ব্লগের শব্দ ব্লগের কথা-অশ্লীলতা থেকে দূরে থাকুক

তথ্য জানার পাশাপাশি তথ্য পরিবেশনেরও বড় একটি মাধ্যম ব্লগিং। জনপ্রিয়তার একেকটি ধাপ পেরিয়ে বাংলা ব্লগিং এখন বিশাল জায়গা করে নিতে সক্ষম হয়েছে। বিশেষ করে দেশের শিক্ষিত তরুণদের বড় একটি অংশ আকৃষ্ট হয়েছে এই মাধ্যমে। নিয়ন্ত্রণহীন হওয়ার কারণে যে কেউ মনের ভাব প্রকাশের অফুরন্ত স্বাধীনতা পেয়ে থাকে এখানে।


এই অবাধ স্বাধীনতা কখনো ব্লগিংকে নেতিবাচক প্রভাবে প্রভাবিত করে থাকে। বলা হয়, ব্লগাররা অশ্লীলতাকে প্রাধান্য দেয়। ব্যক্তিগত আক্রমণ চলে ইচ্ছেমতো। রাজনৈতিক বক্তব্য উপস্থাপনকালে এমনও দেখা যায়, রাষ্ট্রদ্রোহমূলক বক্তব্যও সেখানে স্থান পেয়ে যাচ্ছে। ব্যবহৃত ভাষা নিয়ে ব্লগারদের মধ্যেই তুমুল তর্ক-বিতর্ক হতে দেখা যায়। বিতর্ক হয় প্রমিত ভাষা ব্যবহার না করে সেখানে ব্লগারের ইচ্ছামাফিক শব্দ প্রয়োগ করাকে কেন্দ্র করেও। এ অবস্থাকে কেউ কেউ বাংলা ভাষার জন্য ক্ষতিকর বলে মনে করেন। অন্যদিকে এই ধারা ব্লগিংকে অধিকতর জনমুখী করার পদ্ধতি হিসেবেও গণ্য করেন। ভাষার ইচ্ছামাফিক প্রয়োগকে ভালো কিংবা মন্দ বলার পক্ষে যুক্তি উপস্থাপনও হয় ব্লগের মাধ্যমে। আমরা সাহিত্য ক্ষেত্রে ভাষার প্রয়োগ নিয়ে নানা বিবর্তন লক্ষ করি, তেমনি নতুন এই মাধ্যমেও ভাষার প্রয়োগে বিবর্তন হতে পারে। আজকে নতুন প্রজন্ম আঞ্চলিক শব্দমালা ব্যবহার করছে কিংবা একান্তই নিজে কোনো শব্দ হয়তো তৈরি করে তা প্রয়োগ করছে। এগুলোকে বিকৃতির দায়ে অভিযুক্ত না করে ভাব প্রকাশের বিকল্প ধারা হিসেবে গণ্য করা যায়। একসময় সাহিত্য ক্ষেত্রে আমরা দেখেছি সাধু ভাষাকে একমাত্র সাহিত্যচর্চার মাধ্যম হতে। এমনকি পত্রপত্রিকাগুলোও সাধু ভাষা ছাড়া চলতে পারত না। হালে সেই রীতির পরিবর্তন হয়েছে। একবারেই সাধারণ মানুষের মুখের ভাষা চলে এসেছে সাহিত্য ও তথ্য পরিবেশনের ক্ষেত্রে। তেমনি ব্লগাররাও হয়তো মুখের ভাষাকে ব্লগিং মাধ্যমে প্রকাশের প্রয়াস পেয়েছেন। প্রশ্ন হচ্ছে, যিনি ব্লগটি পড়লেন তিনি তাকে কিভাবে গ্রহণ করবেন? তিনি ব্লগারের ভাষার সঙ্গে যদি পরিচিত হন, তিনি যদি সেই ভাষাকে গ্রহণযোগ্য বলে মনে করেন, তাহলে হয়তো ব্লগারের চেষ্টা সফল হবে। তা না হলে এই প্রচেষ্টা নিজ থেকেই ব্যর্থ হয়ে যাবে। কিন্তু ব্লগার যখন অবাধ স্বাধীনতার সুবাদে অশ্লীলতাকে প্রশ্রয় দিয়ে থাকেন তখন সংগত কারণেই সেখানে সেন্সর থাকা উচিত। কোনো কোনো ব্লগ সাইটে মডারেটর তা নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন। যেহেতু ব্লগ সাইটগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করার কোনো ব্যবস্থা নেই, তাদের জন্য কোনো সরকারি নীতিমালাও নেই, তাই সাইটগুলো নিজস্ব পথেই চলছে। ব্লগ নিয়ে নেতিবাচক বক্তব্য শোনা গেলেও সেখানে তরুণ প্রজন্মের একটি অংশ অত্যন্ত শক্তিমত্তারও পরিচয় দিচ্ছে। সাহিত্য থেকে রাজনীতি হেন বিষয় নেই যেখানে আলোচনায় আসে না। উদ্বুদ্ধকরণের ক্ষেত্রেও এই ব্লগ সাইটগুলো বেশ ভূমিকা রেখে চলেছে। সামাজিক প্রতিবন্ধকতা দূর করার জন্য তরুণ সমাজের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার প্রচেষ্টা প্রায়ই লক্ষ করা যায় ব্লগিংকে কেন্দ্র করে। এই মাধ্যমটি যাতে অবাধ স্বাধীনতার নামে ক্ষতিকর কিছু না করে কিংবা অপরের আত্মসম্মানে আঘাত না করে, অরুচিকর কিছু না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখার জন্য কিছুটা তদারকির ব্যবস্থা করতে হবে। বিটিআরসি শুধু অভিযোগ পেলেই ব্যবস্থা নেবে বলে সংবাদে প্রকাশ হয়েছে। এটা যৌক্তিক নয়। মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে সরকারকেই।

No comments

Powered by Blogger.