গাজীপুরে ট্রেনের বগি লাইনচ্যুত নিহত ১, ছয় ঘণ্টা চলাচল বন্ধ

গাজীপুরের ধীরাশ্রম এলাকায় গতকাল শুক্রবার ঢাকা থেকে খুলনাগামী সুন্দরবন এক্সপ্রেস ট্রেনের ইঞ্জিন ও তিনটি বগি লাইনচ্যুত হয়ে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছে অন্তত ২০ যাত্রী।দুর্ঘটনার পর রাজধানীর সঙ্গে ময়মনসিংহ ও দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের রেল যোগাযোগ প্রায় ছয় ঘণ্টা বন্ধ থাকে।


লাইনচ্যুত বগি সরানোর পর বেলা সাড়ে তিনটায় একটি লাইন দিয়ে ট্রেন চলাচল শুরু হয়।
রেল ও যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে নিহতের পরিবারকে এক লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। দুর্ঘটনার কারণ খতিয়ে দেখতে দুটি তদন্ত কমিটি করেছে রেল কর্তৃপক্ষ।
নিহত রুহুল আমিন ওরফে হেলাল (২৮) পাবনার ভাঙ্গুরা উপজেলার চরভাঙ্গুরার আবদুল গফুরের ছেলে।
রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ, প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সকাল আটটা ২০ মিনিটে খুলনাগামী সুন্দরবন এক্সপ্রেস ট্রেনটি ঢাকা থেকে ছাড়ে। সকাল সাড়ে নয়টার দিকে গাজীপুর সদর উপজেলার ধীরাশ্রম এলাকায় ট্রেনের ইঞ্জিন রেললাইন থেকে বেরিয়ে আড়াআড়িভাবে মাটিতে পড়ে যায়। ইঞ্জিনের ওপরে উঠে যায় পেছনের বগি। এতে তিনটি বগি লাইনচ্যুত হয়। ঘটনাস্থলেই ট্রেনের নিচে চাপা পড়ে ‘ড’ বগির যাত্রী রুহুল আমিনের মৃত্যু হয়। আহত হন ট্রেনচালক মজিবুর রহমান, সহযোগী ইন্দ্রজিৎ কুমার সরকার, যাত্রী লিপি বেগম, আসমা আক্তার, সাইফুল ইসলাম ও আরাফাত হোসেনসহ অন্তত ২০ জন। তাঁরা গাজীপুর সদর হাসপাতাল ও বিভিন্ন ক্লিনিকে চিকিৎসা নিয়েছেন।
দুর্ঘটনায় রেললাইনের প্রায় ৫০০ মিটার পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন্ধ হয়ে যায় রাজধানীর সঙ্গে ময়মনসিংহ ও দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের রেল যোগাযোগ। দুর্ঘটনার খবর পেয়ে জয়দেবপুর থানা ও রেলওয়ে পুলিশ এবং গাজীপুর ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে ছুটে এসে হতাহতদের উদ্ধার করেন। বেলা সোয়া ১২টার দিকে টঙ্গী থেকে অপর একটি ইঞ্জিন দিয়ে দুর্ঘটনাকবলিত ট্রেনের সচল বগিগুলো টঙ্গী জংশনে নেওয়া হয়। পরে ঢাকা থেকে একটি রিলিফ ট্রেন এসে লাইনচ্যুত বগি ও ইঞ্জিন উদ্ধারে কাজ শুরু করে।
দুর্ঘটনাকবলিত ট্রেনের মাঝামাঝি একটি বগিতে ছিলেন পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে পুলিশের কনস্টেবল মো. জরিফুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘হঠাৎ ট্রেনটি থেমে গেলে ধাক্কায় অন্য বগির কাছে চলে যাই। দ্রুত নেমে দেখি সামনের চারটি বগি (ইঞ্জিনসহ) লাইনচ্যুত হয়েছে।’
জয়দেবপুর রেলজংশনের স্টেশন কর্মকর্তা জিয়াউদ্দিন সরদার বলেন, বেলা পৌনে তিনটার দিকে লাইনচ্যুত বগিগুলো সরানো সম্ভব হয়। সাড়ে তিনটার রেলমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সবুজ পতাকা উড়ালে ওই এলাকার ৩ নম্বর ফিড লাইন দিয়ে রেল চলাচল শুরু করে।
যাত্রীদের দুর্ভোগ: দুর্ঘটনার পর চরম দুর্ভোগে পড়ে ট্রেনের যাত্রীরা। অনেকে ট্রেন থেকে নেমে বিকল্প উপায়ে গন্তব্যে যাওয়ার চেষ্টা করেন। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে যাত্রী আফসার উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘কখন রেললাইন ঠিক হবে তার কোনো সময় জানা যায়নি। তাই হেঁটে গাজীপুর যাচ্ছি। সেখান থেকে বাসে বা অন্য উপায়ে বাড়ি যেতে হবে।’
বেলা সাড়ে ১২টার দিকে দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসেন রেলমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। পরে তিনি গাজীপুর সদর হাসপাতালে আহতদের দেখতে যান। মন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ‘মানুষ অনেক আশা নিয়ে ট্রেন জার্নি করে। যাত্রীদের অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হলো। এ জন্য আমি দুঃখিত এবং একটি প্রাণের মৃত্যু হওয়ায় খুবই মর্মাহত।’
রেলমন্ত্রী বলেন, ‘রেল একটি নিরাপদ সার্ভিস। এটি যাতে নির্বিঘ্নে চলাচল করতে না পেরে সেজন্য ষড়যন্ত্র চলছে। ট্রেন দুর্ঘটনার যাতে পুনরাবৃত্তি না হয় সেদিকে খেয়াল রাখব।’
তদন্ত কমিটি: রেলওয়ের ঢাকা বিভাগীয় প্রকৌশলী আরমান হোসেনকে প্রধান করে চার সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি করে রেল কর্তৃপক্ষ। তাদের চার দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী মোজাম্মেল হককে প্রধান করে গঠিত হয়েছে আরেকটি কমিটি। পাঁচ সদস্যের এ কমিটিকে সাত দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.