ব্যক্তিগত আক্রোশ-সন্ত্রাসের ভয়ঙ্কর রূপ

বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের (বিসিসি) এক সহকারী প্রোগ্রামার মঙ্গলবার যেভাবে বোমা বিস্ফোরণের শিকার হয়েছেন, তা আমাদের অনেক প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। কারণ হিসেবে সংবাদমাধ্যমে যদিও দুই সহকর্মীর হৃদয়ঘটিত জটিলতার কথা উঠে এসেছে, এই ঘটনাকে নিছক মানবিক স্খলন হিসেবে দেখার অবকাশ সামান্যই।


ওই তরুণীর কাছে বোমা গছিয়ে বিস্ফোরিত করার মধ্য দিয়ে সমাজের অপরাধপ্রবণতা কেবল নয়, সন্ত্রাসবাদী সরঞ্জামের সহজপ্রাপ্যতাও স্পস্ট হয়েছে। যেভাবে সামান্য চেষ্টা ও অর্থের বিনিময়ে, সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞের ভাষায় 'উচ্চ প্রযুক্তির' বোমা পাওয়া গেছে, তা আমাদের আতঙ্কিত না করে পারে না। আগামীকাল প্রতিবেশীর বিরোধেও কেউ যে বোমা সংগ্রহ করতে যাবে না, তার নিশ্চয়তা কী? সেল ফোনকে বোমাবাহক হিসেবে ব্যবহারও কম উদ্বেগজনক নয়। আমাদের রাজনৈতিক রেওয়াজ মেনে আশঙ্কা করা যায়, সামনের দিনগুলোতে প্রধান প্রধান দল ও জোটের মধ্যে সংঘাত বাড়তে পারে। এ ধরনের পরিস্থিতিতে গাড়ি, ব্যাগ ও দেহ তল্লাশিমূলক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। 'মোবাইল বোমা' প্রতিরোধের ব্যাপারে প্রশাসন কতখানি সতর্ক? দেশের বাইরে এ সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিশ্চয়ই পাওয়া যাবে। আলোচ্য বোমা বিস্ফোরণের সঙ্গে জড়িতদের শিকড় ও সূত্র অনুসন্ধানের দিকেও দিতে হবে গভীর মনোযোগ। ব্যক্তিগত বিরোধের রঙ লাগিয়ে সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার বিষয়টিকে খাটো করে দেখা উচিত হবে না। বোমা হামলার নেপথ্য নায়ক ও তার সহযোগীদের উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা যেমন, তেমনই জরুরি এই ধরনের বোমা তৈরি ও সরবরাহের বিস্তারিত জানা। সন্ত্রাসবাদ নিয়ন্ত্রণে বর্তমান সরকার যদিও পূর্বসূরিদের তুলনায় সাফল্য দেখাতে পেরেছে, এর কালো ছায়া কিন্তু পুরোপুরি অপসৃত হয়নি। এও মনে রাখা জরুরি, জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদীরা বিসিসির ঘটনায় দায়ী ব্যক্তির মতো অবিমৃষ্যকারীদেরই কাজে লাগিয়ে রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক নিরাপত্তা জাল ছিন্ন করতে চায়। সেই অপচেষ্টা বিফল করতে হলে, ব্যক্তিগত বিরোধের এসব বিস্ফোরণকে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা নজরদারির বাইরে রাখা যাবে না।
 

No comments

Powered by Blogger.