বন্ধের নীতিমালা মানা না-মানা নিয়ে সংশয়-কোচিং-বাণিজ্য

কোচিং-বাণিজ্য বন্ধের দিকনির্দেশনাটি সরকারের নির্বাহী বিভাগ থেকে আসেনি, এসেছে অভিভাবক ফোরামের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে উচ্চতর আদালত থেকে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় আদালতের নির্দেশ মান্য করে কোচিং বন্ধ করতে একটি নীতিমালা চূড়ান্ত করেছে। এ জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় ধন্যবাদ পেতে পারে।


কিন্তু কথায় বলে, ‘বৃক্ষ তোমার নাম কী? ফলে পরিচয়’। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রণীত নীতিমালা নিয়ে ইতিমধ্যে যেসব প্রশ্ন উঠেছে, তার সদুত্তর খুঁজে বের করতে হবে এই মন্ত্রণালয়কেই।
নীতিমালায় বলা হয়েছে, কোনো শিক্ষক ক্লাসের বাইরে নিজ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কোচিং দিতে পারবেন না। তবে তিনি অন্য বিদ্যালয়ের অনধিক ১০ জন শিক্ষার্থীকে বাসায় পড়াতে পারবেন। বাসার বাইরে কোনো কোচিং সেন্টারে পড়াতে পারবেন না। আবার একই সঙ্গে নীতিমালায় বলা আছে, বিদ্যালয়ের যেসব শিক্ষার্থী পড়াশোনায় দুর্বল, তারা ক্লাসের নির্ধারিত সময়ের আগে বা পরে নির্ধারিত ফির বিনিময়ে ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষকের কাছে পড়তে পারবেন। এ জন্য শিক্ষার্থীদের প্রতি বিষয়ের জন্য মহানগরে মাসে ৩০০ টাকা, জেলা শহরে ২০০ টাকা এবং উপজেলা শহরে ১৫০ টাকা দিতে হবে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এই নীতিমালায় স্ববিরোধিতা লক্ষণীয়। নিজ বিদ্যালয়ের দুর্বল শিক্ষার্থীরা যদি বাড়তি ফি দিয়ে পড়ার সুযোগ পায় তাহলে তারা অন্য বিদ্যালয়ের শিক্ষকের কাছে পড়বে? দ্বিতীয় প্রশ্ন হলো, বাসায় অন্য বিদ্যালয়ের ১০ জন পড়ানোর যে বাধ্যবাধকতা নীতিমালায় আছে, সেটি মানা না-মানার বিষয়টি তদারক করবে কে? তদারকির কাজে প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের নেতৃত্বে যেসব কমিটি গঠনের কথা বলা হয়েছে, তা কোনো কাজে দেবে না। বরং শিক্ষক, অভিভাবক ও স্থানীয় শিক্ষানুরাগীদের নিয়ে এ ধরনের তদারকি কমিটি করলে কিছুটা ফল পাওয়া যেতে পারে।
আমাদের স্পষ্ট বক্তব্য, নীতিমালায় বর্ণিত ‘সীমিত কোচিং’-ব্যবস্থাও পর্যায়ক্রমে তুলে নিতে হবে। এ ব্যাপারে আইনি কড়াকড়ির পাশাপাশি অভিভাবকসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে সম্পৃক্ত করতে হবে। সেই সঙ্গে শিক্ষাব্যবস্থার মৌলিক দুর্বলতাগুলো চিহ্নিত করে এর প্রতিকারের ব্যবস্থা নিন। পরীক্ষা পদ্ধতিতে এত সব পরিবর্তন আনার পরও নোট ও গাইড বই বন্ধ করা গেল না কেন?
একজন শিক্ষার্থীর কখন ক্লাসের বাইরে কোচিংয়ের প্রয়োজন হয়? যদি বিদ্যালয়ে নিয়মিত ক্লাস হয় এবং পাঠ্যবইয়ের প্রতি তাকে আগ্রহী করা যায়, তাহলে কোচিংয়ের প্রয়োজন হয় না। স্বীকার করতে হবে, আমাদের শিক্ষকদের বেতন-ভাতা তুলনামূলক কম বলেই তাঁরা বাড়তি আয়ের জন্য কোচিং করান কিংবা নোট বই লেখেন। যদি তিনি সংসার চালানোর মতো ন্যূনতম বেতন-ভাতা পান, তাহলে কোচিং করাতে তেমন আগ্রহী হবেন না।
সব শেষে বলব, দেশে অনেক ভালো ভালো আইন ও নীতিমালা হয়ে থাকে। কিন্তু তা বাস্তবায়িত হয় না। সময়ের ব্যবধানে এসব আইন ও নীতিমালার ওপর ধুলার স্তর জমে। কোচিং বন্ধ করতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রণীত নীতিমালার ভাগ্যেও তা ঘটবে না বলে আশা করি।

No comments

Powered by Blogger.