পিংক সিটি প্রকল্প সমাচার

গত জোট সরকারের আমলে হঠাৎ করেই আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়ে গিয়েছিল অনেকে। তাদের মধ্যে অন্যতম সাবেক শিবির নেতা সালাউদ্দিন। অভিযোগ আছে, বিএনপি-জামায়াত সরকারের অদৃশ্য মদদে রাজধানীর খিলক্ষেতে স্থানীয় বহু মানুষের জমিজমা দখল করে সালাউদ্দিন গড়ে তোলেন জেনোভেলি পিংক সিটি।
একই সঙ্গে সেটিকে জঙ্গি ও সন্ত্রাসীদের ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করা শুরু হয়। ফলে উচ্ছেদ হওয়া পরিবারগুলোর পক্ষে অসহায়ের মতো জায়গা-বাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় থাকেনি। তার মধ্যে বহু সংখ্যালঘু পরিবারও রয়েছে। সম্প্রতি সেই ক্যাডাররা স্থানীয় আনসার ক্যাম্পে হামলা চালিয়ে পাঁচ আনসার সদস্যকে আহত করেছে। বাকিরা কোনো রকমে পালিয়ে জীবন রক্ষা করে। পরে বুলডোজার দিয়ে আনসার ক্যাম্পটি গুঁড়িয়ে দেয় ক্যাডাররা। এর আগে প্রতারিত গ্রাহকদের সমিতি 'জেনোভেলি পিংক সিটি ভুক্তভোগী মালিক সমিতি' জেনোভেলির কলাবাগান অফিসে জমি ও ফ্ল্যাট বুঝিয়ে দেওয়ার দাবি জানাতে গেলে তাদের ওপর হামলা চালায় ক্যাডাররা। তারা এমনকি সমিতির সভাপতি আমেরিকা প্রবাসী নূরজাহান শিকদারকেও গুরুতর আহত করে। পরে তাঁকে স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হয় বলে প্রকাশিত খবরে জানা যায়।
আনসার বাহিনী দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীরই একটি অংশ। একটি হাউজিং কম্পানির লালিত ক্যাডাররা তাদের শুধু আহত করা নয়, তাদের ক্যাম্প গুঁড়িয়ে দেওয়ার মতো সাহস পায় কিভাবে? পরে অবশ্য তিন ক্যাডারকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। জানা যায়, জিজ্ঞাসাবাদে তারা সাবেক শিবির নেতা সালাউদ্দিনের নির্দেশে হামলা চালিয়েছে বলে উল্লেখ করলেও পুলিশ এখনো সালাউদ্দিনকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। এর পেছনে কোনো রহস্য কাজ করছে কি না, তাও জানা দরকার। কারণ, এই পিংক সিটিতে অতীতে একাধিক হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। স্থানীয় পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে, হত্যাকাণ্ডকে তারা স্বাভাবিক ঘটনা বলেই চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছে। তা ছাড়া স্থানীয় লোকজনের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে, এই সিটির ভেতরে একটি লম্বা দ্বিতল ঘরে নিয়মিত জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। জঙ্গি ও ক্যাডারদের কাছে বিপুল অত্যাধুনিক অস্ত্র রয়েছে। ফলে প্লট বা ফ্ল্যাট না পেলেও কেউ তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার সাহস পায় না। এমনকি স্থানীয় আওয়ামী লীগ সভাপতিসহ অনেকেই জানিয়েছেন, রহস্যজনকভাবে এ সরকারের আমলেও এদের দৌরাত্ম্য অব্যাহত আছে এবং তাতে তাঁরা এলাকায় থাকতে পারবেন কি না, সে আশঙ্কায় রয়েছেন।
পত্রিকায় ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় চিত্তাকর্ষক বিজ্ঞাপন দিয়ে বছরের পর বছর সাধারণ মানুষকে প্রতারিত করা হচ্ছে, অথচ সরকার নীরব থাকবে_এটা হতে পারে না। তদুপরি, যেখানে জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ ও আশ্রয় দানের অভিযোগ রয়েছে, আনসার ক্যাম্পে হামলা চালানো হয়েছে, সেখানে সরকারের আরো কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। এটি কোনো মগের মুল্লুক নয়, এখানে গায়ের জোরে যে কেউ অন্যের অধিকার কেড়ে নিতে পারে না_এই সত্য প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব সরকারের। আমরা আশা করি, সরকার এ ব্যাপারে দ্রুত ও দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

No comments

Powered by Blogger.