ব্রিফিংয়ে ফখরুল-আন্দোলন দমানোর চেষ্টা করে সরকার ব্যর্থ হয়েছে

সদ্য কারামুক্ত বিএনপি নেতা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বিরোধী দলের বেশির ভাগ সিনিয়র নেতাকে কারাগারে পাঠিয়ে আন্দোলন 'সীমিত' রাখার চেষ্টা করতে গিয়ে সরকার ব্যর্থ হয়েছে। গতকাল শুক্রবার এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব বলেন, মিথ্যা মামলা দিয়ে বিরোধী দলের নেতাদের কারাগারে পাঠানোর ফলে


সরকারেরই ক্ষতি হয়েছে বেশি। শেষ পর্যন্ত আন্দোলন বন্ধ করতে পারেনি সরকার। বরং সরকারের এই ষড়যন্ত্রের ফলে বিরোধী দলের জনসমর্থন বাড়ছে এবং সরকারের বিরুদ্ধে ব্যাপক জনমত সৃষ্টি হয়েছে।
প্রায় এক মাস কারাবাসের পর বৃহস্পতিবার রাতে কাশিমপুর কারাগার থেকে মুক্তি পান বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। মুক্তি পাওয়ার পর তিনি ওই রাতেই বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে তাঁর গুলশানের বাসভবনে সাক্ষাৎ করেন। এরপর গতকাল শুক্রবার মির্জা ফখরুল তাঁর উত্তরার বাসভবনে প্রেস ব্রিফিং করেন। এ সময় তিনি বলেন, '১১ জুন গণসমাবেশের আয়োজনের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকতে না পারায় দুঃখ পেয়েছি ঠিকই। কিন্তু ১২ মার্চের মতো ব্যাপক মানুষের সমাগম ঘটেছে- এতে আমিসহ কারাগারে আটক অন্য নেতারা উজ্জীবিত হয়েছি।'
নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, 'বিএনপি কিছুতেই কোনো দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ নেবে না। তাই আশা করি, সরকারের শুভ বুদ্ধির উদয় হবে এবং বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়ার বেঁধে দেওয়া দুই মাস সময়ের মধ্যে দাবি মেনে নিয়ে সংলাপে বসবে।'
এক প্রশ্নের জবাবে ফখরুল বলেন, গত ১১ জুন নয়া পল্টনের গণসমাবেশ থেকে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া সরকারকে দুই মাসের যে সময় দিয়েছেন, তাকে বিএনপির দুর্বলতা ভাবা ঠিক হবে না। তিনি বলেন, 'আমাদের দুই মাসের কর্মসূচি দেখে ভুল বোঝার কোনো অবকাশ নেই। আমরা পিছটান দেইনি বরং সরকারকে দুই মাস সময় দেওয়া হয়েছে, যাতে তাদের শুভ বুদ্ধির উদয় হয়।'
ফুলেল শুভেচ্ছা : মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মুক্তি পাওয়ার পর তাঁকে শুভেচ্ছা জানাতে গতকাল শুক্রবার বিএনপি নেতা-কর্মীরা সকাল থেকেই ফুল হাতে তাঁর উত্তরার বাসায় ভিড় জমাতে থাকেন। নিজের 'ড্রইং রুমে' বসে ২৮ দিনের কারাবাস, দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি, চলমান আন্দোলনসহ বিভিন্ন বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
নিজের ড্রই রুমে বসেই মির্জা ফখরুল সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন। তিনি জানান, কাশিমপুর কারাগারে ১৮ ঘণ্টাই বিদ্যুৎ থাকে না। তাঁকে চারটি পত্রিকা পড়তে দেওয়া হতো। বিটিভি ছাড়া অন্য কোনো টেলিভিশন চ্যানেল দেখার সুযোগ ছিল না। কাশিমপুর কারাগারের ভেতরের পরিবেশ 'তুলনামূলক ভালো' বলে মনে হলেও আটকের পর প্রথম দিকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে তাঁদের বেশ দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে বলে জানান তিনি।
প্রেস ব্রিফিংয়ে ফখরুল বলেন, জাতীয় পর্যায়ের রাজনীতিবিদদের এভাবে মিথ্যা মামলা দিয়ে একসঙ্গে আটকে রাখা নজিরবিহীন। আটক নেতাদের অনেককে মুক্তি দিয়ে আবার অন্য মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বিএনপির আন্দোলন সম্পর্কে তিনি বলেন, 'সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে এমন সব ইস্যু তৈরি করছে, তাতে আমাদের আন্দোলন করা ছাড়া আর বিকল্প নেই। এখন পর্যন্ত আন্দোলন সঠিক পথেই এগোচ্ছে।'
মির্জা ফখরুল বলেন, 'সরকার আগে নির্দলীয় সরকার ব্যবস্থার কথা সরাসরি নাকচ করে দিলেও এখন সেই অবস্থান থেকে সরে এসে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নিয়ে আলোচনার কথা বলছে। দেরিতে হলেও সরকার এই জায়গায় এসেছে। যদিও সংবিধানে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বলে কিছু নেই। আমরা মনে করি, সেই সময় আর বেশি দূরে নয়, যখন বর্তমান সরকার বাধ্য হবে নির্দলীয় সরকারের জায়গায় আসতে।'
ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার দলত্যাগ প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, 'তিনি বয়স্ক ব্যক্তি। আমি এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাই না। আমি শুধু বলতে চাই, বিএনপি একটি বিশাল প্রবহমান নদীর মতো। এতে কিছু খড়কুটো ভেসে গেলে নদীর কিছু আসবে-যাবে না।' অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিএনপি একটি বড় রাজনৈতিক দল। এখানে নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা থাকবে। তাই বলে দল ভাঙার কোনো সুযোগ নেই। দল থেকে কেউ বেড়িয়ে যেতে পারেন। কিন্তু এতে দল ভাঙবে না, বিভক্তও হবে না। সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে তিনি বলেন, 'বর্তমান সরকার সামরিক সরকারের মতো করে দল ভাঙার কাজ করছে বলে প্রচারণা আছে। আমরা আশা করব, আওয়ামী লীগ আর দল ভাঙার এ রকম কৌশল নেবে না।'

No comments

Powered by Blogger.