নেপাল বন্দর সুবিধা চায়নিঃ সরকারের কেন এত আগ্রহ

শতভাগ সফল দাবি করা প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর শেষে প্রকাশিত যৌথ ইশতেহারে চট্টগ্রাম ও মংলাবন্দর ব্যবহারে ভারতকে সুবিধা দেয়ার পাশাপাশি নেপাল ও ভুটানকেও একই সুবিধা দেয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ। বিষয়টি দেখে কেউ কেউ কপাল কুঁচকিয়েছিলেন।

ভারত সফরে গিয়ে নেপাল-ভুটানের কথা কেন? তাদের সঙ্গে কি কোনো যোগাযোগ করা হয়েছিল? তারা কি আমাদের কাছে বন্দর ব্যবহার সুবিধা চেয়েছিল? বিষয়টার আদ্যোপান্ত জানতে নেপাল ঘুরে এসেছেন আমার দেশ প্রতিনিধি। গতকাল প্রকাশিত তার অনুসন্ধান প্রতিবেদনে ঝোলার বেড়াল বেরিয়ে পড়েছে।
জানা গেছে, নেপাল বাংলাদেশের কাছে বন্দর সুবিধাই চায়নি। প্রথমত, নেপাল এখন যে রাজনৈতিক সঙ্কটে হাবুডুবু খাচ্ছে সে অবস্থায় ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণের চিন্তা এই মুহূর্তে তাদের মাথায় নেই। পরিস্থিতি অনুকূল না হওয়া পর্যন্ত বিষয়টি সরকারি-বেসরকারি কারও কাছেই বিবেচ্য নয়, এটাও জানা কথা। তাছাড়া, বাংলাদেশের বন্দর ব্যবহারের কথা চিন্তা করার আগে ভারতের কাছ থেকে ট্রানজিট পাওয়া নিশ্চিত হতে হবে। ট্রানজিট সুবিধা ও ভারতের সম্মতি পাওয়ার আগে বাংলাদেশের বন্দর নিয়ে চিন্তা করা নেপালিদের জন্য সময়ের অপচয়মাত্র, কারণ ভারতের সম্মতি ছাড়া তৃতীয় কোনো দেশের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক গড়ে তোলার অধিকার নেপালের নেই। বিষয়টি পরিষ্কার করা যাক। ১৯৫০ সালে সম্পাদিত নেপাল-ভারত চুক্তি অনুযায়ী ভারতের সম্মতি ছাড়া নেপাল এ ধরনের কোনো পদক্ষেপ নিতে পারে না। ভারতের সম্মতির ব্যাপারে নেপালের কেউই আশাবাদী নয়। নেপাল সরকারের সংশ্লিষ্ট মহল, ক্ষমতাসীন জোটের প্রধান শরিক নেপাল কংগ্রেসের নেতৃবৃন্দ এবং ব্যবসায়ী-বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে বাংলাদেশের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ও সরাসরি যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলার আগ্রহ থাকলেও এর বাস্তবায়ন নিয়ে হতাশাই প্রকাশ পেয়েছে। চুক্তিবলে ভারত নেপালের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে নিজেদের কব্জায় রেখেছে। এখন পর্যন্ত ভারতের কাছ থেকে কয়েক কিলোমিটার ট্রানজিট সুবিধাই পায়নি ক্ষুদ্র প্রতিবেশী দেশ নেপাল। মনে রাখা দরকার, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ভারত নেপাল ও বাংলাদেশের জন্য ট্রানজিট সুবিধা দিয়েছিল। তত্কালীন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমদ ঢাকঢোল পিটিয়ে এর উদ্বোধন করলেও ঘণ্টাদুয়েক পরই ভারত নিরাপত্তার অজুহাত তুলে তা বন্ধ করে দেয়। পার্শ্ববর্তী চীনের সঙ্গে নেপালের সুসম্পর্কও ভারত মেনে নিতে পারেনি। তারপরও কেন নেপাল-ভুটানকে অযাচিতভাবে বাংলাদেশের বন্দর ব্যবহারে আগ্রহের কথা ইশতেহারে উল্লেখ করা হয়েছে, সেটা একটু না ভেবে পারা যায় না।
আওয়ামী মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর সৃৃষ্ট পরিবেশে ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটু চালাকির আশ্রয় নেয়া হয়েছে, এমন চিন্তা উড়িয়ে দেয়া যায় না। ভারতকে বন্দর সুবিধা দিলে বিরাজমান বাস্তবতায় সেটা দেশের জনগণ ভালো চোখে দেখবে না, এটা একটা শক্তিশালী রাজনৈতিক ইস্যু হয়ে উঠবে, তা বোঝাই যায়। এ অবস্থায় নিজেদের পরিচয় আড়াল করতেই কি সরকার যৌথ ইশতেহারে বন্দর সুবিধা দেয়ার ক্ষেত্রে ভারতের পাশাপাশি নেপাল-ভুটানের কথা উল্লেখ করেছে? ভারতের আপত্তির মুখেই কি নেপাল ও ভুটানকে বন্দর সুবিধা দিতে সম্মত হওয়ার পরিবর্তে বাংলাদেশের আগ্রহের কথা স্থান পেয়েছে? এসব প্রশ্ন এখন মানুষের মধ্যে ক্রমেই ছড়িয়ে পড়ছে। এভাবে জনগণকে বিভ্রান্ত করে প্রকৃতপক্ষে ভারতকেই চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর ব্যবহারের সুযোগ দিতে চাইছে সরকার, এটা আর কারও বুঝতে বাকি নেই। তাই সঙ্গত কারণেই প্রশ্ন উঠেছে, ভারতকে এ ধরনের সুবিধা দেয়ার কেন এত দায় মহাজোট সরকারের? এ প্রশ্নের উত্তর জানা খুবই জরুরি।

No comments

Powered by Blogger.