পাকিস্তানে সুপ্রিম কোর্টের হুঁশিয়ারি-২৫ জুলাই পর্যন্ত সময় পেলেন পারভেজ আশরাফ-* প্রধানমন্ত্রী আদালতের নির্দেশ মানতে বাধ্য * ব্যর্থ হলে তাঁকেও বিচারের মুখোমুখি হতে হবে* প্রধানমন্ত্রী আদালতের নির্দেশ মানতে বাধ্য * ব্যর্থ হলে তাঁকেও বিচারের মুখোমুখি হতে হবে

প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারির বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা চালু করতে সুইজারল্যান্ড সরকারকে চিঠি লিখতে প্রধানমন্ত্রী রাজা পারভেজ আশরাফকে ২৫ জুলাই পর্যন্ত সময় দিয়েছেন পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট। ব্যর্থ হলে তাঁকেও বিচারের মুখোমুখি হতে হবে বলে সতর্ক করে দিয়েছেন আদালত।


গত বৃহস্পতিবার বিচারক আসিফ সাঈদ খোসা এই আদেশ দেন।
বিশ্লেষকদের মতে, আদালতের এই নির্দেশের ফলে এটা স্পষ্ট, বিচার বিভাগ ও পার্লামেন্টের মধ্যে চলমান দ্বন্দ্ব থেকে শিগগিরই নিষ্কৃতি মিলছে না দেশবাসীর। কারণ, একদিকে আদালত বলছেন_প্রধানমন্ত্রী আদালতের নির্দেশ মানতে বাধ্য। অন্যদিকে প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রীসহ সব নির্বাহী কর্মকর্তাদের দায়মুক্তি দিয়ে আদালত অবমাননা বিল পাস হয়েছে পার্লামেন্টে। এরই মধ্যে প্রেসিডেন্ট তাতে সইও করেছেন।
জারদারির বিরুদ্ধে মামলা চালু করতে ব্যর্থ হওয়ার অভিযোগে গত ১৯ জুন সুপ্রিম কোর্ট তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইউসুফ রাজা গিলানিকে আদালত অবমাননার দায়ে অভিযুক্ত করেন। একই সঙ্গে তাঁকে প্রধানমন্ত্রীর পদে অযোগ্য ঘোষণা করেন। প্রেসিডেন্ট 'দায়মুক্তি' ভোগ করেন_এমন যুক্তিতে গিলানি ওই মামলা চালুর উদ্যোগ নেননি। জারদারির মামলার বিষয়টি নিয়ে অনেক দিন ধরেই সরকারের সঙ্গে বিচার বিভাগের দ্বন্দ্ব চলছে। গিলানিকে প্রধানমন্ত্রী পদে অযোগ্য ঘোষণার পর বিচার বিভাগ ও পার্লামেন্টের এ দ্বন্দ্ব মূলত স্পষ্ট হয়ে যায়। একই সঙ্গে দেশটির শক্তিশালী সামরিক বাহিনীর সঙ্গেও সরকারের দূরত্ব রয়েছে। এই ত্রিমুখী সংঘাতে একরকম নাজেহাল অবস্থায় পড়েছে দেশটি। আদালতের ওই রায়ের পর গিলানি তাঁর পদ থেকে সরে দাঁড়ান। কিন্তু নতুন প্রধানমন্ত্রী আশরাফকেও একই নির্দেশ দেন আদালত। আর এই নির্দেশের মাধ্যমেই স্পষ্ট হয়ে গেছে, দুই পক্ষের ক্ষমতার এ দ্বন্দ্ব থেকে সহজে নিষ্কৃতি মিলছে না পাকিস্তানিদের। আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে সাধারণ নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে। পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) নেতৃত্বাধীন জোট সরকারের নেতারা চাইছেন, দেশটির ইতিহাসে এই প্রথমবারের মতো তাঁরা ক্ষমতার পূর্ণ মেয়াদ পার করবেন।
জারদারির বিরুদ্ধে মামলা চালুর বিষয়ে সরকারের অবস্থান জানাতে প্রধানমন্ত্রীকে ১২ জুলাই পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছিলেন সুপ্রিম কোর্ট। গতকাল শুনানির সময় বিচারক সাঈদ খোসা বলেন, 'প্রধানমন্ত্রী বা সরকারের প্রধান নির্বাহী আদালতের নির্দেশ মানতে বাধ্য।' জারদারির মামলার বিষয়ে সরকারের 'অনড়' থাকার কৌশল কোনো কাজে আসবে না বলে সতর্ক করে দেন তিনি। আদালতের নির্দেশের পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী কী পদক্ষেপ নিয়েছেন, সে ব্যাপারে ২৫ জুলাইয়ের মধ্যে আদালতকে জানাতে হবে। নির্দেশ মানতে ব্যর্থ হলে আশরাফকেও তাঁর পূর্বসূরির পথ ধরতে হবে_এমন ইঙ্গিত দিয়ে তিনি বলেন, 'এ ব্যাপারে সংবিধান ও আইন অনুযায়ী যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।' তবে গিলানিকে যেভাবে তিনবার সশরীরে আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, সেই রকমটি এখনো আশরাফের বেলায় ঘটেনি।
এদিকে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী কামার জামান কায়রা গতকাল শুক্রবার দাবি করেছেন, সরকার কখনোই সুইজারল্যান্ড সরকারকে চিঠি লিখবে না_এমন কথা তিনি বলেননি। উল্লেখ্য, সংবাদমাধ্যমের খবরে এর আগে দাবি করা হয়, কায়রা বলেছেন, 'সরকার জারদারির মামলার বিষয়ে সুইজারল্যান্ডকে কখনোই চিঠি লিখবে না।'
সাংবাদিকদের কায়রা গতকাল জানান, সংবাদমাধ্যমে তাঁর বিবৃতির ভুল ব্যাখ্যা করা হয়েছে। তিনি বলেন, 'আমি কখনোই বলিনি, আমাদের দল সুইজারল্যান্ডে চিঠি লেখার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। আমি বলেছি, মন্ত্রিসভা এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।' সূত্র : বিবিসি, এএফপি, ডন।

No comments

Powered by Blogger.