সুন্দরবন ও জলবায়ু পরিবর্তন-দুর্নীতিমুক্ত ব্যবস্থাপনা চাই

অনন্য প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যে সমুজ্জ্বল বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল সুন্দরবন। রয়েল বেঙ্গল টাইগারসহ বিভিন্ন বিশেষ প্রাণসম্পদে সমৃদ্ধ এ বন। শুধু প্রাণসম্পদের জন্যই নয়, উপকূলীয় অঞ্চলের বনাঞ্চল হিসেবে এ বনের রয়েছে বিশেষ গুরুত্ব। এসব কারণে সুন্দরবন এখন বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ।


এ বন রক্ষার জন্য, মানুষের সামনে এ বনের গুরুত্ব তুলে ধরার জন্য বিশেষ বৈশ্বিক উদ্যোগ সক্রিয় আছে। সুন্দরবনের এ বৃহত্তর তাৎপর্য বাংলাদেশ অনুভব করে। কিন্তু বাংলাদেশের জন্য এ বন শুধু প্রাণসম্পদের আকর নয়, নয় প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যের জন্য পর্যটক আকৃষ্ট করার কেন্দ্রও। সুন্দরবন বাংলাদেশের জীবন-মরণের সঙ্গে জড়িয়ে আছে। বলা হয়ে থাকে, এ বন আমাদের রক্ষাকবচ। কথাটি বিশেষজ্ঞ মহলে বেশ পরিচিত হলেও সাধারণ্যে তেমন চর্চিত নয়। কিন্তু সত্য হলো, বঙ্গোপসাগরে উদ্ভূত সাইক্লোন, জলোচ্ছ্বাসের হাত থেকে বাংলাদেশের মূল ভূমিকে রক্ষার ক্ষেত্রে এ বনের বিশেষ ভূমিকা আছে। বহু বছর ধরে জলোচ্ছ্বাস ও সাইক্লোনের মতো ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ পিঠ পেতে নিয়ে এ বনই আমাদের রক্ষা করে চলেছে। সুন্দরবন যদি না থাকত তবে প্রাকৃতিক দুর্যোগে আমাদের আরও বেশি ক্ষতি হতে পারত। প্রাকৃতিক দুর্যোগের ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ ক্ষতি সুন্দরবনই কমিয়ে দেয়। বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে তাই এ বনের গুরুত্ব আরও বেশি করে অনুভূত হচ্ছে। দুর্যোগের প্রকোপ সামনের দিনগুলোতে আরও বেশি হবে বলে অনেকে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন। এ অবস্থায় সুন্দরবনের সবুজ বেষ্টনী রক্ষার প্রয়োজন অনেক বেশি। কিন্তু দুর্নীতিগ্রস্ত প্রশাসন ও বন-ব্যবস্থাপনার কারণে এ বনে ব্যাপক বৃক্ষনিধন চলছে। ইতিমধ্যে বনের বহু অঞ্চল স্বার্থান্বেষী ও লোভী মানুষের মুনাফার শিকার হয়েছে। এর মাধ্যমে সুন্দরবন ও এর প্রাণসম্পদই শুধু নয়, বাংলাদেশও ঝুঁকির মধ্যে পড়ছে। তাই নানা মহল থেকে বৃক্ষসহ সুন্দরবনের প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষার তাগিদ অনুভূত হচ্ছে। এবার ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের জলবায়ু সংক্রান্ত বৈশ্বিক প্রতিবেদনেও একই তাগিদ এলো। আমরা মনে করি, এ রিপোর্ট আমলে নিয়ে দুর্নীতিমুক্ত সুন্দরবন ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠার জন্য দায়িত্বশীল মহলগুলো তৎপর হবে। বন রক্ষার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ রক্ষার প্রস্তুতি নেওয়া হবে। শুধু সুন্দরবন বিষয়েই সচেতনতা নয়, জলবায়ু পরিবর্তনের সার্বিক প্রভাব মোকাবেলা করতে আমাদের দুর্নীতিমুক্ত ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠা করতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলা করার জন্য যে ফান্ড ভবিষ্যতে ব্যবহার করা হবে সে বিষয়ে সঠিক কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করা দরকার।
 

No comments

Powered by Blogger.