তৃণমূল এমপিদের কাছে প্রণবের চিঠি-ফোন মমতার ক্ষোভ

উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর নিজস্ব প্রার্থীর নাম প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংকে জানানোর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই গত বৃহস্পতিবার তৃণমূল শিবিরে হাজির হয়েছে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে কংগ্রেস তথা ক্ষমতাসীন সংযুক্ত প্রগতিশীল মোর্চার (ইউপিএ) প্রার্থী প্রণব মুখোপাধ্যায়ের লিখিত আর্জি! অনেকের কাছে আবার


তিনি ব্যক্তিগতভাবে টেলিফোনও করেছিলেন। তবে তৃণমূলের পার্লামেন্ট সদস্যরা প্রণবের আর্জি-টেলিফোন পেলেও দলীয় সভানেত্রী মমতা এখনো সে রকম কিছু পাননি। বিশ্লেষকরা বলছেন, সর্বশেষ এ ঘটনায় মমতার ক্ষোভ আরো বাড়বে।
গত বুধবার রাতে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে টেলিফোনে কথা হয় মমতার। তৃণমূল সূত্রের খবর, তখনই তৃণমূল নেত্রী তাঁর তরফে উপ-রাষ্ট্রপতি পদে গোপালকৃষ্ণ গান্ধীর নাম প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়ে দেন। পাশাপাশিই মমতা জানান, শনিবার (আজ) বিকেলে ইউপিএর বৈঠকে তৃণমূলের পক্ষে যোগ দেবেন রেলমন্ত্রী মুকুল রায়। তবে প্রণবের প্রার্থিতা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মমতার কথা হয়নি। এমনকি মমতাও প্রধানমন্ত্রীর কাছে উপ-রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে কংগ্রেসের প্রার্থী হামিদ আনসারির নাম শোনেননি।
গত বৃহস্পতিবার সকালেই তৃণমূলের একাধিক পার্লামেন্ট সদস্য দলনেত্রীকে জানান, তাঁদের কাছে প্রণব মুখোপাধ্যায়ের 'আর্জি' পেঁৗছেছে। লিখিত আর্জি পাঠানোর পাশাপাশি প্রণব কয়েকজনকে ব্যক্তিগতভাবে টেলিফোনও করেছিলেন, যা শুনে মমতা 'ক্ষুব্ধ'।
তৃণমূল সূত্রের খবর, ছাপানো চিঠিতে (এক পাতার চিঠি, প্রাপকের নাম লেখা নেই। সম্বোধন করেছেন 'মাই ডিয়ার ফ্রেন্ড' বলে। নিজের পরিচয় দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রার্থী বলে। চিঠিতে তারিখ দেওয়া ২ জুলাই) প্রণব যা লিখেছেন, তার মধ্যে তৃণমূল যে লাইনটি সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ মনে করছে, তা হলো 'ইউপিএ ও তাদের সমর্থক সব দল আমায় সমর্থন করেছে'। তৃণমূলের নেতাদের একাংশের বক্তব্য, এ তথ্য বিভ্রান্তিকর। কারণ, প্রণবের চিঠির তারিখ ২ জুলাই। সে দিন তো বটেই, এমনকি এখনো তিনি ইউপিএর সব শরিকের সমর্থন পাননি!
তবে তৃণমূলের আরেক অংশের বক্তব্য, ছাপানো 'অভিন্ন' চিঠির ওই লাইন নিয়ে আপত্তি তোলা অর্থহীন। প্রসঙ্গত এ দিনই ভোটের প্রচারে রাঁচিতে এসে প্রণব সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, একটি বাদে ইউপিএর সব শরিক তাঁকে সমর্থন করেছে। তাঁর কথায়, 'আশা করি, তারাও আমাকে সমর্থন করবে।' দলীয় মহলে মমতা নির্দেশ দিয়েছেন, প্রণব ফের কাউকে ফোন করলে তাঁরা যেন বলে দেন, তৃণমূল একটি শৃঙ্খলাপরায়ণ দল। ফলে দল হিসেবে যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে, পার্লামেন্ট সদস্য ও বিধায়করা সবাই তাঁর শরিক হবেন। সবাই মিলেই ভোটের আগে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। সুতরাং, কাউকে আলাদা করে ফোন করার প্রয়োজন নেই। আর ঘনিষ্ঠদের জানিয়েছেন, কবীর সুমন (যিনি দলের অন্য পার্লামেন্ট সদস্যদের মতোই তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুলকে জানিয়েছন, ১৯ জুলাই বিধানসভায় ভোট দিতে যাবেন) অধ্যায়ের পর রাষ্ট্রপতি নির্বাচন নিয়ে প্রণববাবু ফের 'সীমা' লঙ্ঘন করছেন।
আবার তৃণমূলের মধ্যে যে অংশ এখনো প্রণবকে ভোট দেওয়ার ব্যাপারে খানিকটা 'ইতিবাচক', নীতিগতভাবে 'নরমপন্থী' এবং এখনই কেন্দ্রের সঙ্গে সংঘাতে যেতে নারাজ, তাঁদের বক্তব্য, এটা একেবারেই রুটিন আর্জি। ভোটের আগে প্রার্থীরা যেমন সবাইকে পাঠান। সূত্র : আনন্দবাজার।

No comments

Powered by Blogger.