ভারতের রাষ্ট্রপতি পদে ইউপিএর প্রার্থী প্রণব

ভারতের পরবর্তী রাষ্ট্রপতি পদের জন্য প্রণব মুখোপাধ্যায়কে নিজেদের প্রার্থী ঘোষণা করেছে ক্ষমতাসীন কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন সংযুক্ত প্রগতিশীল মোর্চা- ইউপিএ। এর মধ্য দিয়ে গত তিন দিন ধরে চলা নাটকীয়তার অবসান হলো। ভারতের রাজনীতিতে আবারও বড় ধরনের চমক দেখালেন কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী।


গতকাল শুক্রবার বিকেল ৫টায় সোনিয়া গান্ধী রাষ্ট্রপতি প্রার্থী হিসেবে প্রণব মুখোপাধ্যায়ের নাম ঘোষণা করেন। প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের বাসভবনে কংগ্রেসের সঙ্গে জোটের শরিক দলগুলোর বৈঠকের পর তিনি এ ঘোষণা দেন। তবে বৈঠকে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ও তৃণমূল কংগ্রেসের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অনুপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক শেষে সোনিয়া গান্ধী বলেন, 'প্রণব মুখার্জির দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা আছে। আর এ পদের জন্য তাঁকে সব রাজনৈতিক দলই সমর্থন করবে।'
প্রণব মুখপাধ্যায় বর্তমানে ইউপিএ সরকারের অর্থমন্ত্রীর দায়িত্বে আছেন। জিতলে তিনিই হবের ভারতের প্রথম বাঙালি রাষ্ট্রপতি।
রাষ্ট্রপতি পদে প্রণব মুখোপাধ্যায়কে সমর্থন দেওয়ার জন্য অন্য সব রাজনৈতিক দলের প্রতিও আহ্বান জানিয়েছেন সোনিয়া। তবে এ আহ্বানের আগেই একের পর এক রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতারা বর্ষীয়ান এই রাজনীতিককে সমর্থন দেওয়ার কথা জানিয়ে দেন। বহুজন সমাজবাদী পার্টি এবং সমাজবাদী পার্টি গতকাল রাতেই প্রণব মুখোপাধ্যায়ের প্রতি 'আস্থা'র কথা জানিয়েছে। বাম দলগুলোর সমর্থন পাওয়ারও জোর সম্ভাবনা রয়েছে।
বিরোধী দল বিজেপির নেতৃত্বাধীন জাতীয় গণতান্ত্রিক জোট (এনডিএ) এখনো তাদের প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেনি। যদি তারা প্রার্থী ঘোষণা করতে না পারে, তাহলে প্রণব মুখোপাধ্যায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হবেন।
এ মুহূর্তে ভোট অঙ্কের বিচারে প্রণব মুখোপাধ্যায়ের পক্ষে ৪৭ দশমিক ৫ শতাংশ ভোট নিশ্চিত। বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, তৃণমূলকে বাদ দিয়ে এই মুহূর্তে ইউপিএ জোটের ভোট রয়েছে ৩৮ শতাংশ। কিন্তু এরই মধ্যে সমাজবাদী পার্টির ৬ এবং বহুজন সমাজবাদী পার্টির ৩ দশমিক ৫ শতাংশ ভোট নিশ্চিত করতে পেরেছে ইউপিএ। এর সঙ্গে যদি বামফ্রন্টের ৫ শতাংশ ভোট নিশ্চিত করা সম্ভব হয়, তবে ৫২ শতাংশ ভোট পাচ্ছেন প্রণব মুখোপাধ্যায়। আর তা না হলেও অন্যদের হাতে থাকা ভোট থেকে মাত্র ৩ শতাংশ ম্যানেজ করা কংগ্রেসের পক্ষে অসম্ভব হবে না।
রাষ্ট্রপতির প্রার্থী হিসেবে নাম ঘোষণা করায় কংগ্রেস এবং ইউপিএ সদস্যদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন প্রণব মুখোপাধ্যায়। বৈঠক থেকে বেরিয়ে আসার পথেই সাংবাদিকদের তিনি বলেন, 'জীবনে যে দায়িত্ব পেয়েছি, সব দায়িত্ব নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করেছি।' কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া গান্ধীর প্রতি তিনি এ সময় গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
রাষ্ট্রপতি পদে প্রণবকে সমর্থন দেওয়ার কথা জানান সমাজবাদী পার্টির প্রধান মুলায়ম সিং যাদব। তিনি সন্ধ্যায় এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, 'প্রণব মুখার্জি ভারতের গর্ব। তাঁর মতো একজন বর্ষীয়ান রাজনীতিক রাষ্ট্রপতি পদে প্রার্থী হওয়ায় আমরাও গর্বিত। ফলে তাঁকে সমর্থন করছে সমাজবাদী পার্টি।' একই সময় উত্তর প্রদেশে সংবাদ সম্মেলনে বহুজন সমাজবাদী পার্টির প্রধান মায়াবতীও রাষ্ট্রপতি পদে প্রণব মুখোপাধ্যায়ের প্রতি সমর্থনের কথা ঘোষণা করেন।
ইতিমধ্যে নয়াদিল্লি থেকে প্রায় খালি হাতে কলকাতায় ফিরে আসা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আবারও তাঁর দৃঢ় অবস্থানের কথা জানান। তিনি বলেন, 'রাষ্ট্রপতি পদে আমাদের এ পি জে আবদুল কালামকেই পছন্দ।'
রাজনৈতিক মহল মনে করছে, এবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জাতীয় রাজনীতিতে বেশ ব্যাক-ফুটে। এর প্রভাব খুব শিগ্‌গিরই পশ্চিমবঙ্গে পড়বে কি না সেটি এখনো বলার সময় না এলেও- কংগ্রেসের সঙ্গে সম্ভাব্য রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় ইস্যুতে যেভাবে দূরুত্ব বাড়ল তৃণমূলের, তাতে পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান বিরোধী বামফ্রন্ট কিন্তু বড় ধরনের রাজনৈতিক সুবিধা পেল। আর রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে যদি বামরা শেষ পর্যন্ত প্রণব মুখোপাধ্যায়কে সমর্থন করে, তবে ভবিষ্যতে কংগ্রেস এবং বাম দলগুলো মিলে তৃণমূল বিরোধী শক্তি গড়ে তুলতে পারে।
মেক্সিকোয় জি-২০ সম্মেলন শেষে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং দেশে ফিরে এলে প্রণব মুখোপাধ্যায়ের অর্থমন্ত্রীর পদ থেকে ২৪ জুন পদত্যাগ করার কথা রয়েছে। আর মনোনয়নপত্র দাখিল করবেন পদত্যাগের পরের দিন ২৫ জুন। আগামী ১৯ জুলাই ভারতে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ভারতের রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন জনগণের পরোক্ষ ভোটে। ভারতের কেন্দ্র ও রাজ্যের আইনসভার নির্বাচিত সদস্যরা রাষ্ট্রপতি পদের জন্য ভোট দিয়ে থাকেন।

No comments

Powered by Blogger.