বিশুদ্ধ পানির নিশ্চয়তা by আরিফুল ইসলাম

পানির অপর নাম জীবন। পরিবেশ দূষণের কারণে সারা পৃথিবীতে বিশুদ্ধ পানির সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। বিশেষ করে এশিয়া ও আফ্রিকার দেশগুলোতে এ সমস্যা আরও প্রকট। বর্তমানে দূষিত পানির কারণে বিশ্বে প্রতিদিন মারা যায় প্রায় তিন হাজার শিশু।


যদিও ২০১০ সালে জাতিসংঘের আরেক ঘোষণায় বিশুদ্ধ পানির অধিকারকে মানবাধিকার হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। তবু এখনও বিশ্বে প্রায় ১১ শতাংশ মানুষের জন্য বিশুদ্ধ পানি নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। বাংলাদেশেও জনজীবনের সর্বস্তরে বিশুদ্ধ পানির খুবই সংকট। রাজধানী ঢাকায় বিপুলসংখ্যক বস্তিবাসীকে বাঁচার তাগিদে বাধ্য হয়ে পানি সরবরাহের ওপর নির্ভর করতে হয়। কিন্তু পাইপ দিয়ে দুর্গন্ধময় নোংরা পানি ও বর্জ্য আসছে। অনেক ক্ষেত্রে পাইপে ছিদ্র হয়েও এমনটি হয়ে থাকে। সাধারণত গ্রীষ্মকালে অবস্থার আরও অবনতি ঘটে। দূষিত পানি পান করে মানুষ কলেরা, ডায়রিয়া, টাইফয়েড, জন্ডিস, চর্মরোগ প্রভৃতি নানা ধরনের অসুখ-বিসুখে আক্রান্ত হচ্ছে। অথচ নদীমাতৃক বাংলাদেশে বিশুদ্ধ পানির এমন সংকট অনাকাঙ্ক্ষিত। আমাদেরই অসচেতনতার কারণে এখন দেশব্যাপী বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থাপনায় গভীর অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে। সমন্বিত পরিকল্পনার মাধ্যমে বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষের কাছে দূষণমুক্ত পানি পেঁৗছে দেওয়া অসম্ভব কিছু নয়। বাংলাদেশে দূষণরোধে প্রতিটি কলকারখানায় বাধ্যতামূলকভাবে 'এফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট পল্গান্ট' (ইটিপি) স্থাপন করতে হবে। দেশের ছোটবড় সব শিল্প-কারখানার মালিককে এমন একটি সুস্পষ্ট নিয়মের আওতায় নিয়ে আসা দরকার, যাতে সবাই স্বেচ্ছায় ও স্বতঃস্ফূর্তভাবে ইটিপি স্থাপন করেন। ওয়াসাকে আরও দায়িত্বশীল হতে হবে। এ জন্য ওয়াসার আধুনিকায়ন ও লোকবল বৃদ্ধি করা জরুরি। সুস্বাস্থ্যের জন্য নির্মল পানির কোনো বিকল্প নেই। বাংলাদেশের বিপুলসংখ্যক দরিদ্র সাধারণ মানুষকে বিশুদ্ধ পানির বিষয়ে সচেতন করা দরকার। মানুষ যাতে শিশু বয়স থেকে দূষণমুক্ত পানির বিষয়ে সচেতন হয় সে লক্ষ্যে প্রথম শ্রেণী থেকে পাঠ্যপুস্তকে 'বিশুদ্ধ পানি ও সুস্বাস্থ্য' বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা দরকার।
রাজধানী ঢাকাসহ দেশের শহরাঞ্চলে বেশিরভাগ খাবার পানি সংগ্রহ করা হয় ভূগর্ভ থেকে। ঢাকার পানীয়জলের ৮০ শতাংশের মূল উৎস ভূগর্ভস্থ পানি। অথচ এ অবস্থা বেশিদিন চলতে পারে না। এর ফলে ঢাকার ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ক্রমেই নিচে নেমে যাচ্ছে। ফলে নগরীতে পরিবেশগত বিপর্যয়ের আশঙ্কা রয়েছে। নগরের নানা অঞ্চলে যে কোনো সময় বহুতল ভবনসহ মাটি দেবে যেতে পারে। তাই বিশুদ্ধ পানির সরবরাহ নিশ্চিত করতে আমাদের নদীর পানির ওপর নির্ভর করা উচিত। ঢাকার চারপাশে যে চারটি নদী আছে তা সহজেই হতে পারে রাজধানীর খাবার পানির প্রধান উৎস। কিন্তু চারটি নদীর পানিই দূষিত। তাই বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, শীতলক্ষ্যা ও বালু নদীর পানি দূষণমুক্ত করার লক্ষ্যে সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা নেওয়া দরকার।
ৎ শিক্ষার্থী, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ময়মনসিংহ
 

No comments

Powered by Blogger.