হারিয়ে যাচ্ছে গাইবান্ধার বাঁশ মৃৎশিল্প

গাইবান্ধা নদী বেষ্টিত একটি জেলা হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে এই জেলার ভূমিগঠন, জনবসতি স্থাপন, শস্য উৎপাদন, যোগাযোগ ব্যবস্থা ও ব্যবসা-বাণিজ্যসহ আর্থ-সামাজিক কর্মকা-­ এবং শিল্প ও সংস্কৃতি বিকাশে নদ-নদীর নানাবিধ প্রভাব বিদ্যমান। ফলে সর্বক্ষেত্রে গাইবান্ধাকে আলাদা বৈশিষ্ট্যে চিহ্নিত করা যায়।


সে জন্য এ জেলার চারু,“কারু“ ও দারু“ শিল্প স্বকীয় বৈশিষ্ট্যে ছিল সমুজ্জ্বল। কিন্তু কালের বিবর্তনে ও বাস্তব অবস্থার প্রেক্ষাপটে এবং অযতœ-অবহেলা-সংরক্ষণের অভাবে আদি অনেক দেশীয় শিল্প হারিয়ে গেছে। আবার অনেক আদি শিল্প বিরূপ অবস্থাকে মোকাবেলা করে লুপ্তপ্রায় অবস্থায় এখনও টিকে আছে। তার মধ্যে মৃৎশিল্প এবং বাঁশ ও বেত শিল্প অন্যতম।
মৃৎশিল্প: কুম্ভকার পরিবাররা মৃৎশিল্পকে উপজীব্য করেই এই জেলায় এক সময় রমরমা কারবার চালিয়ে গেছে। এ জেলার কুম্ভকারদের তৈরি মাটির হাঁড়ি, শানকি, সরা, কারাদী, বাটনা, পাত কুয়ার পাট, মাটির খেলনা, টব, বদনা, কলস, নকশী সোরাই, জালের কাঠিসহ নানা তৈজসপত্র আগে নৌকায় বোঝাই হয়ে নদীপথে চলে যেত অন্য জেলায়। আগে এসব মাটির তৈজসপত্র ছিল গ্রামের সব পরিবারের একান্ত নিত্য ব্যবহার্য। কিন্তু পরবর্তী পর্যায়ে এনামেল, কাঁচ, প্লাস্টিক সামগ্রীর প্রচলন হওয়ায় মৃৎশিল্পীদের তৈজসপত্রের চাহিদা একেবারেই কমে যায়। ফলে মৃৎশিল্পের চাহিদা হ্রাস, উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি এবং দরিদ্র কুম্ভকার পরিবারদের চরম অর্থাভাব মৃৎশিল্পে নিয়োজিত অধিকাংশ পরিবারকে জীবন-জীবিকার তাগিদে অন্য পেশায় সরে যেতে বাধ্য করেছে।
তবে সুন্দরগঞ্জের চ-ীপুর, পাঁচপীর, গোবিন্দগঞ্জের কোচাশহর, গাইবান্ধার পালপাড়া এবং পলাশবাড়ি উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নে এখনও পালবংশীয় কিছু কুম্ভকার মাটির হাঁড়ি, কলস, ফুলের ছোট-বড় টব, বৈশাখ মৌসুমে মাটির খেলনা তৈরি করে কোন রকমে জীবিকা নির্বাহ করছে।
বাঁশ ও বেত শিল্প: এক সময় বাঁশ ও বেত শিল্পে সমৃদ্ধ ছিল গাইবান্ধা জেলা। কিন্তু বনাঞ্চল ও বৃক্ষ নিধন প্রবণতায় জেলার জঙ্গল এবং ভিটায় যে বেতবন ছিল তা ইতোমধ্যে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। ফলে বেত শিল্প এ জেলা থেকে অনেক আগেই হারিয়ে গেছে। গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ, গোবিন্দগঞ্জ শহর, সাদুল্যাপুর ও পলাশবাড়ি উপজেলার কিছু কিছু এলাকার হিন্দু হরিজন সম্প্রদায়ভুক্ত পাটনী পরিবারগুলো এই বাঁশজত শিল্পকর্মে নিজেদের নিয়োজিত রেখে জীবনজীবিকা অব্যাহত রেখেছে।

No comments

Powered by Blogger.