মুক্তি_ নতুন অভিজ্ঞতা by আনোয়ার হোসেন

কারাগার থেকে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদী দল বা বিএনপির অনেক নেতা মুক্তি পেয়েছেন। বাংলাদেশের রাজনীতিকদের ক্ষেত্রে জেলজীবন এক সময় স্বাভাবিক ছিল। এর শুরু ব্রিটিশ আমল থেকে। অনেক নেতা জেলজীবন এড়াতে পালিয়ে বেড়াতেন। তাদের বলা হতো আন্ডারগ্রাউন্ডে রয়েছেন।


যাদের নামে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হতো তাদের সম্পর্কে বলা হতো হুলিয়া জারি হয়েছে। সত্তরের দশকের মাঝামাঝি জিয়াউর রহমান সামরিক শাসক থাকাকালে শত শত রাজনৈতিক নেতাকর্মীকে কারাগারে প্রেরণ করেন। আশির দশকে এইচএম এরশাদও রাজনৈতিক আন্দোলন দমনের জন্য জেলে প্রেরণের কৌশল অনুসরণ করেছেন।
সামরিক শাসকরা ক্ষমতা পাকাপোক্ত করার জন্য রাজনৈতিক দল গঠন করেছেন। ক্ষমতায় থাকাকালে গড়ে তোলা এ দলে যারা যোগ দিতেন তারা আপনাআপনি ক্ষমতাসীন দলের লোক হয়ে যেতেন। তাদের কোনো নির্বাচন মোকাবেলা করে জনগণের রায় নেওয়ার প্রয়োজন পড়ত না। বরং ক্ষমতায় থেকে লোক দেখানো নির্বাচনের আয়োজন করা হতো এবং এ সময়ে তাদের হারানো কার সাধ্য! এসব দলের ক্ষমতা থেকে বিদায় হয়েছে অস্বাভাবিক উপায়ে_ এইচএম এরশাদ বিদায় করেছেন বিএনপিকে এবং আওয়ামী লীগ ও বিএনপির যৌথ আন্দোলনে বিদায় হয়েছে এইচএম এরশাদের দল জাতীয় পার্টি। শেষোক্তজনের উপরাষ্ট্রপতি হিসেবে সঙ্গী ছিলেন ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ।
নব্বই দশকের গোড়ার দিকে বিএনপি ক্ষমতায় আসে। দেশে চালু হয় সংসদীয় গণতন্ত্র। এরপর থেকে রাজনীতিকদের জেলে প্রেরণের ঘটনা কমেছে। তবে আওয়ামী লীগ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলন গড়ে তুললে বিএনপি স্বল্প সময়ের জন্য কিছু নেতাকে জেলে পাঠিয়েছিল।
২০০৭ সালে আরেক ধরনের তত্ত্বাবধায়ক প্রতিষ্ঠিত হয় সেনাবাহিনীর প্রত্যক্ষ সহযোগিতায়। ওই সময়ে দুই দলের অনেক নেতাকে জেলে পাঠানো হয় দুর্নীতির অভিযোগে। শাস্তিও হয় অনেকের। শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়াও জেলে যান। বাংলাদেশে তাদের জন্য এটি ছিল নতুন অভিজ্ঞতা। আওয়ামী লীগ ১৯৯৬ সালের পর ৫ বছর ক্ষমতায় থাকার সময়ে অনেক অভিযোগ থাকলেও তারেক রহমানকে জেলে পাঠানোর কথা ভাবেনি। কিন্তু ফখরুদ্দীন আহমদের সরকার সেটা করেছে।
রাজনৈতিক কারণে জেলে যাওয়া এ প্রজন্মের অনেক বিএনপি নেতার জন্য নতুন অভিজ্ঞতা। তারা সরকার উৎখাতের স্লোগান নিয়ে মাঠে নেমেছিল। সরকার তার ক্ষমতা দেখিয়েছে। বিএনপি স্বভাবতই জেল-নির্যাতনের নিন্দা করছে। কিন্তু রাজপথে থেকে সরকারকে 'মানি না' বলা হলে পাল্টা কিছু আসবে, এটাই স্বাভাবিক। এটা ঠেকানোর ওষুধও রয়েছে_ জনগণকে রাজপথে নামিয়ে আনা। পাকিস্তান আমলে এটা ঘটেছে ১৯৬৯ সালের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে। আশির দশকের শেষ দিকে এটা ঘটেছে এইচএম এরশাদের পতনের সময়ে। কিন্তু বিএনপি এখন পর্যন্ত তেমনটি ঘটাতে পারছে বলে মনে হয় না। তাই নেতাদের মুক্তির জন্য আন্দোলন নয়, তাদের নির্ভর করতে হয়েছে আদালতের ওপর। আর তাদের বরাবরের অভিযোগ_ আদালত চলে সরকারের মর্জিতে। তাহলে কি সরকারের ইচ্ছাতেই দলের নেতারা ছাড়া পেয়েছেন? এ অভিযোগ কতটা সত্য, সেটা জানা যাবে মুক্তিপ্রাপ্তদের পরবর্তী পদক্ষেপ দেখে। বিএনপির কোনো নেতা কিংবা তাদের জোটসঙ্গীরা যদি এখন সরকার পতনের আন্দোলন থেকে পিছুটানের কথা বলেন তাহলে দুটি ধারণা হতে পারে_ এক. সরকারের ভীতি প্রদর্শনের কৌশল কাজ দিয়েছে; দুই. জেলে থাকাকালে কাউকে কাউকে ভবিষ্যৎ রাজনীতি বিষয়ে ভিন্নভাবে ভাবার মন্ত্রণা দেওয়া হয়েছে। সময়ই বলে দেবে, প্রকৃত পরিস্থিতি কী। রাজনীতিকদের জন্য জেলজীবন স্বাভাবিক বলে অনেক বছর ধরে নেওয়া হয়েছে। আবার গণতান্ত্রিক সময়ে মনে হয়েছে, এমনটি কেন হবে? মুক্তজীবনে বিএনপি এবং তাদের জোটের নেতাদের স্বাগতম। তারা কোন পথে চলেন, কী বলেন সেটা দেখার অপেক্ষায়।
 

No comments

Powered by Blogger.