ঢাকা থেকে উদ্ধারকারী ট্রেন এসে রেললাইন থেকে ইঞ্জিন ও বগি সরালে বিকেল সাড়ে ৩টা থেকে আবার ট্রেন চলাচল শুরু হয়। রেল কর্তৃপক্ষ দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধান করতে দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ট্রেনটি ধীরাশ্রম স্টেশনের এক নম্বর লুপ লাইনে প্রবেশ করছিল। হঠাৎ বিকট শব্দে ইঞ্জিনসহ চারটি বগি লাইনচ্যুত হয়। ইঞ্জিনটি লাইনচ্যুত অবস্থায় বগিগুলোকে টেনে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে থাকে। আনুমানিক ৫০ গজ যাওয়ার পর ইঞ্জিনটি রেললাইনের পাশের কর্দমাক্ত জমির ওপর দিয়ে গিয়ে সামনের একটি বটগাছের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে উল্টে যায়। প্রথম বগিটি ইঞ্জিনের ওপর উঠে পড়ে। ট্রেনের ভেতর যাত্রীরা চিৎকার শুরু করেন। অনেককে লাফিয়ে ট্রেন থেকে নিচে পড়তে দেখা যায়। তাঁরা জানান, বেশির ভাগ যাত্রীই ট্রেন থেকে লাফিয়ে পড়ে আহত হয়েছেন। ট্রেনের গতি কম থাকায় হতাহতের সংখ্যা কম হয়েছে।
আহতদের মধ্যে ট্রেনের চালক নজিবুর রহমান (৫০) ও সহকারী চালক ইন্দ্রজিৎ কুমার সরকারও (৩৩) রয়েছেন। ধীরাশ্রম গ্রামের বাসিন্দা প্রত্যক্ষ্যদর্শী আলমগীর হোসেন বলেন, দুর্ঘটনার পর তিনি এবং এলাকাবাসী ছুটে গিয়ে দুই ড্রাইভারসহ আহত যাত্রীদের উদ্ধার করেন। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে এসে দ্বিতীয় বগির নিচে চাপা পড়ে নিহত যাত্রীকে দুপুর ১২টার দিকে উদ্ধার করেন। দুর্ঘটনার পর আশপাশের মানুষ ঘটনাস্থলে ভিড় জমায়। পরে পুলিশ ও র‌্যাব এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। লাশ উদ্ধারের পর নিহত যাত্রীর পকেটে থাকা মোবাইল ফোনে কল দিয়ে পরিচয় নিশ্চিত করা হয়। আহতরা গাজীপুর ও অন্যান্য হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।
ঘটনাস্থলের কাছের বাড়ির বাসিন্দা শফিকুল ইসলাম বলেন, অন্যান্য সময় ট্রেন যাওয়ার সময় যে রকম শব্দ হয়, তার চেয়ে এ ট্রেনের শব্দ অন্য রকম ছিল। এ জন্য বাইরে বের হন তিনি; তখন দেখেন ট্রেনের ইঞ্জিন ও কয়েকটি বগি লাইন ছেড়ে পাশের জমির দিকে যাচ্ছে। প্রথম বগির দরজায় দাঁড়ানো এক যুবক লাফিয়ে পড়তে গিয়ে বগির নিচে চাপা পড়ে মারা যান।
ট্রেনের যাত্রী রাজধানীর শান্তিনগরের বাসিন্দা মো. ওয়াসিম বলেন, 'আমি শেষ বগিতে ছিলাম। আস্তে আস্তে ট্রেনটি স্টেশনে প্রবেশ করছিল। হঠাৎ তীব্র ঝাঁকুনি দিয়ে বিকট শব্দে ট্রেনটি থেমে যায়। পরে জানালা দিয়ে দেখি ইঞ্জিন উল্টে আছে। তার ওপর আরেকটি বগি।'
সুন্দরবন ট্রেনের পরিচালক (গার্ড) মো. আলাউদ্দিন জানান, ট্রেনটি দুই ঘণ্টা দেরিতে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসে। ধীরাশ্রমে লুপ লাইনের পয়েন্ট অতিক্রমের সময় ট্রেনটির ইঞ্জিন লাইনচ্যুত হয়ে এ দুর্ঘটনা ঘটে। প্রায় অর্ধশত যাত্রীর আহত হওয়ার কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, চালকসহ আহতদের কারো অবস্থাই গুরুতর নয়।
দুর্ঘটনার পর ধীরাশ্রম স্টেশনের মাস্টারসহ অন্য কর্মচারীরা আতঙ্কে অফিস বন্ধ করে গা ঢাকা দেন। জয়দেবপুর রেলওয়ে জংশন স্টেশনের প্রধান মাস্টার জিয়াউদ্দিন আহমেদ সর্দার জানান, সুন্দরবন ট্রেনটি ধীরাশ্রমে থামার কথা ছিল না। জামালপুর থেকে ঢাকাগামী যমুনা এক্সপ্রেস ট্রেনটির ক্রসিংয়ের জন্য সুন্দরবন এক্সপ্রেসকে ধীরাশ্রমের এক নম্বর লুপ লাইনে থামার সিগন্যাল দেওয়া হয়। কিন্তু কী কারণে দুর্ঘটনা ঘটেছে, তা এ মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না। তিনি জানান, দুর্ঘটনার পর যাত্রীরা ব্যক্তিগতভাবে যাঁর যাঁর মতো চলে যান। পরে উদ্ধারকারী ট্রেন পাঠানোর জন্য খবর দেওয়া হয়।
ঢাকা বিভাগের সহকারী প্রকৌশলী ওয়াজির আহম্মেদ মজুমদার জানান, কী কারণে দুর্ঘটনা ঘটেছে, তা এ মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না। লুপ লাইনে ট্রেন প্রবেশের সময় গতি ২০ কিলোমিটার থাকার কথা। তদন্তে দুর্ঘটনার কারণ জানা যাবে।
ট্রেনের যাত্রী ও স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীরা কালের কণ্ঠকে জানান, ট্রেনটি স্টেশনে প্রবেশের সময় গতি ২০ কিলোমিটারের বেশি ছিল।
ঢাকা বিভাগীয় রেল ম্যানেজার শাহদাদ আলী জানান, ক্যান্টনমেন্ট স্টেশনে থাকা নীল সাগর ট্রেনের ইঞ্জিন দিয়ে দুর্ঘটনায় পতিত ট্রেনের ইঞ্জিন ও লাইনচ্যুত বগিগুলো রেখে বাকি বগিগুলো টঙ্গী স্টেশনে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে উদ্ধারকারী ট্রেন এসে উদ্ধার তৎপরতা শুরু করে।
দুর্ঘটনার খবর পেয়ে রেলমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের দুপুর সাড়ে ১২টায় ঘটনাস্থলে আসেন। তাঁর সঙ্গে রেলের ডিজি আবু তাহেরসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ছিলেন। উদ্ধারকাজ পরিদর্শন করে সাংবাদিকদের তিনি জানান, দুর্ঘটনার কারণ তদন্তে দুটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। নিহত হেলালের লাশ বাড়ি পৌঁছে দেওয়া এবং ক্ষতিপূরণ বাবদ এক লাখ টাকা দেওয়ার জন্য রেল কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন তিনি।
মন্ত্রী দুর্ঘটনায় নিহত যাত্রীর পরিবার ও আহতদের কাছে ক্ষমা চান এবং দুঃখ ও সমবেদনা প্রকাশ করেন। পরে মন্ত্রী গাজীপুর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আহত যাত্রী এবং নিহত হেলালের লাশ দেখতে যান। সে সময় গাজীপুরের সিভিল সার্জন ডা. সৈয়দ হাবিবুল্লাহ উপস্থিত ছিলেন।
রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) মো. শাহজাহান জানান, বিকল্প উপায়ে বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে ট্রেন চলাচল আবার চালু করা হয়েছে।
দুটি তদন্ত কমিটি

No comments

Powered by Blogger.