শিক্ষাবাণিজ্য চাই না by আকরাম খান

শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ মানুষের মৌলিক অধিকার। যিনি বা যে প্রতিষ্ঠান শিক্ষাদানে নিয়োজিত থাকেন মূলত তাদের কাজের ধরন সেবামূলক। দেশের সকল মানুষের টাকায় ক্রয়কৃত সেই সেবা রাষ্ট্রের মাধ্যমে নিশ্চিত করা হয়। এখন পর্যন্ত দেশের ৯৩ শতাংশ শিক্ষাসেবা সরকারি অর্থে অর্থাৎ জনগণ দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে।


এর মধ্যে সরকারি অর্থে বেসরকারি, আধা-সরকারি, সরকারি স্বায়ত্তশাসিত ইত্যাদি ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিদ্যমান। ব্যক্তিগত কিংবা সম্পূর্ণ বেসরকারি খাতে প্রকৃত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের হার ৭ শতাংশের বেশি নয়। যে কারণে শিক্ষা বৈষম্য, শিক্ষা খাতে ব্যয় বৈষম্য, এমনকি শিক্ষাদানে নিয়োজিত শিক্ষকদের বেতন বৈষম্যও ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। ফলে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা, শিক্ষাক্ষেত্রে জিম্মি হয়ে চোখে শর্ষে ফুল দেখছেন শিক্ষার্থীর অভিভাবকরা।
কেবল রাজধানী শহর ঢাকা কিংবা বড় শহরগুলোতেই নয় গ্র্রামাঞ্চল পর্যন্ত প্রকারভেদে একই চিত্র দেখা যায়। শিক্ষার প্রাথমিক স্তর থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ পর্যায় পর্যন্ত প্রাইভেট টিউশনি কখনও ব্যক্তিগত, কখনও ব্যাচ পদ্ধতি আবার বড় পরিসরে কোচিং নামে শিক্ষালাভের একমাত্র মাধ্যম হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। ফলে চাকরিরত শিক্ষকরা যেমন পাঠদানে অমনোযোগী, তেমনি শিক্ষার্থীরাও স্কুল-কলেজবিমুখ হয়ে পড়েছে।
শিক্ষার্থীরা দিনে তিন-চারবার প্রাইভেট কোচিংয়ে সময় ও মেধা ব্যয় করে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা গ্রহণে শারীরিক ও মানসিকভাবে অনাগ্রহী এবং অনুপযুক্ত হয়ে পড়ে। অনেকে আবার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার বেহাল দশায় নিরুপায় হয়ে পড়ে। প্রকৃত শিক্ষার পরিবর্তে ছকে বাঁধা কিছু নিয়মে, কৌশলে বা অদৃশ্য অবৈধ উপায়ে ভালো ফলাফল অর্জন করেও ছাত্রছাত্রীদের উচ্চতর শ্রেণীতে ভর্তির জন্য আবার ভর্তর্ি কোচিংয়ের দ্বারস্থ হতে হয়। অর্থাৎ এহেন শিক্ষা পদ্ধতি আত্মনির্ভরশীল মেধা বিকাশে সহায়ক হতে পারে না। বলা যায়, শিক্ষক-পরীক্ষক, নোট-গাইড প্রকাশক এবং বিক্রেতা ব্যবসায়ীরা সমন্বিতভাবে সার্টিফিকেটসর্বস্ব শিক্ষা ব্যবস্থায় জাতিকে জিম্মি করে ফেলেছে। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় জ্ঞানার্জন, চেতনার বিকাশ, মন ও মননের উত্তরণ ঘটানোর সুযোগ থেকে অনেকটাই বঞ্চিত আমাদের শিক্ষার্থীরা। বাস্তবে পাঠ্যবই তাকে সাজিয়ে রেখে প্রাইভেট তথা শিক্ষকদের পরামর্শে অনেক দামে বড় বড় নোট বা গাইড বই কিনে অনেক অপ্রয়োজনীয় বিষয়ে মেধার অপচয় করছে তারা।
এ অবস্থার পরিবর্তন আবশ্যক। আমাদের দুর্ভাগ্য, আধুনিক বিশ্বের একটি স্বাধীন দেশে শিক্ষালাভের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে আদালতের শরণাপন্ন হতে হয় অভিভাবকদের। অবশেষে আদালতের দোহাই দিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে কোচিংবাণিজ্য বন্ধে নীতিমালা জারি করা হয়েছে। তারপরও পত্রপত্রিকার খবর অনুযায়ী প্রাইভেট টিউশনি বা কোচিং পুরোপুরি বন্ধ করা যাচ্ছে না। বিভিন্ন কৌশলে বা গুরুত্ব না দিয়ে নীতি-আদর্শের গতানুগতিক ঘোষণা বলেই অধিকাংশ ক্ষেত্রে বিবেচনা করা হচ্ছে।
সরকার কোচিংবাণিজ্য বন্ধ করতে নীতিমালা ঘোষণা করেছে। অনুসন্ধান করলে দেখা যাবে, খুব কমসংখ্যক শিক্ষক এ কারণে অতিরিক্ত অর্থ আয় করা থেকে বঞ্চিত হবেন। আমরা আশা করি, আধুনিক রাষ্ট্রের তিনটি মূল সেবা খাত শিক্ষা, চিকিৎসা ও প্রশাসনের কাছ থেকে সেবা কিনতে ধনীদের প্রতিযোগিতা যতই থাক না কেন, গরিবের জন্য অন্তত শিক্ষাসেবা উন্মুক্ত করা হোক।

সমধুখালী, ফরিদপুর
akramkhan.mdk@gmail.com
 

No comments

Powered by Blogger.