রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান জরুরি

রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের কারণে বিশেষ করে কঙ্বাজার জেলায় যে সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে, তার একটি যথাযথ সমাধান করা অতি জরুরি হয়ে পড়েছে। ইতিমধ্যে টেকনাফ গেইম রিজার্ভসহ সংরক্ষিত বনাঞ্চলগুলো প্রায় সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে গেছে। এখন পাহাড় কেটে সাবাড় করে দিচ্ছে। তার চেয়েও কঠিন অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে স্থানীয় অধিবাসীদের জন্য।


আইনশৃঙ্খলার পাশাপাশি সামাজিক শৃঙ্খলায়ও রীতিমতো ধস নেমেছে। দিনমজুর শ্রেণীর লোকজন কঙ্বাজার ছেড়ে যাচ্ছে, কারণ দেশের অন্যত্র যখন দৈনিক মজুরি ৩০০ টাকার ওপরে, তখন সেখানে দৈনিক মজুরি ১০০ টাকারও কম। ফলে স্থানীয় ও রোহিঙ্গাদের মধ্যে বৈরী মনোভাব ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে, যেকোনো মুহূর্তে তা রক্তক্ষয়ী দাঙ্গায় রূপ নিতে পারে।
সঠিক পরিসংখ্যান না থাকলেও সংশ্লিষ্ট অনেকেরই ধারণা, বাংলাদেশে বর্তমানে অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গার সংখ্যা চার লাখের বেশি। এর পরও প্রতিদিনই রোহিঙ্গারা অনুপ্রবেশ করছে। এরা এখন শুধু কঙ্বাজার নয়, আশপাশের জেলাগুলোতেও ছড়িয়ে পড়ছে। গতকাল কালের কণ্ঠে এ সংক্রান্ত দুটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের পাসপোর্ট সংগ্রহ করে অবৈধভাবে বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছে। এতে বিদেশে বাংলাদেশের শ্রমবাজারও ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কেবল ভারতের আন্দামান কারাগারেই রয়েছে দেড় শতাধিক রোহিঙ্গা। বাংলাদেশের পাসপোর্টধারী হওয়ায় তাদের ফেরত আনার জন্য বাংলাদেশের ওপর চাপ সৃষ্টি করে যাচ্ছে ভারত। মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের শ্রমবাজারে ধস নামার অন্যতম কারণ রোহিঙ্গারা। মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশেও তাদের অনুপ্রবেশ সমস্যার সৃষ্টি করেছে। অভিযোগ আছে, ২০ বছর আগের তুলনায় বর্তমানে কঙ্বাজার এলাকায় চুরি, ডাকাতি ও অসামাজিক কর্মকাণ্ড ব্যাপক হারে বেড়ে গেছে। দুর্গম কোনো কোনো রাস্তায় দিনের বেলা চলাচলের জন্যও পুলিশি নিরাপত্তার প্রয়োজন হয়। ডাকাতি, ছিনতাইয়ের কারণে ইনানি সমুদ্র সৈকতে পর্যটকরা যেতে ভয় পান। শুধু তাই নয়, এও অভিযোগ আছে, রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশনসহ (আরএসও) বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে এ দেশের জঙ্গি সংগঠনগুলোর রয়েছে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। বিশেষ করে হরকাতুল জিহাদ বা হুজির সম্পর্ক নিয়ে ইতিপূর্বে পত্রপত্রিকায় বহু প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। আফগান যুদ্ধ শেষে দুই শতাধিক রোহিঙ্গা তালেবান এ দেশে এসে হুজির কর্মকাণ্ডে অংশ নিয়েছে বলেও খবরে প্রকাশ পেয়েছে। এত কিছুর পরও রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে সরকার এক অদ্ভুত নীরবতা পালন করে চলেছে!
এ দেশে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের পেছনে মূল ভূমিকা পালন করেছে ইউএনএইসিআর, কিছু পশ্চিমা দাতা সংস্থা এবং কিছু ইসলামী এনজিও_জঙ্গি তৎপরতায় মদদদানের অভিযোগে যার অনেকটাই আন্তর্জাতিকভাবে নিষিদ্ধ। আর অতীতে বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে প্রশাসনও তাতে সমর্থন জুগিয়ে গেছে। নাফ নদীর পারে 'আহলান ওয়া সাহলান' অর্থাৎ 'স্বাগত, সুস্বাগত' লেখা বিশাল বিশাল ব্যানার টানিয়ে তাদের ডেকে আনা হয়েছে। আসার সঙ্গে সঙ্গে তাদের নগদ টাকা ও কাপড় দেওয়া হয়েছে। তাদের মধ্য থেকে শ দেড়েক লোককে কানাডা ও কিছু পশ্চিমা দেশে অভিবাসন দেওয়া হয়েছে। এই খবর রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশকে ব্যাপকভাবে উৎসাহী করেছে। কালের কণ্ঠে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, পশ্চিমা দাতা সংস্থাগুলো এখন এ দেশে রোহিঙ্গাদের স্থায়ীভাবে পুনর্বাসনের জন্য চাপ সৃষ্টি করছে। অনেকেই মনে করেন, কঙ্বাজার ও পার্বত্য জেলাগুলো নিয়ে পাশ্চাত্যের, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘমেয়াদি কুমতলব আছে। ধীরে ধীরে তারা সেদিকেই এগিয়ে চলেছে। আমরা আশা করি, জনগণের বিপুল ম্যান্ডেট নিয়ে স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি হিসেবে যে মহাজোট সরকার রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েছে, সেই সরকার কোনো ধরনের নতজানু পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করবে না। সরকার অবশ্যই দেশের স্বার্থ বিবেচনা করবে।

No comments

Powered by Blogger.