বাজার স্থিতিশীল রাখতে জোগান বাড়াতে হবে-চালের দাম

দ্রব্যমূল্য, বিশেষ করে চালের দাম বাংলাদেশের বাস্তবতায় একটি স্পর্শকাতর বিষয়। গত এক বছরে চালের দাম যে হারে বেড়েছে, তাকে স্বাভাবিক বৃদ্ধি হিসেবে বিবেচনা করা যায় না। ধানের ফলন থেকে শুরু করে খোলাবাজারে চাল সরবরাহ, উৎপাদন ও চাহিদার মধ্যে সামঞ্জস্য—এসব ক্ষেত্রে কোথাও কোনো সমস্যা বা ত্রুটি-বিচ্যুতি না থাকলে
এমন হওয়ার কথা নয়। ফলে এ ব্যাপারে সরকার ও নীতিনির্ধারকদের বাড়তি মনোযোগ, নজরদারি ও তদারকি জরুরি হয়ে পড়েছে।
প্রথম আলোর এক প্রতিবেদনে গত ছয় বছরে মাথাপিছু আয় বাড়া এবং এর সঙ্গে মূল্যস্ফীতির তুলনামূলক চিত্র প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে দেখা যাচ্ছে, মাথাপিছু আয় বাড়লেও এ ক্ষেত্রে বৈষম্যের কারণে সীমিত আয়ের লোকজনের দুর্ভোগ বেড়েছে। কারণ, মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর আয় বাড়েনি। ফলে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির ধাক্কা সীমিত আয়ের লোকজনের ওপর বেশি পড়ছে। এই জনগোষ্ঠীর প্রধান খাদ্য চালের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির বিষয়টি তাই বাড়তি চাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
চালের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ায় এটা ধরে নিতে হচ্ছে যে উৎপাদন ও চাহিদার মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। বাজার-পরিস্থিতিও তেমনই ইঙ্গিত দিচ্ছে। ধানের ফলন ও উৎপাদন নিয়ে যে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছিল, তা বাস্তবায়িত হয়নি। এ ক্ষেত্রে সরকারের কাছে থাকা তথ্য-উপাত্ত ও বাস্তব পরিস্থিতির মধ্যে পার্থক্য থাকতে পারে। যথাযথ তথ্য-উপাত্তের বিষয়টি সে কারণে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কী পরিমাণ ধান উৎপাদিত হয়েছে, সে ব্যাপারে সঠিক তথ্য থাকলে এর সঙ্গে চাহিদার বিষয়টি মিলিয়ে দেখা যায়। পার্থক্য থাকলে সেটা পূরণের জন্য আগাম উদ্যোগ নেওয়া তখন সহজ হয়। আমদানি বা অন্য কোনো উপায়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া যায়। একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক বাজার-পরিস্থিতির দিকেও তীক্ষ� নজরদারি প্রয়োজন। কারণ, এর প্রভাব দেশীয় বাজারেও পড়ে। আমরা আশা করব, সরকার সামনে এ ধরনের পরিস্থিতি এড়াতে উৎপাদন ও চাহিদার সঠিক তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ, বাজার-পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ ও আন্তর্জাতিক বাজার-পরিস্থিতির প্রবণতার প্রতি নজর রাখার কাজটি গুরুত্বের সঙ্গে করবে।
বর্তমান পরিস্থিতি মোকাবিলায়, বিশেষ করে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ওপর চাপ কমাতে তাদের কম দামে চাল পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। অর্থনীতিবিদ মাহবুব হোসেন তেমন পরামর্শ দিয়ে মূলত শিল্পশ্রমিক ও দুর্যোগপ্রবণ এলাকাগুলোতে সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনীর আওতায় বছরব্যাপী কম দামে চাল বিক্রির ওপর জোর দিয়েছেন। তিনি টিসিবির মাধ্যমে ওই এলাকাগুলোতে ভোজ্যতেল, ডালসহ বিভিন্ন পণ্য বিক্রির উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলেছেন। সরকার এরই মধ্যে কিছু উদ্যোগ নিয়েছে। খোলাবাজারে কম দামে চাল বিক্রির ওএমএস কার্যক্রম এখন ঢাকার বাইরেও সম্প্রসারণ করা হয়েছে। দরিদ্র জনগোষ্ঠী যাতে এ কার্যক্রমের সুফল পায়, সেটা নিশ্চিত করা এখন জরুরি।
অন্যদিকে চালের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির বিষয়টি সামাল দেওয়ার জন্য সরবরাহ বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। এ ক্ষেত্রে আমদানি, বিশেষ করে ভারত থেকে চাল আনার প্রক্রিয়া দ্রুততর করা প্রয়োজন।

No comments

Powered by Blogger.