লাদেন হত্যাকাণ্ড-স্বস্তির বিশ্ব চাই

আল কায়দা নেতা ওসামা বিন লাদেন পাকিস্তানের এবোটাবাদ এলাকায় যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক অভিযানে নিহত হয়েছেন। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী পরিচালিত অভিযানের ধারাবাহিকতায় এটা যুক্তরাষ্ট্রের কাছে 'ঐতিহাসিক বিজয়' হিসেবেই বিবেচিত হবে। বিশ্বের সর্বত্র শান্তি ও স্বস্তির পরিবেশ এর প্রভাবে উন্নত হবে, এমনই প্রত্যাশা।


রোববার টেলিভিশন ভাষণে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বলেছেন, এ অভিযানের ফলে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তিনি নিজের সামরিক অভিযানের সপক্ষে যুক্তি দেখাবেন এটা স্বাভাবিক। তবে তার বক্তব্যের আরেকটি অংশ খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। তিনি বলেছেন, 'যুক্তরাষ্ট্র ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে না এবং করবেও না।' প্রকৃতপক্ষে ওসামা বিন লাদেন এবং তার গড়ে তোলা সংগঠন আল কায়দা সন্ত্রাসের সমার্থক হয়ে উঠেছিল। ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের টুইন টাওয়ারে ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসী হামলাই শুধু নয়, বিশ্বের কয়েকটি দেশে মার্কিন ও পশ্চিমা স্বার্থের ওপর আত্মঘাতী অভিযানের সঙ্গে আল কায়দা সরাসরি জড়িত বলে অভিযোগ ওঠে। এসব সশস্ত্র কর্মকাণ্ডের সপক্ষে যুক্তি হিসেবে ওসামা বিন লাদেন এবং তার অনুসারীরা পবিত্র ইসলাম ধর্ম রক্ষার যুক্তি দেখাতে থাকলে বিশ্বের সর্বত্র শান্তির এ ধর্ম সম্পর্কে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হতে থাকে। এমনকি শুভবুদ্ধিসম্পন্ন অনেক মানুষের কাছে ইসলাম ধর্ম ও সন্ত্রাসবাদ যেন সমার্থক বিবেচিত হয়। বারাক ওবামা তার ভাষণে যথার্থই বলেছেন, ওসামা বিন লাদেন অনেক দেশেই বিপুলসংখ্যক মুসলমানকে হত্যার জন্য দায়ী। বাংলাদেশের অভিজ্ঞতাও এ ক্ষেত্রে আমরা বিবেচনায় নিতে পারি। এখানে পবিত্র ইসলাম ধর্মের একটি বিকৃত ব্যাখ্যা উপস্থিত করে কিছু লোক গণতন্ত্র ও মানবিক মূল্যবোধের বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করে। তারা সংবিধান ও বিচারব্যবস্থাকে অস্বীকার করার জন্য প্রচার চালায় এবং নিজেদের লক্ষ্য অর্জনের জন্য দেশের নানা স্থানে বোমা-গ্রেনেড হামলা পরিচালনা করতে থাকে। এর ফলে সর্বত্র চরম নিরাপত্তাহীন পরিবেশ সৃষ্টি হয়। হতাহত হয় অনেক নারী-পুরুষ-শিশু। তবে দেশের ধর্মপ্রাণ জনগণ ধর্মান্ধ গোষ্ঠীর এ ধরনের বিকৃত মতবাদ আদৌ গ্রহণ করেনি। তারা বুঝতে পারে, ইসলামের নামে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনাকারীরা প্রকৃতপক্ষে শান্তি ও সহনশীলতার এ ধর্মেরই বড় শত্রু। সম্প্রতি মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশের জনগণ গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ের দাবিতে সোচ্চার হয়েছে এবং লক্ষণীয় সাফল্যও অর্জিত হচ্ছে। কিন্তু কোথাও আল কায়দা কিংবা এ ধরনের সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর মতবাদ জনসমর্থন পাচ্ছে না। এটা সুলক্ষণ। তবে এটাও মনে রাখতে হবে যে ইসরায়েল কর্তৃক ফিলিস্তিনি ভূমি জবরদখল করে রাখা এবং যুক্তরাষ্ট্র ও পাশ্চাত্যের কোনো কোনো দেশের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সমর্থনের কারণে মুসলিম জনগোষ্ঠীসহ বিশ্বের সর্বত্রই তার প্রতি ক্ষোভ রয়েছে। আফগানিস্তান এবং ইরাকে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন বহুজাতিক সামরিক অভিযানের বিরুদ্ধেও জনমত প্রবল। ওসামা বিন লাদেন যা করেছেন তা কোনো বিবেচনাতেই সমর্থনযোগ্য নয়। কিন্তু পাশ্চাতের দেশগুলো ভুল থেকে শিক্ষা গ্রহণ না করলে মানুষকে বিভ্রান্ত করার অবকাশ থেকেই যাবে। বারাক ওবামা এবং তার মিত্ররা ওসামা বিন লাদেনের মৃত্যুতে বিশ্বজুড়ে 'বড় ধরনের স্বস্তি' আসবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। এটা নিশ্চিত করায় তাদের আরও যেসব করণীয় রয়েছে সেটা বিস্মৃত হলে চলবে না।
 

No comments

Powered by Blogger.