রাজনীতিতে অশনিসংকেত-এবার আর আন্দোলন থামাবে না বিএনপি! by মোশাররফ বাবলু

সাবেক সংসদ সদস্য, বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি এম ইলিয়াস আলী নিখোঁজ ঘটনার প্রতিবাদে বিএনপি পরপর তিন দিন হরতাল পালন করে। তাঁকে উদ্ধারের জন্য বিএনপি শনিবার পর্যন্ত আলটিমেটাম দিয়েছে।


তা না হলে ওই দিন দলের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। বৈঠকের পর পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করবে বিএনপি। গত রাতে ১৮ দলীয় জোটের বৈঠকে আগামী রবিবার ও সোমবার টানা হরতালের নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে এ ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়া হবে শনিবার বিকেলে।
সূত্রে জানা গেছে, রবিবার থেকে লাগাতার আন্দোলন শুরু হবে। সে ক্ষেত্রে লাগাতার হরতাল, ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঘেরাও, মানববন্ধন, বিক্ষোভসহ পর্যায়ক্রমে নানা কর্মসূচির প্রস্তাব রয়েছে। মে দিবস উপলক্ষে মঙ্গলবার সমাবেশ করবে বিএনপি। সপ্তাহজুড়ে থাকছে আন্দোলনের কর্মসূচি। কর্মসূচিতে সাবেক রাষ্ট্রপতি এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর বিকল্পধারা ও বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর কৃষক শ্রমিক জনতা লীগও সমর্থন জানাবে বলে সূত্র জানায়।
গতকাল বুধবার রাতে গুলশানের কার্যালয়ে ১৮ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে লাগাতার আন্দোলনের কর্মসূচি নিয়ে বৈঠক করেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। বৈঠকে সরকারবিরোধী লাগাতার আন্দোলনের ব্যাপারে জোট নেতারা আগামী রবি-সোম ৪৮ ঘণ্টার টানা হরতাল এবং মে দিবসের পর আবার বুধ ও বৃহস্পতিবার ৪৮ ঘণ্টার হরতাল কিংবা ঘেরাও, অবরোধসহ বিভিন্ন কর্মসূচি দেওয়ার প্রস্তাব উত্থাপন করেন। কর্মসূচি চূড়ান্ত করার বিষয়টি চেয়ারপারসনের ওপর ছেড়ে দেন নেতারা। আগামী রবিবার ও সোমবার হরতালের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে শনিবার বিকেলের আগে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসছে না। বৈঠকে গত তিন দিনের হরতালের পর্যালোচনা ও ভবিষ্যতে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন সফল করা এবং হরতালের পাশাপাশি বিকল্প পথ বেছে নেওয়ার বিষয় নিয়েও আলোচনা হয়। বৈঠক শেষে জোটের এক শীর্ষ নেতা কালের কণ্ঠকে বলেন, ইলিয়াস আলীকে পাওয়া গেলেও সরকারবিরোধী আন্দোলন চলবে। সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে বলে তিনি জানান। আন্দোলন বেগবান করতে জেলা-উপজেলা পর্যায়ে শরিক দলগুলোকে সম্পৃক্ত করতে বলেছেন চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।
বিএনপির এক সিনিয়র নেতা জানান, এই আন্দোলন বিএনপির জন্য অস্তিত্বের লড়াই। সরকারকে আর কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। কঠোর থেকে কঠোরতম আন্দোলন হবে। হরতালের পাশাপাশি ঘেরাও, অবরোধ থাকবে। আগামী ১০ জুন পর্যন্ত তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি পুনর্বহালের দাবিতে আলটিমেটাম দেওয়া আছে। ওই আলটিমেটাম পর্যন্ত ইলিয়াস আলী নিখোঁজ হওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করেও আন্দোলন চালিয়ে যাবে বিএনপি। ওই নেতা আরো বলেন, 'আমরা এখনো আশাবাদী, ইলিয়াস আলী বেঁচে আছেন। তবে ইলিয়াসকে পাওয়া গেলেও আন্দোলন হবে। সরকারবিরোধী আন্দোলন আর থামছে না।'
ইলিয়াস আলী নিখোঁজ ঘটনার প্রতিবাদে বিএনপির উদ্যোগে আজ বৃহস্পতিবার সারা দেশে বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছে। ঢাকায় নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিকেল ৩টায় এ সমাবেশ হবে। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ও কেন্দ্রীয় নেতারা সমাবেশে বক্তব্য দেবেন। ২৮ এপ্রিল দেশের সব থানা সদরে বিক্ষোভ মিছিল হবে। সেদিন কেন্দ্র থেকে পরবর্তী কর্মসূচি দেওয়া হবে।
এদিকে মে দিবসে ঢাকার নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে শ্রমিক সমাবেশে খালেদা জিয়ার উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে। শ্রমিক দলের আয়োজনে অনুষ্ঠেয় সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে তাঁর বক্তব্য দেওয়ার কথা।
খালেদা জিয়া গত মঙ্গলবার তাঁর কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সরকারকে সময় বেঁধে দিয়ে বলেন, আগামী শনিবারের মধ্যে ইলিয়াস আলী ও তাঁর গাড়িচালককে পরিবারের হাতে তুলে দিতে সরকার ব্যর্থ হলে ২৯ এপ্রিল থেকে আবারও কঠোর কর্মসূচি শুরু হবে। তবে কী কর্মসূচি থাকবে তা তিনি বলেননি। সরকারকে হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, 'আমরা এখনো আশাবাদী, ইলিয়াস বেঁচে আছেন। সরকার বিষয়টি তদন্ত করছে। সরকারকেই ইলিয়াস আলী ও তাঁর ড্রাইভারকে খুঁজে বের করতে হবে।'
খালেদা জিয়া সাংবাদিকদের বলেন, 'আমরা অনেক নেতা-কর্মী হারিয়েছি। অনেকের জীবন অকালে ঝরে গেছে। এরপর অনেক ধৈর্য ধরেছি; আর নয়।' তিনি বলেন, 'আমরা জানি, হরতাল দেশের জন্য ক্ষতিকর। কিন্তু অস্তিত্ব রক্ষার প্রয়োজনে বাধ্য হয়ে হরতাল ডাকতে হয়েছে।' সরকারবিরোধী কঠোর আন্দোলনে দেশের সর্বস্তরের মানুষের সমর্থন কামনা করেন তিনি।
জানা গেছে, কঠোর আন্দোলন সফল করার লক্ষ্যে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করছেন, সিনিয়র নেতাদের পরামর্শ নিচ্ছেন। কী ধরনের কর্মসূচি দেওয়া যায়, তা নিয়েও আলোচনা করছেন তিনি। গতকাল সাবেক ছাত্রনেতাদের সঙ্গেও এক আলোচনায় বসেন তিনি। সেখানে তিনি বলেন, রবিবার থেকে সারা দেশে আন্দোলনের আগুন জ্বলবে; তা নেভানোর ক্ষমতা থাকবে না সরকারের। ছাত্রনেতাদের তিনি বলেন, 'নব্বইয়ে আপনারা স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে মাঠে নেমেছিলেন, আবার ছাত্রদের সেই ভূমিকা নিতে হবে। সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।'
সরকারবিরোধী আন্দোলন বেগবান করতে গত ১৮ এপ্রিল বিএনপির নেতৃত্বে '১৮ দলীয় জোট' ঘোষণা করেন খালেদা জিয়া। এ জোটের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে গত রাতে তিনি যে বৈঠক করেন, সেখানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমদ, জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ডা. শফিকুর রহমান, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ, ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব মাওলানা আবদুল লতিফ নেজামী, খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মুহাম্মদ ইসহাক, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীরপ্রতীক, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের সভাপতি শায়খ আবদুল মমিন, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) সাধারণ সম্পাদক খন্দকার লুৎফর রহমান, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) সভাপতি শেখ শওকত হোসেন নীলু, বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এনডিপি) চেয়ারম্যান খন্দকার গোলাম মোর্তুজা, মুসলিম লীগের নির্বাহী সভাপতি এ এইচ এম কামরুজ্জামান, বাংলাদেশ ন্যাপের চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গানি, ন্যাপ ভাসানীর চেয়ারম্যান শেখ আনোয়ারুল হক, ইসলামিক পার্টির চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আবদুল মবিন, ডেমোক্রেটিক লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইফউদ্দিন মনি, পিপলস লীগের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট গরীবে নেওয়াজ।

No comments

Powered by Blogger.