অভিমত ভিন্নমত

গণতন্ত্রে স্বাধীন সংবাদমাধ্যমের বিকল্প নেই আমাদের দেশের পুরো ব্যবস্থা দূষিত, দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। কোনো রাজনৈতিক দলই দুর্নীতির ঊর্ধ্বে নয়। এখনকার প্রবণতা আরও খারাপ। প্রতিটি নতুন সরকার আগের সরকারের চেয়ে বেশি দুর্নীতিতে লিপ্ত হচ্ছে। দুর্নীতিতে কে কাকে টেক্কা দিতে পারে, এই প্রতিযোগিতা চলে তাদের মধ্যে।


এ অবস্থায় প্রথম আলো একমাত্র স্বাধীন সংবাদপত্র, যা কথা বলে জনগণের পক্ষে; তথাকথিত রাজনীতির সঙ্গে যার কোনো সম্পর্ক নেই; নেতা-নেত্রীদের তোয়াজ করা যার কাজ নয়। রাজনৈতিক দলগুলো সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের দ্বারা নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় যায়, কিন্তু ক্ষমতায় গিয়ে তারা ব্যস্ত হয়ে পড়ে নিজেদের স্বার্থ নিয়ে। তাদের প্রবণতা ও পরিবারতন্ত্রের প্রতি তাদের বিশ্বাস আমাদের বিপদগ্রস্ত করে।
বর্তমান সরকার এই সময়ের মধ্যেই বিগত চারদলীয় জোট সরকারের সব রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। আমরা আশা করি, আমাদের রাজনীতিবিদেরা তাঁদের অতীতের কৃতকর্মগুলো থেকে শিক্ষা নেবেন; কিন্তু তাঁরা তা কখনো করেন না। তাঁরা যদি তাঁদের নীতি-নৈতিকতার উন্নয়ন ঘটাতে অতীত থেকে শিক্ষা নেন, তাহলেই ভালো হবে।

মোহাম্মদ সালমান

২. প্রথম আলোর অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার প্রয়াশ এবং সত্য খোঁজার আন্তরিকতা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। বিভিন্ন রকমের প্রতিকূলতা ও অন্যায্য চাপের মুখেও প্রথম আলো যে সুসাংবাদিকতার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখে, সে জন্য আমি এই সংবাদপত্রকে স্বাগত জানাই। অবশ্য প্রথম আলোর মন্তব্য-বিশ্লেষণধর্মী লেখাগুলো নিয়ে আমি কয়েকটি কথা বলতে চাই। এ ধরনের লেখার তিনটি অংশ থাকে: ১. ভালো কাজের প্রশংসা করা, ২. অসম্পূর্ণ কাজ সফলভাবে শেষ করার ক্ষেত্রে পরামর্শ দেওয়া, ত্রুটিপূর্ণ কাজের ত্রুটি শুধরাতে সহযোগিতা করা; এবং ৩. যা ঠিক নয়, অন্যায্য বা অন্যায়, তার সমালোচনা করা।
প্রথম আলো সরকারের কর্মকাণ্ডের ক্ষেত্রে বিশেষ করে আওয়ামী লীগ সরকারের ক্ষেত্রে কেবল তিন নম্বর কাজটিই করে থাকে: ভুল-ত্রুটি বা অন্যায়-অন্যায্য কাজের সমালোচনা করে। শাসন-প্রক্রিয়ার ইতিবাচক দিকগুলো বাদ দিয়ে শুধু নেতিবাচক দিকগুলোর সমালোচনা করার মধ্য দিয়ে সরকারের যে মূল্যায়ন ঘটে, তা হয় আংশিক, এবং এই আংশিক মূল্যায়ন থেকে মনে হয় যেন আওয়ামী লীগ সরকারের চেয়ে খারাপ সরকার বাংলাদেশে আর কখনো আসেনি। আমার মনে হয়, এ থেকেই বিভ্রান্তি ও ক্ষোভ-বিক্ষোভ-হতাশার সৃষ্টি হয়, যা হওয়া উচিত নয়। এ থেকেই এমন ঘটনার অবতারণা ঘটতে পারে, যেমনটি সম্প্রতি দেখা গেল জাতীয় সংসদে। প্রথম আলোর মনে রাখা উচিত, সরকারের কাজের আংশিক মূল্যায়ন নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার অনুকূল নয়; এবং বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এর সুবিধা পায় প্রতিক্রিয়াশীল মৌলবাদী রাজনৈতিক শক্তিগুলো। এতে সরকার সম্পর্কে নেতিবাচক জনমত সৃষ্টি হয় ভারসাম্যহীনভাবে।

আশীষ দাস

৩. ১২ বছর ধরে বহু হুমকি, আক্রমণ ও মিথ্যা প্রচারের মুখেও প্রথম আলো তার স্বাধীন সাংবাদিকতার নীতি সমুন্নত রেখে চলেছে। প্রথম আলো সব সময় ন্যায়, স্বাধীনতা, গণতন্ত্র ও প্রগতির পক্ষে ছিল এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। কোনো ভয়ভীতি ও চাপের কাছে নতিস্বীকার না করে প্রথম আলো স্বাধীন, সৎ ও নির্ভীক সাংবাদিকতায় অবিচল থাকবে। আশা করি, প্রথম আলো খারাপকে খারাপ বলার সাহস দেখাবে।

সৈয়দ আরমান হোসেন

৪. সংসদীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় আমাদের দেশের সাংবাদিকদের ভূমিকা উল্লেখযোগ্য। গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করতে সংবাদমাধ্যম ও সাংবাদিকেরা সব সময় রাজনৈতিক নেতা-কর্মী ও জনগণের পাশে ছিলেন। বাংলাদেশের জনগণ দেশ-বিদেশের খবর পাওয়ার জন্য সংবাদপত্রগুলোর ওপর বেশি নির্ভরশীল। সংবাদপত্রগুলোই এ দেশের সাধারণ জনগণের গণতন্ত্রের শক্তি জোগায়। সংবাদমাধ্যমগুলোর সত্যনিষ্ঠ খবরেই আমরা মন্ত্রী-সাংসদদের সুকর্ম কিংবা অপকর্মের বিষয়ে অবগত হতে পারি। আর এই মন্ত্রী-সাংসদদের সব কাজকর্মের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির মাধ্যমেই দেশের মানুষ তাঁদের মূল্যায়ন করতে চায়। এটা দেশের জনগণের জন্য অনেক বড় পাওয়া। সংবাদমাধ্যম ও সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মন্ত্রী-সাংসদদের উদ্দেশ্যমূলক ষড়যন্ত্র ও বিরোধিতা তাঁদের অপকর্মের দুর্বলতাই প্রমাণ করে। দেশের কতিপয় মন্ত্রী-সাংসদসহ দলীয় নেতাদের ষড়যন্ত্র করে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমানের নামে মিথ্যা, উদ্দেশ্যমূলক ও হাস্যকর বক্তব্যের বিরোধিতা করি। প্রথম আলোর সংবাদ প্রচারে স্বাধীনতায় বাধাদানের প্রতিবাদ জানিয়ে বলব—সাবধান, এক মতিউর রহমানের মতো হাজার মতিউর রহমান এ দেশে জন্ম নিয়েছেন, যাঁরা দেশটির গণতন্ত্র রক্ষায় ভয়ভীতি ও চাপের কাছে নতিস্বীকার করবেন না। প্রথম আলোর সত্যনিষ্ঠ সংবাদ প্রচারে বাধা দিলে ভবিষ্যতে হাজারও প্রথম আলোর জন্ম হবে। কতজন মতিউর রহমানকে দমানো সম্ভব? সম্পাদক মতিউর রহমান ও তাঁর প্রথম আলো পত্রিকার অগ্রযাত্রা কোনো দিনও থামাতে পারবে না কেউ। মতিউর রহমান, আপনি এগিয়ে যান, আমরা সবাই আপনার পাশে আছি এবং থাকব। আমিও নিশ্চয়তার সঙ্গে বলতে পারি, এ দেশের লাখ লাখ সচেতন পাঠক ও গণতন্ত্রকামী জনগণই আপনাদের শক্তি।

ইফতেখার

৫. জনাব মতিউর রহমান, কত মানুষ ন্যায়কে সমর্থন করে এবং এ জন্য আপনার ন্যায্য অবস্থানকেও সমর্থন করে, এটা দেখে নিশ্চয়ই আপনি আনন্দ বোধ করছেন। দেশের সাধারণ মানুষের বিরাট অংশ সত্য ও ন্যায়কে এখনো সমর্থন করে। এবং সে জন্যই আপনাকে তাঁরা উপরিউক্ত মন্তব্যের মাধ্যমে বিরাট সমর্থন ও সাহস দিচ্ছে। কিন্তু অনেক সময় দুঃখ লাগে যখন দেখা যায়, মন্তব্যকারীদের অনেক যুক্তিপূর্ণ ও চরম সত্য কথা আপনার মডারেটররা বেমালুম বাদ দিয়ে দেন, যাতে বক্তার আসল বক্তব্যই বিকৃত হয়ে যায়। রাজনীতিকদের নীতিহীনতাপূর্ণ আক্রমণের মুখে জনসমর্থনই সংবাদপত্রের রক্ষাকবচ। তাই অনুরোধ, মন্তব্যকারীদের মন্তব্যকে আশা করি যথাযথ মূল্য দেবেন। তাতে প্রথম আলোই উপকৃত হবে, সাহস পাবে।

এম শওকত আলী

৬. অসংখ্য ধন্যবাদ এই কলামটির জন্য। দেশের জন্য লিখুন, আমরা আপামর জনতা সঙ্গে আছি, থাকব।
আসলে সংবাদমাধ্যম আছে বলেই আমরা আজ দেশে থাকতে পারছি, আর দুষ্টুচক্রীয় ক্ষমতাধরেরা দেশটাকে গিলে খেতে পারছেন না। আর তাই রাজনীতিবিদেরা বা সাংসদেরা এখন সংবাদমাধ্যমের পেছনে লেগেছেন। কারণ, তাঁদের খানাপিনায় সমস্যা হচ্ছে, মুখে নিয়ে চিবোতে পারছেন, কিন্তু গিলতে পারছেন না।

শ্রীবাস চন্দ্র দাস

৭. প্রথম আলোকে সাধুবাদ তাদের এই অবস্থানের জন্য। সত্য প্রকাশের প্রত্যয় অটুট থাকুক। পাঠকদের বিশ্বাসের প্রতি আস্থা আর আকাঙ্ক্ষার প্রতি শ্রদ্ধা রেখে প্রথম আলো সত্য আর মুক্তচিন্তার পক্ষে আরও জোরালো হবে আশা রাখছি। এতে পাঠকের আস্থা যেমন বাড়বে, সেই বাড়তি আস্থা নিঃসন্দেহে প্রথম আলোর সৎসাহসের ভিতকেও দৃঢ় করবে, উত্তরোত্তর দেশে গণতন্ত্রের চর্চা শক্তিশালী হবে। আবারও ধন্যবাদ।

রিয়াজ উদ্দিন

৮. সত্য ও মিথ্যা, ন্যায় ও অন্যায়ের মধ্যে দ্বন্দ্ব চিরাচরিত রূপ। অন্যায় ও মিথ্যা সাময়িকভাবে প্রতিষ্ঠিত হলেও চিরস্থায়ীভাবে তার গ্রহণযোগ্যতা নেই। আমরা পাঠকেরা মনে করি, বাংলাদেশের জনগণ আগের চেয়ে অনেক বেশি সচেতন। তাঁরা সত্য ও অসত্যের মধ্যে পার্থক্য করতে জানেন। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় সব ধরনের সংবাদমাধ্যমের সক্রিয় ভূমিকার পাশাপাশি জাতীয় সংসদের সম্মানিত জনপ্রতিনিধিদের কাছ থেকে জবাবদিহিমূলক আচরণ আশা করি।

মুহাম্মদ জিয়াউর রহমান

[৪ অক্টোবর ২০১০ প্রথম আলোর প্রথম পাতায় প্রকাশিত হয় মতিউর রহমানের মন্তব্য প্রতিবেদন ‘প্রথম আলো সত্য প্রকাশে অবিচল থাকবে’। পত্রিকাটির অনলাইন সংস্করণে অনেক পাঠক বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় প্রতিক্রিয়া পাঠান; সেগুলো থেকে বাছাই করে কিছু প্রতিক্রিয়া এখানে ছাপা হলো।]

ইউনিয়ন পরিষদের সংস্কার জরুরি
একটি কার্যকর, সুশৃঙ্খল ও জবাবদিহিমূলক স্থানীয় সরকারব্যবস্থা একটি দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতির জন্য অনন্য ভূমিকা পালন করতে পারে। স্থানীয় সরকার হতে পারে বিভিন্ন পেশাজীবী মানুষের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উন্নতির মূল কেন্দ্রবিন্দু।
বাংলাদেশে তিন স্তরবিশিষ্ট স্থানীয় সরকারব্যবস্থা বিদ্যমান: জেলা পরিষদ, উপজেলা পরিষদ ও ইউনিয়ন পরিষদ। এর মধ্যে ইউনিয়ন পরিষদের সঙ্গে গ্রামীণ মানুষের সম্পৃক্ততা বেশি। কিন্তু নানা প্রতিবন্ধকতা, অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে ইউনিয়ন পরিষদ জনগণের উন্নয়ন সাধনে প্রত্যাশিত ভূমিকা পালন করতে পারছে না। দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন হচ্ছে না। ফলে ইউনিয়ন পরিষদের কর্মকাণ্ড স্থবির ও অকার্যকর হতে বসেছে। এ ব্যাপারে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া সরকারের আশু করণীয়। ইউনিয়ন পরিষদকে সুষ্ঠু ধারায় প্রবাহিত করতে সরকারকে নতুন নতুন কর্মকৌশল অবলম্বন করতে হবে, তা না হলে এটি কার্যকর হবে না।
এ প্রসঙ্গে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কথা বলা যেতে পারে। সেখানকার ‘গ্রাম পঞ্চায়েত’ ব্যবস্থা অল্প সময়ের মধ্যে ভারতে নজির স্থাপন করেছে। গ্রাম পঞ্চায়েতের বিভিন্ন সেবা ও তথ্য এখন মহল্লা থেকে বাড়ি বাড়ি পৌঁছে যায়। পশ্চিমবঙ্গ সরকার গ্রামীণ স্বাস্থ্য, পুষ্টি, জনসংখ্যা, শিক্ষা, স্যানিটেশন, স্বকর্মসংস্থান, সামাজিক সুরক্ষা ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার মতো বিষয়কে গ্রাম পঞ্চায়েতের কর্মকাণ্ডে খুব সুন্দর ও দক্ষভাবে গেঁথে দিতে পেরেছে। ফলে রাজ্যের অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবস্থা দ্রুত বিকাশের পথে এগিয়ে যাচ্ছে। দুর্নীতি ও অদক্ষ ব্যবস্থাপনার গ্রাম থেকে গ্রাম পঞ্চায়েতকে মুক্ত করতে পশ্চিমবঙ্গ সরকার বাস্তবধর্মী সব পদক্ষেপ নিয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গ সরকার গ্রাম পঞ্চায়েতের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নিয়মিত আবাসিক ও অনাবাসিক বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে থাকে—যাতে প্রতিনিধিরা নিজেদের সংকীর্ণতা পরিহার করে জনগণের সেবায় সর্বোচ্চ নিবেদিত হতে পারেন। বৃহৎ প্রায়োগিক দিক বিবেচনায় রেখে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের প্রশিক্ষণের আওতায় এনে বিশেষজ্ঞদের দ্বারা মনো-সামাজিক কাউন্সেলিং করানো হয়। এসব প্রশিক্ষণ ও বাস্তব জ্ঞান প্রতিনিয়ত তাঁদের কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি ও কর্মস্পৃহা বাড়াতে সাহায্য করছে। এ ছাড়া এ ধরনের প্রশিক্ষণ জনসেবা সম্পর্কে চিরায়ত দৃষ্টিভঙ্গি ও মনোভাব বদলাতে অবদান রাখছে।
আমাদের দেশে এমনটি হলে নিশ্চয়ই ভালো হতো। আশা করি কর্তৃপক্ষ বিষয়টি ভেবে দেখবে।
শেখর দাশ, ২১৯ খান জাহান আলী হল, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা।

শিক্ষার মান বাড়বে কীভাবে
আমাদের বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থার প্রধান সমস্যা হচ্ছে শিক্ষার মান। সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে বিপুলসংখ্যক মেয়ে স্কুলে যাচ্ছে। কিন্তু প্রাথমিক থেকে উচ্চস্তর পর্যন্ত শিক্ষার মান হতাশাজনক।
প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে আছেন এসএসসি থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী শিক্ষক। মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতেও এইচএসসি থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী এবং কলেজগুলোতে সাধারণত স্নাতকোত্তর ছাড়া প্রবেশের নিয়ম নেই। নিন্দুকেরা বলেন, যাঁরা কোথাও চাকরি পান না কিংবা যাঁদের পরীক্ষার ফল ততটা ভালো নয়, তাঁরাই শিক্ষকতায় আসেন। শিক্ষকদের বেতন কম। যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া থেকে একজন একটি জাতীয় দৈনিকে লিখেছেন, তিনি বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের চাকরি ছেড়ে ওই দেশে গিয়ে ‘ক্লিনার’ হয়েছেন এবং আগের চেয়ে নাকি এখন বেশ ভালো আছেন।
শিক্ষার মান বাড়ানোর জন্য সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে চেষ্টার অন্ত নেই। শিক্ষকদের নানা প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে কোটি কোটি টাকা খরচ করে। কিন্তু মান যে খুব বেড়েছে, তার প্রতিফলন নেই। কারণ গোড়ায় গলদ; সরকারি অফিস-আদালতসহ সব জায়গায় এখন মেধাহীন মানুষের ছড়াছড়ি। তাই সমস্যা সমাধানের জন্য প্রয়োজন মেধা ও দক্ষতার মূল্যায়ন। সবচেয়ে সচেতন ও মেধাবীদের বানাতে হবে শিক্ষক। গঠন করতে হবে শিক্ষক নিয়োগ ও বাছাইয়ের জন্য একটি শিক্ষক বাছাই ও নিয়োগ কমিশন। এ কমিশন পাবলিক সার্ভিস কমিশনের মতো কেবল শিক্ষক বাছাই ও নিয়োগের কাজটি করবে। নিয়োগের জন্য চমৎকার ব্যক্তিত্ব ও ফলাফলের অধিকারী ব্যক্তিদের পড়ানোর, লেখা ও লেখানোর দক্ষতা, বোঝানোর, শোনানোর, দেখানোর দক্ষতা যাচাই করে কমপক্ষে এক বছরের ইন্টার্নি সফলতার সঙ্গে সমাপ্তির পর তাঁকে নিয়োগ দেওয়া হবে প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত যেকোনো স্তরে। কিন্তু যেখানেই তিনি শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পান না কেন, তাঁর বেতন স্কেল, সামাজিক মর্যাদা ও মান থাকবে একই এবং একজন শিক্ষক তাঁর যোগ্যতা ও ইচ্ছানুসারে কখনো বিশ্ববিদ্যালয়ে, কলেজে, মাধ্যমিক কিংবা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতে পারবেন। উচ্চশিক্ষিত মেধাবীরা তখনই আসবেন, যখন তাঁদের দেওয়া হবে আকর্ষণীয় সুযোগ-সুবিধা ও মর্যাদা, যেমনটি বর্তমানে চালু আছে বিসিএস (প্রশাসন) বা কূটনৈতিক ক্যাডারের জন্য। তাহলে অবশ্যই মেধাবীরা শিক্ষকতা পেশায় আসবেন; দেশে মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত হবে।
একটি জাতির শিক্ষার ক্ষেত্রে যা ব্যয় করা হয়, তা ফেরত আসে বহুগুণ হয়ে। শিক্ষায় বিনিয়োগ অনেকটা গাছ লাগানোর মতো, যা পরবর্তী সময়ে ফল-ফুল-কাঠ হিসেবে ফেরত আসে। আমাদের শিক্ষার ক্ষেত্রে বিনিয়োগ খুব কম নয়, কিন্তু মানসম্পন্ন শিক্ষকদের জন্য ব্যয়ের চেয়ে ‘অবকাঠামো’ নির্মাণে আমরা বেশি উৎসাহী।
শিক্ষার বর্তমান অবস্থা থেকে উত্তরণের লক্ষে অবশ্যই গুণগত মানসম্পন্ন শিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। সে জন্য মেধাবীদের শিক্ষকতা পেশায় এগিয়ে আসতে উৎসাহিত করা উচিত। যত তাড়াতাড়ি সরকার বিষয়টি বুঝবে, ততই মঙ্গল।
নাবিলা মারজুক। shantamarzuk@gmail.com

পদ্মা সেতু নির্মাণে অংশ নিতে চাই
পদ্মা সেতু বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষের স্বপ্ন। আজ নিজস্ব অর্থের অভাবে পদ্মা সেতু নির্মাণের কাজ পিছিয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে বিদেশি ঋণের বোঝা বেড়েই চলেছে। আমরা স্বাধীন বাংলাদেশের নাগরিক। ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে এ দেশ স্বাধীন হয়েছে। এখন স্বপ্নের সেই সোনার বাংলা গড়ার সময় এসেছে। দেশ গড়তেও বিপ্লবের প্রয়োজন হয়। বিদেশি ঋণ নিতে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়। কঠিন সব শর্ত মাথায় নিয়ে চলতে হয় দেশবাসীকে। দেশ গড়ার কাজ থামিয়ে রাখা যায় না। ধাপে ধাপে এগিয়ে যেতে হয়। দেশের যোগাযোগ অবকাঠামোর উন্নয়ন মানে দেশের উন্নয়ন।
মহান স্বাধীনতাযুদ্ধে আমরা যাঁরা অংশ নিতে পারিনি, আজ সুযোগ এসেছে দেশ গড়ার মহান কাজে অংশ নেওয়ার। আজ এ দেশের ১৬ কোটি মানুষের ৩২ কোটি হাত সক্রিয়ভাবে অংশ নিলে হয়তো পদ্মা সেতুর মতো কয়েকটি বিশাল উন্নয়ন কাজ অনায়াসে সফল করা যাবে।
পদ্মা সেতু নির্মাণের কাজ আমাদের সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময়ে, নিজস্ব অর্থায়নে সফল করা সম্ভব হতে পারে। কিছু লোকের মতামত যাচাই করে দেখেছি, একজন রিকশাচালক বলেন, মহান স্বাধীনতাযুদ্ধে অংশ নিতে পারিনি, এ জন্য মনে বড় দুঃখ। কিন্তু পদ্মা সেতু নির্মাণের মতো কাজে চাঁদা দিয়ে অংশ নিতে পারলে নিজেকে ধন্য মনে করব। অন্য একজন রিকশাওয়ালা বলেন, ৫০০ টাকা আজকাল কিছু না, টাকা যদি সঠিকভাবে খরচ হয়, তাহলে আমিও এক হাজার টাকা দেব। একজন গাড়ি বাম্পার বিক্রয় দোকানের শ্রমিক বলেন, পদ্মা সেতুর মতো মহান উন্নয়নকাজে টাকা দিয়ে অংশ নিতে পারলে নিজেকে কিছুটা ঋণমুক্ত করতে পারতাম। অন্য একজন খাদ্যগুদামের শ্রমিক বলেন, আমি পদ্মা সেতু নির্মাণ প্রকল্পে দুই হাজার টাকা দিলে কোটিপতিরা নিশ্চয়ই লাখ টাকা করে দেবে।
আমরা মনে করি, পদ্মা সেতু নির্মাণ প্রকল্পের অর্থ যথাযথভাবে খরচ করার নিশ্চয়তা দিয়ে একটি ব্যাংকে হিসাব নম্বরে পাঠানোর জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী উদাত্ত আহ্বান জানালে, দেশের ১৬ কোটি লোকের সবাই কমবেশি অর্থ পাঠাবে। স্বাধীনতাযুদ্ধে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে যেমন দেশের মানুষ সাড়া দিয়েছিল, তেমনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে সাড়া দিলে দেশের ১৬ কোটি লোকের পক্ষে সেতু নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ সংগ্রহ করা কঠিন হবে না। তার পরও যদি বিদেশি ঋণের প্রয়োজন হবে, তবে তার পরিমাণ হবে অনেক কম।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সরকারি কর্মকর্তা
মনোহরগঞ্জ, কুমিল্লা।

‘এখানে কোনো বাস থামিবে না’
গত ২৫ সেপ্টেম্বর প্রথম আলোয় এ কে এম জাকারিয়ার ‘এখানে কোনো বাস থামিবে না’ শিরোনামে একটি লেখা পড়লাম। তাঁর বক্তব্যে কয়েকটি দিক নিয়ে কিছু বলা জরুরি মনে করি। তিনি লেখাটা শুরু করেছেন এভাবে: এখানে কোনো বাস স্টপেজ নেই, এখানে কোনো বাস থামিবে না। আদেশক্রমে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ এবং উল্লেখ করেছেন, যাত্রীরা যেখানে নামছেন ও উঠছেন, সেখানে ট্রাফিক পুলিশও চোখে পড়বে। কেউ তা মানুক বা না মানুক, তাতে কী আসে-যায়।
তাঁর এই বক্তব্যের সঙ্গে একটু সংযোজন করতে চাই। শুধু আইন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দিয়ে কারও মধ্যে সচেতনতা আনা সম্ভব নয়। একজন মানুষ যখন সত্যিকারের শিক্ষিত হয়, তখন তাকে কোনো আইনের বেড়াজালে বাঁধতে হয় না। প্রতিটি ক্ষেত্রে তিনি হন দায়িত্বশীল, সচেতন ও সুশৃঙ্খল। দ্বিতীয়ত, ঢাকা শহরে জনসংখ্যার বিস্ফোরণ। আমাদের সবকিছুই ঢাকাকেন্দ্রিক। তাই নদীভাঙন এলাকা, উদ্বাস্তু থেকে শুরু করে ধনী, ব্যবসায়ী, চাকরিজীবী সবাই ঢাকায় থাকতে চায়। আমরা যদি মালয়েশিয়াকে দেখি, তাহলে কিছুটা উদাহরণ নিতে পারি। সে দেশের সব ব্যবসা-বাণিজ্য গড়ে উঠেছে কুয়ালালামপুরকে ঘিরে। আর দ্বিতীয় রাজধানী হলো পুত্রজায়া। প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ পুত্রজায়াকে বাস্তবায়ন করেছিলেন। সেখানে প্রধানমন্ত্রীর অফিস, রাজার অফিস, বড় বড় মসজিদ ও সরকারি বিভিন্ন অফিস। সেখানেই প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন, রাজার বাসভবন এবং সব সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর বাসভবন। নেই কোনো যানজট, কালো ধোঁয়া। সবকিছুই সুশৃঙ্খল। আর আমাদের অফিসে যাওয়া-আসার সময় যে যানজটের মোকাবিলা করতে হয়, তাতে সময় ও প্রাণশক্তি নিঃশেষ হয় প্রতিদিন।
এ কে এম জাকারিয়া লিখেছেন, বিশ্বের যেকোনো দেশে যাঁরা ড্রাইভিং শিখেছেন, তাঁদের রোড সাইন শেখানো হয়। এটা পৃথিবীর উন্নত দেশেই শুধু নয়, আমাদের দেশেও ড্রাইভিং লাইসেন্স করতে হলে ড্রাইভিং টেস্ট নেওয়া হয়, ড্রাইভিং সাইনের ওপর পরীক্ষা দিতে হয় এবং মোটরযান বিধিমালা, ১৯৮৪ বিধি-১০ অনুযায়ী, ট্রাফিক লাইসেন্স করতে হলে অবশ্যই লাইসেন্সধারীকে বাংলা বা ইংরেজি লিখতে ও পড়তে জানতে হয়। কিন্তু ঢাকা শহরে বহু চালক আছেন, যাঁরা নিজের নামটাই স্বাক্ষর করতে জানেন না। তার পরও তাঁরা ড্রাইভিং লাইসেন্স পাচ্ছেন এবং ভুয়া ড্রাইভিং লাইসেন্স বানাচ্ছেন। আর ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়া অনেক হেলপার গাড়ি চালান। এঁরা সড়ক দুর্ঘটনার একটা বড় কারণ। এঁদের কারণে আমাদের হারাতে হয় শিশু হামিমকে; সোনিয়া, ফারজানা, মোস্তাফিজুর ও আরিফুলের মতো মেধাবী ছাত্রছাত্রীকে।
এ কে এম জাকারিয়া লিখেছেন, বাস-মিনিবাসগুলো চলতে চলতে রাস্তা থেকে যাত্রী তুলতেই বেশি আগ্রহী। তারা এ কাজটি করতে পারে। কারণ বাসগুলোতে ওঠার পথে দরজা লাগানোর ব্যবস্থা নেই। আসলে দরজা লাগানোটাই মুখ্য বিষয় নয়। মুখ্য বিষয়, আমাদের অবকাঠামো ও ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের অভাব। উন্নত দেশে পাবলিক বাস অথবা মিনিবাস অত্যন্ত উন্নত। যখন একটি বাসে উঠবেন, কয়েন বা টাকা দেবেন বাক্সের মধ্যে, অটোমেটিক রসিদ বেরিয়ে আসবে। যাত্রী ওঠানো-নামানো শেষ হলে বোতাম টিপলেই দরজা বন্ধ হয়ে যাবে। শুধু দরজা লাগিয়েই সমস্যা সমাধান করা যাবে না। এ জন্য প্রয়োজন লাইন ধরে দাঁড়ানোর মানসিকতা, ধৈর্য ও সহিষ্ণুতা।
লেখক উল্লেখ করেছেন, ডিএমপির লেন কার্যক্রম ব্যর্থ হয়েছে। কিন্তু ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের এ উদ্যোগটি ভালো ছিল। লেন মেনে গাড়ি চলাচল করবে, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু আমাদের দেশে তা বাস্তবায়ন হচ্ছে না। কারণ ঢাকা শহরে যানবাহনের তুলনায় রাস্তার সংখ্যা, সুপরিসর রাস্তা আছে খুবই কম। প্রতিদিনই নতুন নতুন গাড়ি নামছে। আর অধিকাংশ রাস্তার অর্ধেকটা দখল করে আছে অবৈধ পার্কিং ও অবৈধ হকাররা। এ শহরে যেকোনো স্থানে, যেকোনো রাস্তার পাশে গড়ে উঠছে বিশাল হাসপাতাল, বিপণিকেন্দ্র, বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো বিরাট বিরাট প্রতিষ্ঠান, যেখানে প্রচুরসংখ্যক মানুষ ও যানবাহন চলাচল করতে হয়। সেগুলো নির্মিত হচ্ছে পার্কিং ব্যবস্থা ছাড়াই। ফলে রাস্তার দুই ধারে বিচ্ছিন্নভাবে রাখা হচ্ছে গাড়ি।
লেখক উল্লেখ করেছেন, বাস স্টপেজ ছাড়া বাসের দরজা খোলা যাবে না—এই বিধান কার্যকর করা গেলে অন্তত যেখানে-সেখানে যাত্রী ওঠানো-নামানো বন্ধ করা যাবে। বাস স্টপেজ ছাড়া বাসের দরজা খোলা যাবে না—এই বিধান চালু হলে তা কার্যকর করতে হবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে। ঢাকা শহরের প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ মোটরযান সামাল দিতে হয় ডিএমপির মাত্র ৩০০ ট্রাফিক সার্জেন্টকে দিয়ে, যেখানে প্রয়োজন এক হাজার ২০০ ট্রাফিক সার্জেন্ট। এ জন্য আমাদের প্রয়োজন প্রযুক্তি ও অবকাঠামোর উন্নয়ন।
সীমা পারভীন, ঢাকা।

No comments

Powered by Blogger.