কারিশমার প্রত্যাবর্তন

তিনি ভারতের রাষ্ট্রীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাওয়া অভিনেত্রী। দিল তো পাগল হ্যায় ছবিতে অভিনয়ের জন্য শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেত্রীর স্বীকৃতি পেয়েছিলেন তিনি। আমির খানের বিপরীতে রাজা হিন্দুস্থানি কিংবা শাহরুখ খানের বিপরীতে দিল তো পাগল হ্যায় অথবা সালমান খানের বিপরীতে জুড়ুয়া, জিত, দুলহান হাম লে জায়েঙ্গে, চল মেরে ভাই—একের পর এক হিট ছবি উপহার দিয়েছেন তিনি।


গোবিন্দর সঙ্গে রাজা বাবু, খুদ্দার, কুলি নম্বর ১, হিরো নম্বর ১, সাজান চালে সাসুরাল, হাসিনা মান জায়েগি—রুটিনমাফিক প্রতিবছর অন্তত একটি হিট ছবি উপহার দিতেন তিনি।
সেই কারিশমা কাপুর ২০০৩ সালে দিল্লির ব্যবসায়ী সঞ্জয় কাপুরকে বিয়ে করে বিদায় জানান সেলুলয়েডের রঙিন দুনিয়াকে। অভিষেক বচ্চনের সঙ্গে বাগদান ভেঙে যাওয়ার কারণেই নাকি ঝা-চকচকে শোবিজ জগৎ থেকে উড়াল দিয়েছিলেন নীল-নয়না কারিশমা। কারিশমার শুভাকাঙ্ক্ষীরা অবশ্য দাবি করেন, বোন কারিনাকে অবস্থান ছেড়ে দিতেই কারিশমা তাঁর স্বপ্নের ক্যারিয়ার ত্যাগ করেছিলেন। বিয়ে করে সংসারে মন দিয়েছিলেন। সেই সংসারে আজ ফুলের মতো প্রস্ফুটিত মেয়ে সামাইরা ও ছেলে কিয়ান রাজ। কারিশমা সব সময়ই চেয়েছিলেন, বিয়ের পর সংসারে সব ভালোবাসা উজাড় করে দেবেন, কিন্তু ভাগ্যের লিখন না যায় খণ্ডন। কারিশমা-সঞ্জয়ের সুখের প্রদীপ আজ নিভু নিভু করে জ্বলছে। দুই সন্তানকে নিয়ে দিল্লি ছেড়ে মুম্বাইয়ে চলে এসেছেন কারিশমা। খুব শিগগির দুজনার তালাক হয়ে যাবে। আর তাই নিজের সন্তানদের ভবিষ্যতের কথা ভেবেই আবারও হাই-ভোল্টেজ ক্যামেরার সামনে লোলো (কারিশমা) কাপুরের প্রত্যাবর্তন।
হ্যাঁ, পাঠক, কারিশমা ফিরছেন। আর দুই সপ্তাহ পর, ১১ মে মুক্তি পাচ্ছে কারিশমা অভিনীত বিক্রম ভাট পরিচালিত ছবি ডেঞ্জারাস ইশক। নয় বছর আগে অভিনয় ছাড়লেও ২০০৬ সালে কারিশমার সর্বশেষ ছবি মুক্তি পায় জামানত (আরশাদ)। কেতাবি ভাষায় বলা যায়, ছয় বছর পর বড় পর্দায় প্রত্যাবর্তন হতে যাচ্ছে কারিশমার।
অভিনয়ে এতটা লম্বা বিরতি! সিদ্ধান্তটি কি ঠিক ছিল? ‘অবশ্যই।’ কারিশমার স্মৃতি রোমন্থন, ‘১৬ বছর বয়স থেকে কুকুরের মতো দুই শিফটে কাজ করেছি। একানব্বইয়ে প্রেম কয়েদি দিয়ে অভিনয় শুরু করি। সেই থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত খুব কম দিনই আমি বিশ্রাম নিয়েছি। বিয়ের পরের বিরতিটা তাই ইচ্ছাকৃত।’ প্রত্যাবর্তন ছবি হিসেবে ডেঞ্জারাস ইশককে বেছে নেওয়ার কারণ কী? যত দূর শোনা যায়, পরিচালক বিক্রম ভাট রানী মুখার্জিকে না পেয়ে কারিশমার দ্বারস্থ হয়েছিলেন! ‘ভুল’—কারিশমা বেজায় চটে যান রানীর নাম শুনে, ‘বিক্রমকেই জিজ্ঞেস করে দেখুন। বেচারা ২০০৯ থেকে আমার পিছু নিয়েছেন এবং আমি বরাবরই তাঁকে ফিরিয়ে দিয়েছি। হয়তো আমাকে না পেয়ে মাঝে অন্য নায়িকার কাছে গিয়েছিলেন। তবে আমাকে উচ্চ পারিশ্রমিক (৪ দশমিক ৫ কোটি) দিতে রাজি হলেও অন্য নায়িকাদের তিনি এর যোগ্য মনে করেননি। আর তাই গত বছর বিক্রম আবারও আমার কাছে এ ছবির প্রস্তাব নিয়ে আসেন। অনেক অনুনয়-বিনয়ের পর ছবির স্ক্রিপ্ট পড়তে বাধ্য করেন। বিশ্বাস করুন, ছবির স্ক্রিপ্ট পড়ে আমি দ্বিতীয় চিন্তা না করে বিক্রমকে “হ্যাঁ” বলে দিয়েছি। এ যাবৎ ৮৩টি ছবিতে অভিনয় করেছি। কিন্তু এ ধরনের চরিত্রে এর আগে আমার কখনোই অভিনয় করা হয়নি। পুনর্জন্ম নিয়ে অতিপ্রাকৃত রোমাঞ্চকর কাহিনির ওপর ভিত্তি করে ছবির গল্প। ছবিতে আমার বিপরীতে নতুন নায়ক রজনীশ ডুগ্গল। নারীকেন্দ্রিক ছবির মধ্যে ভারতের প্রথম ত্রিমাত্রিক ছবি ডেঞ্জারাস ইশক। ১৪৯৮ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত পাঁচটি সময়কে ধরে এগিয়েছে চিত্রনাট্য। আমি অভিনয় করেছি পাঁচটি চরিত্রে। সংলাপ বলতে হয়েছে মাড়োয়ারি, হিন্দি, ইংরেজি, উর্দু ও পাঞ্জাবি ভাষায়। এমন ছবিতে অভিনয়ের প্রস্তাব কোনো অভিনেত্রীই ফিরিয়ে দেবেন না।’
কারিশমা বলেন, ‘এ ছবিতে একসময় লাহোরের একটি মেয়ের চরিত্রে অভিনয় করতে হয়েছে, যে কি না ১৯৪৭ সালে অমৃতসরে চলে আসে। তার ভাষায়, উর্দু-পাঞ্জাবির মিশেল। এই চরিত্রে অভিনয় করতে সবচেয়ে বেশি কষ্ট হয়েছে।’ কারিশমা বলিউডে ফিরছেন—এই আলোচিত খবরের উল্টোপিঠে সমালোচনাও হচ্ছে বেশ। বলা হচ্ছে, ডেঞ্জারাস ইশক ছবির পোস্টারে কারিশমা যে লাল গাউনটি পরেছেন, তা হুবহু এবারের অস্কারের লাল গালিচায় অ্যাঞ্জেলিনা জোলির পরা কালো গাউনের নকল! কারিশমা অবশ্য বিতর্কের ধোঁয়া না বাড়িয়ে সোজাসাপটা বলে দিয়েছেন, ‘আমি জোলির মহাভক্ত। যদি তাঁর সঙ্গে আমাকে জড়িয়ে কোনো খবর বের হয়, আমি সেটাকে প্রশংসা হিসেবেই বিবেচনা করব।’
৩৭ পার করে ৩৮-এ পা দেবেন কারিশমা। রূপ-লাবণ্য ধরে রাখার টনিক কী? ‘বাচ্চাদের পেছনে দৌড়ালে এমনিতেই ব্যায়ামের কাজ হয়ে যায়। হা হা হা। পরিমিত খাবার এবং ঘুম তো আছেই। তা ছাড়া কারিনা আমাকে যোগব্যায়ামে উদ্বুদ্ধ করেছে। কিয়ান জন্ম নেওয়ার পর ২৫ কিলো ওজন বেড়ে গিয়েছিল। যোগব্যায়ামই আমাকে নতুন জীবন দেয়।’
এত দিন পর ফিরে এসে কারিশমা কি তাঁর পুরোনো সিংহাসন ছিনিয়ে নিতে পারবেন? ‘দেখেশুনে নিয়মিতই অভিনয় করতে চাই। তবে কোনো অবস্থানের জন্য নয়। নিজেকে এবং আমার ভক্তদের সন্তুষ্ট করতে পারলেই আমি খুশি। তা ছাড়া ভুলে যাবেন না, এখন ওই সিংহাসনের মালিক কিন্তু আমারই বোন—কারিনা!’
 রুম্মান রশীদ খান
হিন্দুস্থান টাইমস, বলিউড হাঙ্গামা, টাইমস অব ইন্ডিয়া ডট কম অবলম্বনে

No comments

Powered by Blogger.