দুই পক্ষই অনড় বুয়েটও অচল by নুরে আলম দুর্জয়

দেশে প্রকৌশল শিক্ষার শীর্ষতম পাদপীঠ বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) দীর্ঘ ২০ দিন ধরে অচল হয়ে আছে। উপাচার্যের পদত্যাগসহ কয়েকটি দাবিতে শিক্ষক সমিতির কর্মবিরতির কারণে এ অচলাবস্থা বিরাজ করছে। ফলে সেশনজটের আশঙ্কা প্রকট হচ্ছে।


বুয়েট প্রশাসন ও শিক্ষক সমিতি নিজ নিজ অবস্থানে অনড় থাকায় শিক্ষার্থীদের সেশনজটের এ আশঙ্কা আরো প্রকট হচ্ছে। কবে নাগাদ এই অচল দশা দূর হবে সে সম্পর্কেও অন্ধকারে রয়েছে বুয়েট প্রশাসন ও শিক্ষক সমিতি। বুয়েট উপাচার্য ড. এম নজরুল ইসলাম ও উপ-উপাচার্য ড. হাবীবুর রহমানের পদত্যাগের দাবিসহ ১৬টি অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ এনে শিক্ষক সমিতি গত ৭ এপ্রিল থেকে কর্মবিরতি পালন করে আসছে। দুটি পক্ষই পৃথক সংবাদ সম্মেলন করে তাদের অবস্থান তুলে ধরে।
কবে নাগাদ বুয়েটের স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসবে- এমন প্রশ্নের জবাবে বুয়েট উপাচার্য ড. এস এম নজরুল ইসলাম গতকাল বুধবার বিকেলে কালের কণ্ঠকে বলেন, 'এটা এই মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না। তবে আমাদের আলোচনা চলছে। গতকালও আমরা আলোচনা করেছি।'
উপাচার্য বলেন, 'আমরাও চাই এই অচলাবস্থার নিরসন হোক। ক্লাসে ফিরে যাওয়ার জন্য ছাত্ররা একাধিকবার মানববন্ধন করেছেন। শিক্ষকরা ক্লাসে ফিরে যান ছাত্ররাও এটা চায়।'
ড. নজরুল ইসলাম বলেন, 'শিক্ষকদের কর্মবিরতি প্রত্যাহার করার জন্য সিন্ডিকেট সভায় ও সংবাদ সম্মেলনে আহ্বান জানানো হয়েছে। শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনা করছি। আশা করি সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।'
গতকাল একই প্রশ্ন উপ-উপাচার্য ড. হাবীবুর রহমানকে করা হলে তিনি বলেন, 'এটা তো বলা মুশকিল। তবে আমরা চেষ্টা করছি। শুক্রবার শিক্ষক সমিতির সঙ্গে আলোচনায় বসার কথা রয়েছে।'
তবে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড. আশরাফুল ইসলাম গতকাল জানান, 'আমাদের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত কর্মবিরতি চলবে।'
কর্মবিরতির কারণে শিক্ষার্থীদের সেশনজটের প্রসঙ্গ তুলে ধরে প্রশ্ন করা হলে ড. আশরাফ বলেন, 'কর্মবিরতির কারণে কিছুটা ক্ষয়ক্ষতি তো হচ্ছে। ক্লাস হোক এটা আমরাও চাই। দেশের গর্ব করার মতো একটা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দুর্নীতিতে ছেয়ে গেলে এটা আরো বড় ধরনের ক্ষতি। এ কারণেই কর্মবিরতি।' তিনি বলেন, 'আমরা আশা করছি হয়তো একটা সমাধানে পেঁৗছাব। তবে দাবি ছাড় দিয়ে নয়।'
সমিতির সভাপতি ড. এম মুজিবুর রহমান বলেন, 'উপাচার্য ও উপ-উপাচার্য পদত্যাগ না করা পর্যন্ত আমাদের কর্মবিরতি চলবেই। ভিসি শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনা করেন, তবে নিজের অবস্থানের কোনো পরিবর্তন চান না।'
বুয়েট প্রশাসনের একটি সূত্র জানিয়েছে, এ অচলাবস্থা শিগগির কাটবে না। কেননা কোনো পক্ষই কাউকে ছাড় দিতে নারাজ।
'বুয়েটের আইন কড়াকড়ি' এ ধরনের একটি কারণ তুলে ধরে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী গতকাল দুপুরে কালের কণ্ঠকে বলেন, 'বুয়েট চলে শিক্ষকদের দ্বারা। তাঁরাই দুর্নীতি-অনিয়ম করেন। তাঁরাই কর্মবিরতি দেন। এখানে শিক্ষার্থীরা পড়েন বিপাকে।'
ওই শিক্ষার্থী বলেন, 'ক্লাস-ল্যাব নেই আজ অনেক দিনই হয়ে গেল। এখনো আমরা জানি না কবে ক্লাসে ফিরব। অন্যদিকে সেশনজটেও পড়ে গেছি।'
১৫ এপ্রিল শিক্ষক সমিতি এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে কর্মবিরতি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয়। অন্যদিকে উপাচার্য ১৭ এপ্রিল শিক্ষক সমিতির দাবিকে 'অযৌক্তিক' আখ্যা দিয়ে শিক্ষকদের কর্মবিরতি প্রত্যাহারের আহ্বান জানান।

No comments

Powered by Blogger.