শ্রীকাইলে মিলল নতুন গ্যাসক্ষেত্র

কুমিল্লার মুরাদনগরের শ্রীকাইলে একটি নতুন গ্যাসক্ষেত্রের সন্ধান পেয়েছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কম্পানি লিমিটেড (বাপেক্স)। এটি বাংলাদেশের ২৫তম গ্যাসক্ষেত্র। শ্রীকাইলে কূপের মুখে আগুন জ্বালিয়ে পরীক্ষামূলক উত্তোলন ও চাপ পরীক্ষার মাধ্যমে গতকাল শুক্রবার নতুন গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কারের ঘোষণা দেন


বাংলাদেশ তেল, গ্যাস ও খনিজসম্পদ করপোরেশনের (পেট্রোবাংলা) চেয়ারম্যান ড. হোসেন মনসুর। সব কিছু ঠিক থাকলে আগামী অক্টোবর বা নভেম্বরের মধ্যে এই গ্যাসক্ষেত্র থেকে দৈনিক ১৬ থেকে ১৭ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা সম্ভব হবে। তবে নতুন এ গ্যাসক্ষেত্রে কী পরিমাণ গ্যাস মজুদ আছে তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে এ গ্যাসক্ষেত্রের দুটি জোনে অন্তত ৩০০ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস মজুদ থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এর সঠিক পরিমাণ জানতে আরো তিন দিন অপেক্ষা করতে হবে।
পেট্রোবাংলা চেয়ারম্যান ড. হোসেন মনসুর আশা প্রকাশ করেন, এই গ্যাসক্ষেত্র থেকে বাণিজ্যিকভাবে গ্যাস উত্তোলন করা যাবে। এখন পর্যন্ত এর প্রেসার ভালো। নতুন এই কূপ থেকে বাণিজ্যিক উত্তোলন শুরু হলে দেশে চালু কূপের সংখ্যা দাঁড়াবে ৮২টি। আর সে ক্ষেত্রে এই ক্ষেত্রের গ্যাস শিল্প, সার ও বিদ্যুৎ খাতে সরবরাহ করা যাবে বলে জানান তিনি।
তিনি জানান, শ্রীকাইল গ্যাসক্ষেত্রে কী পরিমাণ গ্যাস আছে এবং দৈনিক কী পরিমাণ উত্তোলন করা যাবে তা জানতে শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে ড্রিলিং স্টিম টেস্ট (ডিএসটি) শুরু হয়েছে। রাতে বন্ধ থাকার পর শনিবার সকালে আবার টেস্টিংয়ের কাজ শুরু হবে। এ প্রক্রিয়া শেষ হলেই বলা যাবে কী পরিমাণ গ্যাস এখানে মজুদ আছে।
পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান আরো বলেন, তিন হাজার মিটার নিচে অবস্থিত ডি লোয়ার জোন থেকে এখন গ্যাস উত্তোলনের কাজ চলছে। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে ডি আপার জোন থেকে গ্যাস উত্তোলনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নিশ্চিত হওয়ার পর দুটি জোন থেকে একসঙ্গে গ্যাস উত্তোলন করা হবে। নতুন এই কূপ থেকে বর্তমানে এক হাজার ৭০০ পিএসআইজি (প্রেসার পার স্কোয়ার ইঞ্চি গ্যাস) চাপে ১৫ মিলিয়ন ঘনফুটের বেশি গ্যাস তোলা সম্ভব হচ্ছে বলে তিনি জানান।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন বাপেক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মর্তুজা আহমেদ ফারুক, মহাব্যবস্থাপক (খনন) শাহাবুদ্দিন আহমেদ, উপব্যবস্থাপক ও শ্রীকাইল গ্যাস কূপ ২-এর প্রকল্প পরিচালক মো. শহিদুল্লাহ আহমেদ।
বাপেক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মর্তুজা আহমেদ ফারুক জানান, শ্রীকাইলের নতুন কূপের নিচের এবং ওপরের জোনে মোট ৩০০ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস মজুদ থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। এ ছাড়াও এমন আরো কিছু এলাকা আছে যেখানে গ্যাস থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। সেগুলোও থ্রিডি জরিপের মাধ্যমে জানতে পারব। সে হিসাবে আরো কূপ খননের ব্যবস্থা করব।
শ্রীকাইলের নতুন গ্যাসক্ষেত্রে চলতি বছর মে মাসে কাজ শুরুর পর গত ২৯ জুন তিন হাজার ২১৪ মিটার পর্যন্ত খনন শেষে এ কূপের খনন সমাপ্ত করা হয়। এর পর দুই দিন লগিংয়ের (গ্যাসের উপস্থিতি নিশ্চিত) কাজ চলে। তখনই বাপেক্স জানিয়েছিল, শ্রীকাইলে গ্যাস পাওয়ার জোরালো সম্ভাবনা রয়েছে। এর আগে ত্রিমাত্রিক জরিপে এই কূপে ২৫০ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস মজুদ থাকার বিষয়ে প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছিল। সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে বাপেক্সের প্রকৌশলীরা এই কূপ খনন করেন।
পেট্রোবাংলা চেয়ারম্যান জানান, বর্তমানে দেশে দৈনিক দুই হাজার ৭০০ থেকে তিন হাজার মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের চাহিদার বিপরীতে দুই হাজার ২০০ মিলিয়ন ঘনফুটের কিছু বেশি গ্যাস উৎপাদন হচ্ছে।
এদিকে নতুন গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কারের আনুষ্ঠানিক ঘোষণার পর গ্যাসক্ষেত্র এলাকা এবং কুমিল্লার মানুষের মধ্যে আনন্দ ছড়িয়ে পড়ে।

No comments

Powered by Blogger.