সমকালীন প্রসঙ্গ-আইএমএফের সোনায় আরও সোনা, নদীতেও অঢেল সোনা by অজয় দাশগুপ্ত

লেখার শুরুতে উল্লেখ করেছি বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বর্ণ ক্রয়ের ঘটনা। এ সিদ্ধান্ত যেমন স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদে বাংলাদেশকে লাভবান করেছে, নদীর জন্য বিনিয়োগও তেমনই ডিভিডেন্ড বা লাভ নিয়ে আসবে। সড়কপথে যাত্রা যত দ্রুতগামীই হোক না কেন, নদীপথের প্রয়োজন রয়েছে বাংলাদেশে


বাংলাদেশ ব্যাংক ২০১০ সালের সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম দিকে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে ১০ মেট্রিক টন সোনা কিনেছিল। এজন্য ব্যয় পড়েছিল ৪০ কোটি ৩০ লাখ ডলার। সে সময়ে কেউ কেউ মন্তব্য করেছিল, প্রতি আউন্স ১২৫২ মার্কিন ডলার দামে কেনা এ সোনার দাম একটু বেশিই পড়েছে। কিন্তু বছর শেষ হওয়ার আগেই প্রমাণ হয়েছে, এ সিদ্ধান্ত ছিল সঠিক ও সুদূরপ্রসারী। প্রকৃত অর্থেই স্বর্ণপ্রসবা। ২৮ এপ্রিল বিশ্ববাজারে প্রতি আউন্স সোনার দাম ছিল ১৫৩৭ মার্কিন ডলার। অর্থাৎ মাত্র আট মাসে প্রতি আউন্স সোনা থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক লাভ করেছে ২৮৫ ডলার। আমাদের মুদ্রায় হিসাব কষলে দশ টনে লাভ করেছে প্রায় সাড়ে সাতশ' কোটি টাকা। চলতি ২০১১ সাল শেষ না হতেই প্রতি আউন্স সোনার দাম ১৬শ' ডলারে উঠবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এখন আফসোস হতেই পারে, আরও কয়েক টন সোনা যদি কিনে রাখা যেত!
শুক্রবার স্পিডবোটে পদ্মা নদী অতিক্রম করেছি। সফরসঙ্গী নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব আবদুল মান্নান হাওলাদার এবং পরিচালক অর্থ ফিরোজ আহমদ। মাত্র ২৫ মিনিটের যাত্রায় আমরা প্রমত্ত এ নদীর ঢেউয়ে আন্দোলিত হয়েছি, কখনও পেয়েছে শঙ্কা। বিপরীত দিক থেকে আমাদের অতিক্রম করে গেল ভাষাশহীদ আবদুল বরকত ফেরিটি। আগের দিন এ ফেরিতেই বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে বাংলাদেশের ১২০ কোটি ডলারের ঐতিহাসিক ঋণচুক্তি সই হয়েছে, যা দিয়ে এ নদীতে নির্মিত হবে ৬ কিলোমিটার ১৫০ মিটার লম্বা পদ্মা সড়ক ও রেল সেতু। এ সেতু চালু হলে মাত্র সাত-আট মিনিটেই গাড়ি চলে যাবে এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে। তখন কি এ নদীর প্রয়োজন ফুরিয়ে যাবে? নদীতে থাকা অবস্থাতেই এ প্রশ্ন জেগেছে মনে। আমরা স্পিডবোটে যে পথ অতিক্রম করেছি ২৫ মিনিটে, ফেরিতে প্রয়োজন পড়ে দুই থেকে তিন ঘণ্টা। আমরা যাচ্ছিলাম বরিশালের গৌরনদীতে। সেখানে সাহেবচর এলাকায় আয়োজন হয়েছে পালরদী নদী খনন কাজ উদ্বোধনের। ২০০৮ সালে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের অধীন বিআইডবি্লউটিএ নদীটি খননের কাজ শুরু করেছিল। তবে অর্থাভাব ও অন্যান্য কারণে কাজ বেশি দূর অগ্রসর হয়নি। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, গৌরনদী থেকে সড়কপথে (আরিচা ও মাওয়ার ফেরিতে যথেষ্ট সময় ব্যয় হওয়ার পরও) যেখানে মাত্র পাঁচ ঘণ্টার মধেই ঢাকা আসা যায় এবং পদ্মায় সেতু হলে সে সময় কমে তিন ঘণ্টায় দাঁড়াবে_ সে অবস্থায় ঢাকা-টরকী লঞ্চ চলাচল সহজ করার জন্য কোটি কোটি টাকা ব্যয়ের কী দরকার?
এ প্রসঙ্গেই লেখার শুরুতে উল্লেখ করেছি বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বর্ণ ক্রয়ের ঘটনা। এ সিদ্ধান্ত যেমন স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদে বাংলাদেশকে লাভবান করেছে, নদীর জন্য বিনিয়োগও তেমনই ডিভিডেন্ড বা লাভ নিয়ে আসবে। সড়কপথে যাত্রা যত দ্রুতগামীই হোক না কেন, নদীপথের প্রয়োজন রয়েছে বাংলাদেশে। সাহেবচরে নদী খনন কর্মসূচির অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে গৌরনদী-আগৈলঝাড়া আসনে জাতীয় সংসদ সদস্য তালুকদার মোহাম্মদ ইউনুস এবং নৌপরিবহন সচিব আবদুল মান্নান হাওলাদার বলেন_ কৃষি কাজ, পরিবেশ রক্ষা, মাছ চাষ ও নৌ চলাচল প্রভৃতি নানা প্রয়োজনে চাই স্রোতস্বিনী নদী। বরিশালের জেলা প্রশাসক এসএম আরিফুর রহমান বলেন, নদীতে স্রোত জীবনেও স্রোত আনে।
বরিশাল শহর যে কীর্তনখোলার তীরে গড়ে উঠেছে তাতে পলি পড়ে ভরাট হয়ে যাওয়ার ঘটনাও তিনি উল্লেখ করেন এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। বর্তমানে ঢাকা-বরিশাল, ঢাকা-পটুয়াখালী, ঢাকা-ভোলা, ঢাকা-ঝালকাঠি, ঢাকা-বরগুনা, ঢাকা-হুলারহাট প্রভৃতি রুটে অনেকগুলো ত্রিতল যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচল করে। প্রতিটিতে থাকে হাজারের বেশি যাত্রী। এর একটি লঞ্চের যাত্রী বহনের জন্য প্রয়োজন পড়ে ২০-২৫টি বাসের। বিলাসবহুল হলে দরকার হয় আরও বেশি বাস। আবদুল মান্নান হাওলাদার হিসাব দিলেন এভাবে : মালপত্র পরিবহনের জন্য সড়কপথে প্রতি কিলোমিটারে ব্যয় পড়ে সাড়ে চার টাকা, রেলপথে আড়াই টাকা এবং নৌপথে মাত্র ৯৮ পয়সা।
তাহলে কেন নৌপথ আমরা উপেক্ষা করব। সড়কপথ আমাদের নির্মাণ করতে হয় যথেষ্ট অর্থ ব্যয় করে এবং এজন্য মূল্যবান জমির ব্যবহার হয়। রেলপথে জমি চাই, নির্মাণ ব্যয়ও বেশি। কিন্তু নদীপথ প্রকৃতির অপার দান। আমাদের প্রয়োজন মাঝে মধ্যে তা রক্ষণাবেক্ষণ করা অর্থাৎ ড্রেজিং। এ কাজে যথেষ্ট ঘাটতি ছিল বিভিন্ন সময়ে। আর এ কারণেই এক সময়ের ২৪ হাজার কিলোমিটার নৌপথ এখন কমে এসেছে মাত্র ছয় হাজার কিলোমিটারে। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব জানালেন, সরকারের লক্ষ্য হচ্ছে অন্তত ১২ হাজার কিলোমিটার নৌপথ সৃষ্টি। পালরদী নদী খনন তারই অংশ।
কিন্তু এ কাজ সহজ নয়। বছরের পর বছর আমরা কেবল 'ফারাক্কা বাঁধকে' আমাদের নদ-নদী শুকিয়ে যাওয়ার জন্য দায়ী করে নিজেদের করণীয় ভুলে থাকার চেষ্টা করেছি। এখন প্রকৃতি তার শোধ নিচ্ছে। আমাদের নদীপথ ক্রমে শুকিয়ে যাচ্ছে এবং এ কারণে ক্ষতি বহুমুখী :এক. সেচের জন্য পানি তুলতে হচ্ছে মাটির তলদেশ থেকে এবং এটা শুধু ব্যয়বহুল নয়, পরিবেশের জন্যও ক্ষতকর। দুই. নদ-নদীর পানি ধারণক্ষমতা কমে যাওয়ায় বর্ষাকালে আকাশ ও হিমালয় থেকে নেমে আসা পানি দ্রুত দু'কূল প্লাবিত করে চলে যায় সাগরে। তিন. মাছের উৎপাদন কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় রাখা যায় না। চার. পরিবেশের ভারসাম্য বিনষ্ট হওয়া। তবে নদী খনন করতে একদিকে চাই পর্যাপ্ত ড্রেজার এবং তার চেয়েও বেশি দরকারি পানিপ্রবাহ স্বাভাবিক রাখার ব্যবস্থা। আমাদের ভারতের সঙ্গে রয়েছে অভিন্ন অর্ধশতাধিক নদ-নদী। ভারত গঙ্গা-তিস্তাসহ কয়েকটি নদীতে বাঁধ দিয়ে অন্যান্যভাবে পানি প্রত্যাহার করে আমাদের লাইফলাইন বিঘি্নত করছে। এ সমস্যার সমাধানে নানামুখী চেষ্টা চলছে। এজন্য ভারতের সদিচ্ছা ও সুপ্রতিবেশীসুলভ মনোভাবের প্রয়োজন রয়েছে।
আমাদের সরকারি ড্রেজার বহরের হাল বড়ই করুণ। বাংলাদেশের স্রষ্টারা এ সমস্যা নতুন দেশ হিসেবে যাত্রা শুরুর লগ্নেই ভেবেছিলেন। স্বাধীনতার পর পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব অর্পণ করা হয়েছিল আবদুর রব সেরনিয়াবাতের ওপর। তিনি স্বল্প সময়ের মধ্যে নৌপথ সচল রাখতে নদ-নদী নিয়মিত খননের জন্য ৭টি ড্রেজার কিনেছিলেন। স্বাধীন দেশের চার দশক অতিক্রান্ত হওয়ার পরও এগুলোই ভরসা। এখন নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের কয়েকটি ড্রেজার রয়েছে। বেসরকারি খাতেও কয়েকটি কেনা হয়েছে। সরকার নৌপথের নাব্যতা ফিরিয়ে আনার জন্য তৎপর হওয়ায় এ বছরেই আরও গোটা দশেক ড্রেজার দেশে আসছে। প্রাইভেট সেক্টরও এখন আগ্রহী হয়েছে। তারা বুঝতে পারছে, এ খাতে অর্থ বিনিয়োগ করা হলে তা সোনা কিনে রাখার মতোই ডিভিডেন্ড দেবে। কারণ, সরকার নদ-নদী খনন করতে আগ্রহী। এজন্য বাজেট বরাদ্দও করা হচ্ছে। তবে বেসরকারি মালিকদের হাতে ড্রেজার থাকলে সরকার তাদের কাছ থেকে ভাড়ায় তা আনতে পারবে কিংবা তাদের কাজের কন্ট্রাক্ট দিতে পারবে। হোসনাবাদ-টরকী নদীর খনন কাজেও একটি বেসরকারি ড্রেজার ব্যবহার করা হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে একটি বিষয় বলা দরকার। নদ-নদী খনন থেকে লাভবান হওয়ার সুযোগ অনেকের রয়েছে। দেশের লাভের কথা বলেছি। এ খনন কাজ থেকে প্রচুর বালু উত্তোলন করা হবে। এ বালু বিনা পয়সায় কিংবা নামমাত্র মূল্যে পাওয়া যায়। ড্রেজার থেকে বালু তুলে কোথায় ফেলা হবে এবং কারা সুফল পাবে, সেটা গুরুত্বপূর্ণ। প্রভাবশালী ব্যক্তিরা এ সুবিধা গ্রহণে তৎপর হয়। যেসব স্থানে নদী খননের কাজ হাতে নেওয়া হয়েছে, সর্বত্রই এটা সমস্যা। আরেকটি বিষয়, বালু তোলা হয় নদীর পানির নিচ থেকে। পালরদী নদীর তলদেশ থেকে এবারে ১৭ কিলোমিটার পথের ৪ লাখ ঘনমিটার বালু ও মাটি তোলা হবে। কতটা গভীর করে নদী কাটা হলো, তাতে প্রচুর ফাঁকফোকর থাকার সুযোগ রয়েছে। ভাটা ও জোয়ারের সময় মাটি কাটার মাপ নেওয়া হলে অনেক পার্থক্য হতে পারে। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, বিআইডবি্লউটিএ এবং জনপ্রতিনিধিরা কি এ ক্ষেত্রে অনিয়ম দূর করতে পারবেন? এ ক্ষেত্রে ব্যর্থতার অর্থ কিন্তু পানিতে টাকা ঢালা ছাড়া আর কিছু হবে না।
নদী খননের কাজ যথাযথভাবে সম্পন্ন হলে দুই পাশে প্রচুর জমি ও নিচু এলাকা ভরাট হবে। গৌরনদী জেলা হবে, এমন সম্ভাবনা রয়েছে। এজন্য জমির দরকার প্রচুর। পালরদী নদীর ড্রেজিং এ ক্ষেত্রেও অবদান রাখতে পারে। অভ্যন্তরীণ নৌপথের ২৪টি রুটে ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের যে পরিকল্পনা বিআইডবি্লউটিএর রয়েছে তাতে এ নদীটিকে অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানিয়েছেন তালুকদার মোহাম্মদ ইউনুস। এ কাজের জন্য মাদারীপুরের ফাঁসিয়াতলা থেকে নেমে আসা নদীটির ড্রেজিং প্রয়োজন রয়েছে। এজন্য ব্যয় পড়বে একশ' কোটি টাকারও বেশি। যদি হোসনাবাদ-টরকী এলাকায় নদী খননের কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়, যদি খননের টাকা পানিতে না যায়, যদি আশপাশের এলাকায় বালু বণ্টন নির্বিঘ্নে সম্পন্ন হয়, যদি নদীর এ পর্যায়ের খনন কাজের ফলে ঢাকা-টরকী রুটের তিন-চারটি বড় লঞ্চ সারা বছর চলাচল করতে পারে, যদি দক্ষিণাঞ্চলের অন্যতম বড় বন্দর টরকীর ব্যবসায়ীরা তাদের মালপত্র আনার জন্য এ নদীর বাড়তি গভীরতার সুফল ভোগ করতে পারে, তাহলে ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের কাজ করার দাবির যৌক্তিকতা প্রতিপন্ন হবে। ওই অঞ্চলের জনপ্রতিনিধিদের জন্য এটা বড় চ্যালেঞ্জ। তারা কি এতে জয়ী হতে পারবেন?
নদ-নদী খননের নানা সমস্যা রয়েছে। এ পথের কিছু এলাকায় নৌকা ছাড়াও লঞ্চ-জাহাজ চলে। কিন্তু নদ-নদী তো অখণ্ড। এর খনন পরিকল্পনাও সেভাবেই হওয়া উচিত। আইডবি্লউটিএ তার অংশে কাজ যত সুষ্ঠুভাবেই সম্পন্ন করুক, নদীর নৌযান না-চলা অংশে একই সঙ্গে ড্রেজিং করা না হলে পানি জমবে দ্রুত এবং এভাবেই নদীতে টাকার নামে পানি ঢালা হবে। এখন জরুরি প্রয়োজন হচ্ছে নৌপরিবহন ও পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মধ্যে নদ-নদী খননের কাজে সমন্বয় সাধন করা।
আরও একটি সমস্যা রয়েছে_ বিভিন্ন নদীতে সেতু নির্মাণ। যমুনায় বঙ্গবন্ধু সেতুর প্রতিটি পিলারের চারপাশে পলি জমেছে। অন্য সব সেতুর চারপাশেও একই দৃশ্য দেখা যায়। যমুনায় এক পার থেকে অপর পারে বিদ্যুৎ নেওয়ার জন্য যে ইস্ট-ওয়েস্ট গ্রিড বসানো হয়েছে তার প্রতিটি পিলারের পাশেও জমেছে পলি। নদী ড্রেজিং করার জন্য একটি বিধি রয়েছে যাতে বলা আছে_ সেতুর পিলারের আশপাশে ড্রেজিং করা যাবে না। কারণ, তাতে সেতুর ক্ষতি হবে। অথচ সেতুর পিলারের পাশে পলি জমার সম্ভাবনা বেশি থাকে। এ সমস্যার কারিগরি সমাধান প্রয়োজন এবং একই সঙ্গে চাই সমন্বিত নীতি। আশা করব, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে দ্রুত কার্যকর সিদ্ধান্তে পেঁৗছাবে।
পদ্মায় সেতু আর স্বপ্ন থাকছে না। পশ্চিম ও দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের জন্য উন্নয়নের এক নতুন দিগন্ত এর ফলে খুলে যাবে। এখন নৌরুট চালু রাখা, বিশেষ করে মাওয়া-কাওড়াকান্দি রুটে ফেরি সচল রাখার জন্য নিয়মিত কিছু ড্রেজিং কাজ করা হচ্ছে। সেতু চালু হলে এর তাগিদ কমবে বলেই শঙ্কা। এর অর্থ হচ্ছে পদ্মা আরও শুকিয়ে যেতে পারে। যাতায়াতের জন্য তখন আরও বেশি নির্ভর করা হবে বাস রুটের ওপর। এর ফলে আরও বেশি অর্থ ব্যয় হবে। কিন্তু তার চেয়েও বড় কথা, নদী শুকিয়ে গেলে সেচের জন্য কম পানি মিলবে, বন্যা আরও প্রবল বেগে আঘাত হানবে, মাছের উৎপাদন কম হবে এবং প্রকৃতি আরও বেশি রোষে আছড়ে পড়তে থাকবে। আমরা নিশ্চয়ই সেটা চাইব না। আমরা সড়ক ও রেল চলাচলের জন্য সেতু চাই। পদ্মায় সেতু হলে বরিশাল-ফরিদপুর অঞ্চলের অনেকে বাড়ি থেকেই ঢাকায় অফিস করতে পারবে। অর্থনীতিতে আসবে আমূল পরিবর্তন। কিন্তু একই সঙ্গে চাই একটি খরস্রোতা ও গভীর নদী, যা দীর্ঘমেয়াদে শুধু নয়, স্বল্পমেয়াদের জন্যও আমাদের জন্য আইএমএফের কাছ থেকে সোনা কেনার মতোই এনে দেবে সোনার ফসল।

অজয় দাশগুপ্ত : সাংবাদিক
ajoydg@gmail.com
 

No comments

Powered by Blogger.