সর্বস্তরে বাংলা ভাষার প্রচলন নিশ্চিত করা প্রসঙ্গে by মনজুরে মওলা

ভাষার ব্যবহার যেহেতু নিজেকে প্রকাশ করার প্রয়োজন থেকে উদ্ভূত, সেহেতু যেকোনো ভাষার প্রচলন_তার প্রয়োগের ব্যাপ্তি, অর্থবহনের ক্ষমতা ও ব্যঞ্জনার গভীরতা_সে ভাষা ব্যবহারকারীদের মানসিক অভ্যাসের ওপর নির্ভরশীল। অতএব, কোনো ভাষার প্রচলনের ক্ষেত্রে যদি কোনো অসুবিধা থেকে থাকে, তাহলে তা যাদের ভেতরে সে প্রচলনের


কথা, তাদের মানসিক অভ্যাস থেকে জাত। যদি প্রচলিতব্য ভাষা বিদেশি ভাষা হয়, বা তা গ্রহণে রাষ্ট্রীয় বা লৌকিক বা আদর্শগত বাধা থাকে তাহলে উলি্লখিত মানসিক অভ্যাসের সঙ্গে তার বিরোধ অনিবার্য। বাংলাদেশে উর্দু প্রচলনের অতীত প্রচেষ্টা এ বিরোধের একটি সর্বজন পরিচিত উদাহরণ। কিন্তু যেখানে মাতৃভাষাই প্রচলিতব্য ভাষা এবং যেখানে প্রচলন-প্রচেষ্টার পেছনে রাষ্ট্রীয় সমর্থন রয়েছে, সেখানে মানসিক অভ্যাসজনিত বাধা পরাক্রান্ত হয়ে ওঠে কেন?
ভাষা ব্যবহারের ক্ষেত্রে মানসিক অভ্যাস সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় আর এ দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে ওঠে শিক্ষার ভাষাগত মাধ্যম ও কর্মজীবনের প্রয়োজন এবং পরিবেশ থেকে। এর কোনোটাই সহসা পরিবর্তিত হয়ে যেতে পারে না; এদের সমবায়ী প্রভাবে যে মানসিকতার সৃষ্টি হয়, তারও আকস্মিক রূপান্তর অসম্ভব। স্বাধীনতার অব্যবহিত পূর্বেও বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয় প্রয়োজনে ইংরেজির ব্যবহার অনিবার্য ছিল; আমাদের উচ্চশিক্ষার প্রাঙ্গণে ইংরেজির পতাকা আজও প্রবল। ইংরেজি ভালো বলতে পারা, লিখতে পারা ব্যক্তিকে আমরা সমীহ করি, কিন্তু বাংলায় অনুরূপ দক্ষতাকে আমরা অন্যায় সসাধ্য ধরে নিই। আমাদের প্রাত্যহিক বাক্যালাপে ইংরেজি শব্দকণা অনিবার্যভাবে ছড়িয়ে থাকে। এ সবই একটি বিশেষ ঐতিহাসিক পরিবেশের ফল, যে পরিবেশ ইংরেজির কারুকার্যময় সেতুবন্ধের ভেতর দিয়ে একদিন আধুনিকতার সঙ্গে আমাদের সংযোগ ঘটেছিল। অতীতকে অস্বীকার করা অর্থহীন; ঐতিহাসিক পরিবেশ ভাষা ব্যবহারের ক্ষেত্রে আমাদের ওপর যে শর্ত আরোপ করেছে, কেবল সে শর্ত মেনে নিয়েই তা অতিক্রম করা সম্ভব। এক দুশ্চক্র বৃত্তে আমরা দাঁড়িয়ে আছি; সামাজিক মূল্যবোধের ও দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন ব্যতীত ভাষা ব্যবহারের মানসিক অভ্যাস পরিবর্তন সম্ভব নয়; আবার এ মানসিক অভ্যাসের এবং যেসব উপাদান এ অভ্যাস গঠন ও নিয়ন্ত্রণ করে, সেগুলোর পরিবর্তন ব্যতীত সামাজিক মূল্যবোধের পরিবর্তন অসম্ভব। এ মানসিকতা পরিবর্তনের জন্য এবং নতুন সামাজিক মূল্যবোধ গড়ে তোলার জন্য আমরা কতটুকু উদ্যোগী হয়েছি?
বাংলা প্রচলনের প্রয়োজনীয়তা বিষয়ে গত এক দশকে আমরা নানা দীর্ঘস্থায়ী ও সাময়িক আন্দোলনের ভেতর দিয়ে ধীরে ধীরে সচেতন হয়ে উঠেছি। এ সচেতনতা যত বৃদ্ধি পাবে, মানসিক অভ্যাসের পরিবর্তনও তত দ্রুত ও সম্পূর্ণ হবে। সচেতনতার বর্তমান পর্যায়ে আমাদের উপনীত করার প্রধান কৃতিত্ব নিঃসন্দেহে তরুণ সমাজের। কিন্তু কেবল তরুণ সমাজকে নিয়ে আমাদের কর্মক্ষেত্র গঠিত নয়, বরং এখানে তাঁদের উপস্থিতিই প্রধান, যাঁরা তারুণ্যের দুরন্ত সাহস থেকে দূরে সরে এসেছেন। এঁরা স্থিতি চান; এঁরা অভ্যাসে আবদ্ধ থাকতে চান, এঁরা নতুনকে ভয় করেন। ইংরেজি ব্যবহারের দীর্ঘদিনের অভ্যাস, নিশ্চিত ও আরাম নিরুদ্বিগ্ন সুবিধা ত্যাগ করে এঁরা বাংলার অনভ্যস্ত ও অপরিচিত পথে সহজে পা বাড়াতে চান না। ইংরেজি লেখায় কোনো কষ্ট নেই, কোনো পরিশ্রম নেই, কেননা ইংরেজি বহু ব্যবহারে অত্যন্ত পরিচিত, এর পথঘাট-সীমানা-জটিলতা সবই জানা আছে, বিভিন্ন উপায়ে এর বিচিত্র ব্যবহারের উদাহরণ ছড়িয়ে আছে সর্বত্র। অপরপক্ষে বাংলা ব্যবহারের অর্থ প্রতিমুহূর্তের সংগ্রাম_শব্দ খুঁজতে হচ্ছে, বানান জানতে হচ্ছে, বাক্যবন্ধ আয়ত্ত করতে হচ্ছে এবং সর্বোপরি প্রায় সম্পূর্ণ নিজের চেষ্টায়, বাইরের অপ্রতুল সাহায্যের ওপর নির্ভর করে, নতুন পথ তৈরি করে নিতে হচ্ছে। নতুনের মুখোমুখি উদ্দীপ্ত সাহসে দাঁড়িয়ে তাকে জয় করা তরুণেরই কাজ, অন্যের নয়। জীবনের যে পর্যায়েই আমরা থাকি না কেন, আমাদের সবার অস্তিত্বে যদি তারুণ্যের সঞ্চার ঘটত, তাহলে বাংলা প্রচলনের সমস্যা হয়তো আপনা থেকেই মিটে যেত। অভ্যাসের নিরাপত্তাকে ত্যাগ করে মানুষ তিনটি ক্ষেত্রে নতুন পথে অগ্রসর হয়। এক, যদি কোনো আদর্শে সে প্রবলভাবে অনুপ্রাণিত হয়; দুই, যদি কোনো ভয় তাকে তাড়না করে_কোনো শাস্তির ভয়, কোনোকিছু হারানোর ভয়, কোনোকিছু না পাওয়ার ভয় এবং তিন, যদি কোনো প্রলোভন তাকে উদ্বুদ্ধ করে_কোনো পুরস্কারের আশা, কোনো উন্নতির স্বপ্ন, কোনো খ্যাতির উল্লাস। বাংলা প্রচলনের বেলায় এ তিনটি কারণের একটিও আমাদের জন্য কার্যকর নয়। আদর্শবোধ প্রতিকূল পরিবেশেই সর্বাধিক-প্রবলভাবে উজ্জীবিত হয়। বাংলা-বিরোধের দিনগুলোতে বাংলাকে তার স্বমর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করার সংগ্রাম যত উদগ্র ছিল, আজকে, বাংলাকে তার প্রজ্বল ও নিরাপদ আসনে সমাসীন দেখে, তাকে সর্বক্ষেত্রে প্রচলিত করার বাসনা তত উদ্দাম কিছুতেই নয়।
যেহেতু বাংলা আমাদের রাষ্ট্রভাষা এবং বাংলাকে বর্জন করে আমাদের পক্ষে অন্য কোনো ভাষার আশ্রয় গ্রহণ করার প্রশ্নই ওঠে না, সেহেতু বাংলা ভাষায় কাজ করা আদৌ সম্ভব কি না_এ প্রশ্নের উত্থাপন অবান্তর। যদি সম্ভব না হয়, তাহলে তাকে সম্ভব করে তুলতে হবে, ভাষার সম্ভাবনাকে বাড়িয়ে, শব্দের সম্ভাবনাকে বাড়িয়ে বিদেশি ভাষার সঙ্গে প্রাণসূত্রে সংযোগ স্থাপন করে। প্রয়োজন হলে ভাষার বিস্মৃত অভ্যাসকে জাগ্রত করে। ভাষাকে সমৃদ্ধ করার এ দায়িত্ব কেবল পণ্ডিতের নয়, কেবল সাহিত্যকর্মীর নয়, বরং প্রত্যেকের।
আমাদের চিন্তা করার ক্ষমতার প্রথম লক্ষণীয় প্রয়োগ ঘটে শৈশবের বিদ্যালয়ে। সেখানেই প্রথম কোনো ধারণা বা ভাবনাকে আমরা সুসংবদ্ধ করতে ও সুসংহতভাবে তাকে প্রকাশ করতে শিখে থাকি। এর পরে যতই আমরা অগ্রসর হই, আমাদের চিন্তার জটিলতা এবং তা স্পষ্টভাবে প্রকাশ করার দুরূহতা ততই বৃদ্ধি পেতে থাকে। শৈশব থেকে শুরু করে শিক্ষাজীবনের বিভিন্ন স্তরে বাংলা ভাষায় চিন্তা করতে এবং সে চিন্তাকে যথোপযুক্তভাবে প্রকাশ করতে যদি আমরা অভ্যস্ত না হয়ে উঠি, তাহলে ব্যবহারিক জীবনে বাংলা ভাষার প্রয়োগ স্বাভাবিকভাবেই ব্যাহত হবে। প্রয়োজনীয় গ্রন্থাদি বাংলায় এখনো নেই, এ কারণে বিদ্যালয়ে ইংরেজি ভাষা যদি সাময়িকভাবে প্রাধান্য লাভ করে, বিদ্যালয় পর্যায়ে এখনো ইংরেজিকে গুরুত্ব দেওয়ার কোনো কারণ নেই। অথচ তা-ই করা হচ্ছে কোথাও কোথাও। ঢাকার একটি বিদ্যালয়ের কথা জানি, যেখানে তৃতীয় শ্রেণীতে বাংলা বই পড়ানো হয় একটি এবং ইংরেজি তিনটি, যার ভেতর দুটি বিলেতের সমপর্যায়ের ছাত্রদের_অর্থাৎ যারা ইংরেজিকে মাতৃভাষা হিসেবে শিখছে; তাদের পাঠ্যপুস্তক। এ মনোভাব কেন? বর্তমানে যাঁরা কর্মজীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে আছেন তাঁদের শিক্ষাকাল কেটেছে এমন এক আবহে, যেখানে ইংরেজির প্রাধান্য ছিল অপ্রতিহত। তাঁদের চিন্তার অভ্যাস গড়ে উঠেছে ইংরেজিতে। তাঁরা যদি বাংলা ভাষাকে প্রয়োগের ক্ষেত্রে স্বচ্ছন্দ না হন, তাহলে তার জন্য তাঁদের অতীতকে দায়ী করতে হবে। কিন্তু সে অতীতের পরিবেশ যদি এখনো অব্যাহত থাকে, তাহলে তার জন্য দায়ী করব কাকে? বাংলা ব্যবহারের ক্ষেত্রে যে মানসিক ও অন্যবিধ অসুবিধা আমরা আজ ভোগ করছি, তা দূর করতে প্রয়াসী হওয়া কি উত্তর-পুরুষের প্রতি আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্যের ভেতর অন্তর্ভুক্ত নয়? প্রতিটি ভাষাই সযত্ন প্রয়াসে শিখতে হয়, এমনকি মাতৃভাষাও। আজকের কর্মজীবীরা ইংরেজি শেখার জন্য যে সময়, যে পরিবেশ ও যে মেধা ব্যয় করছেন, তার ভগ্নাংশ মাত্রও করেননি বাংলা শেখার জন্য_তাঁদের পরিবেশ তাঁদের তা করতে দেয়নি। আজকের শিক্ষার্থীদের ভাগ্যও কি তাই হবে? যদি হয়, তা বড় দুঃখজনক হবে।
দৃষ্টির সংকীর্ণতা থেকে মুক্ত হতে না পারলে ভাষার সমৃদ্ধি সম্ভব নয়। অন্য ভাষা থেকে শব্দ আহরণে কোনো লজ্জা নেই বরং এভাবে শব্দ আহরণ করে তাকে আত্মস্থ করার ভেতরেই ভাষার অন্তর্নিহিত শক্তির পরিচয়। আমাদের অস্তিত্বের সঙ্গে_প্রায় আমাদের লক্ষ্যবহির্ভূত হয়ে, কিন্তু অনিবার্যভাবে_জড়িয়ে আছে আধুনিক মানসের অসংখ্য চিন্তা ও ধারণা, যার উৎস পাশ্চাত্যের সভ্যতা এবং যার প্রকাশ সে সভ্যতার ভাষাসমূহের মাধ্যমেই সর্বোত্তমভাবে সম্ভব ও শব্দাবলি আমাদের কৃতজ্ঞতার সঙ্গে গ্রহণ করা প্রয়োজন। যে পুষ্প আমাদের মাটিতে ফোটে না, আমাদের ভাষায় তার নাম অনুসন্ধান করা বৃথা এবং আমাদের ভাষায় তার নামের রূপান্তরের চেষ্টা আরো অর্থহীন। শুধু একটি বিষয়ের প্রতি আমাদের সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে; এমন কোনো বিদেশি শব্দ যেন আমরা গ্রহণ না করি, যা গ্রহণ করা অনিবার্য নয়। অন্য কথায়, বাংলায় যে ধারণার সহজ ও সংগত প্রকাশ সম্ভব, তাকে তুলে ধরার জন্য যেন আমরা ঋণগ্রস্ত না হই। বাংলা ভাষায় বিদেশি শব্দ গ্রহণ প্রসঙ্গে পরিভাষার প্রশ্নটিও এসে পড়ে। যতটুকু পরিভাষা এ পর্যন্ত তৈরি হয়েছে, প্রয়োজনের তুলনায় তা অপ্রতুল। পরিভাষা রচনার পরিবেশ প্রতিকূল ছিল, তাই এই অপ্রতুলতা। এটা দূর করা সমবেত প্রচেষ্টায় অনায়াসেই সম্ভব। কিন্তু পরিভাষার প্রকৃতি বিষয়ে দ্বিবিধ আপত্তি উত্থাপিত হতে পারে। প্রথমত, যে পরিভাষা তৈরি করা হয়েছে, তা প্রধানত সংস্কৃতনির্ভর। সংস্কৃতে সম্যক জ্ঞান আছে, এমন ব্যক্তির সংখ্যা অল্প। যেখানে বাংলাকেই পরিশ্রম করে নতুন করে শিখতে হচ্ছে, সেখানে পরিভাষার দুরূহ শব্দাবলি_যা আয়ত্ত করা ও মনে রাখা দুঃসাধ্য_বাংলা লেখার উৎসাহকে মলিন করে দেয়। ব্যঞ্জনার যাথার্থ্যের ও দৃঢ়তার জন্যই হয়তো পরিভাষার এই সংস্কৃতনির্ভরতা; এ সম্পদ অক্ষুণ্ন রেখে পরিভাষাকে যদি দৈনন্দিন ভাষার সমীপবর্তী করা যায়, তাহলে এর ব্যবহার অনেক বেশি সহজ, দ্রুত ও বিস্তৃত হবে। দ্বিতীয়ত, পরিভাষা অনেক ক্ষেত্রেই কর্মজীবনের বাস্তব প্রয়োজনের সঙ্গে সংযোগবিহীন। একটি শব্দের পরিভাষা নির্মাণের সময়, কর্মজীবনের বাস্তবে সে শব্দটির বিচিত্র ও বিবিধ ব্যবহারের সম্ভাবনা স্মরণ রাখা অবশ্য প্রয়োজন, কেননা পরিভাষা যদি নিত্য ব্যবহৃত না হয়ে গ্রন্থবন্দি হয়ে থাকে, তাহলে তার নির্মাণ অর্থহীন হয়ে পড়ে।
জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চায় বাংলা ভাষার প্রয়োগ ব্যবহারিক জীবনে তার প্রয়োগের থেকে ভিন্নতর; কেননা সেখানে ভাষাকে অনেক বেশি শক্তিশালী, দৃঢ় ও অর্থবহ হতে হয়। বিজ্ঞান যেখানে প্রতীকনির্ভর গাণিতিক সূক্ষ্মতায় উত্তীর্ণ হয়েছে বা নন্দনতত্ত্ব যেখানে সুকুমার শিল্পের মর্মমূলে আলো ফেলে চলেছে, সেখানে ভাষাকে সুগভীর, সুসংহত ও দ্যোতনাময় হতেই হবে। নিরলস অনুবাদের মাধ্যমে জ্ঞানচর্চার জন্য প্রয়োজনীয় গ্রন্থের অভাব হয়তো একদিন মেটানো যাবে, কিন্তু বাংলাকে জ্ঞানচর্চার মৌলিক বাহন করতে হলে তার সম্ভাবনাকে বিস্তৃত করার জন্য প্রয়াসী হতে হবে। বাংলায় জ্ঞানচর্চার অনুবাদ গ্রন্থগুলো কখনো কখনো বড় বেশি পরাশ্রয়ী হয়ে পড়ে; অনুবাদকে মনে হয় মূলের চেয়েও দুরূহ। জ্ঞান-বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে কোনো ধারণাকে অনুবাদ করা বড় কথা নয়_বরং সে ধারণাকে আত্মস্থ করে তাকে ভাষার আপন বিশিষ্ট শক্তির মাধ্যমে স্পষ্টভাবে ব্যক্ত করাই অধিকতর প্রয়োজন। জ্ঞানচর্চার ক্ষেত্রে বাংলা ব্যবহারের বেলায় এ সরল সত্যটির অনুধাবন একান্ত জরুরি। বাংলা প্রচলনের পর ইংরেজির ব্যবহার কি সম্পূর্ণ বিলুপ্ত হবে? তা সম্ভব নয়, বাঞ্ছনীয়ও নয়। আন্তর্জাতিক সংযোগের রাষ্ট্রীয় প্রয়োজন এবং জ্ঞানের ক্ষেত্রে নতুন চিন্তাধারার সঙ্গে সংযোগ রক্ষার জন্য ইংরেজির ব্যবহার অপরিহার্য। কিন্তু ইংরেজির ব্যবহার সীমিত হয়ে আসবে। প্রয়োজনবোধে, আমরা বাংলা থেকে ইংরেজিতে অগ্রসর হব, কিন্তু বাংলাই হবে আমাদের সবুজ প্রান্তর, পায়ের নিচের কঠিন মাটি।
ঘনিষ্ঠ, বুদ্ধিদীপ্ত ও নিরলস তত্ত্বাবধানের ভেতর দিয়েই বাংলা ভাষার দ্রুত প্রচলন নিশ্চিত করা যেতে পারে। এ জন্য একটা স্থায়ী সংসদ গঠন করা সম্ভব। যার সদস্য হবেন বাংলা ভাষার পণ্ডিত, সাহিত্যকর্মী, জ্ঞানের বিভিন্ন শাখার সুধীজন এবং সরকারি কাজের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ব্যক্তি। তাঁদের মূল্যায়নের পরিপ্রেক্ষিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা আবশ্যক।
লেখক : সাবেক সচিব ও মহাপরিচালক বাংলা একাডেমী এবং কবি ও প্রাবন্ধিক

No comments

Powered by Blogger.