অর্থনীতি-আসন্ন বাজেট ও আমজনতা

নতুন অর্থবছর ২০১২-১৩ কেমন হবে, সেটা নিয়ে বিভিন্ন মহলে এপ্রিল মাস শেষ হতে না হতেই আলোচনা শুরু হয়েছে। অর্থমন্ত্রী অর্থনীতিবিদদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। মঙ্গলবার যৌথভাবে এনটিভি টিভি চ্যানেল ও ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই আয়োজিত সংলাপে অংশ নিয়েছেন অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত অনেকেই।


তারা অর্থনীতির চ্যালেঞ্জগুলো তুলে ধরেছেন। অর্থমন্ত্রীর কী করা উচিত এবং কী ধরনের বাজেট পদক্ষেপ থেকে বিরত থাকা উচিত, সে বিষয়ে এসেছে সুস্পষ্ট বক্তব্য। যেমন বলা যায়, ব্যবসা করার ব্যয় যাতে না বাড়ে বরং কিছুটা কমে সেটা নিশ্চিত করা। অর্থমন্ত্রী বলেছেন মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, সরকারের ব্যাংক ঋণ কমানো এবং বৈদেশিক ঋণের ব্যবহার বাড়ানোর কথা। তার বিবেচনায় বাজেট বাস্তবায়ন বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। অন্যদিকে, এ সংলাপের অন্যতম উদ্যোক্তা এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি এবং আরও কয়েকজন ব্যবসায়ী ও অর্থনীতিবিদ তাদের বক্তব্যে সামগ্রিক বিষয়টিকে দেখতে চেয়েছেন অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে নিয়োজিত বিপুলসংখ্যক মানুষের দৃষ্টিকোণ থেকে। বহু বছর ধরেই আমজনতার কাছে একটি বিষয় মোটামুটি স্বতঃসিদ্ধ_ বাজেট মানেই জনদুর্ভোগ বেড়ে যাওয়া। এবার কি এর ব্যত্যয় ঘটবে? অর্থমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা বিদ্যুৎ খাতে সরকারের ভর্তুকি কমিয়ে আনার জন্য আরও পদক্ষেপের কথা বলেছেন। কিন্তু দ্রব্যমূল্যের অসহনীয় বোঝা যে তাতে বাড়বে, সে বিষয়ে দ্বিমত প্রকাশের মতো কম লোকই পাওয়া যাবে। এ প্রসঙ্গেই অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার প্রসঙ্গ আসে। বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলসহ অনেক পণ্যের দাম বেশি এবং দেশের বাজারে তার প্রভাব পড়া স্বাভাবিক। কিন্তু জরুরি ভিত্তিতে বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের অনুমতি প্রদান এবং দুই ডজনের বেশি কেন্দ্র চালু হওয়ার পর 'ভর্তুকিজনিত চাপের কারণে' তা প্রতিদিন কয়েক ঘণ্টা করে বন্ধ করে রাখার পক্ষে যত যুক্তিই প্রদান করা হোক না কেন, সাধারণ মানুষের কাছে তা বোধগম্য হবে না। চাঁদাবাজি-সন্ত্রাস-আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির কারণেও যে স্বাভাবিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বিঘি্নত হয়, সেটাও সরকারের অজানা নয়। নিরাপত্তা বিঘি্নত হলে উদ্যোক্তারা বিনিয়োগে শঙ্কাবোধ করেন। এ কারণে যে রাজনৈতিক সংকট তৈরি হয় এবং তা কখনও কখনও গুরুতর আকার ধারণ করে, সেটাও তো ইলিয়াস আলীর 'নিখোঁজ' ঘটনায় স্পষ্ট। এর প্রতিক্রিয়ায় টানা তিনদিন হরতাল ডাকা হয়েছে এবং আরও কঠোর কর্মসূচির হুশিয়ারি রয়েছে, যা দ্রব্যমূল্য বাড়াতে যেমন ভূমিকা রাখবে, তেমনি সৃষ্টি করবে নতুন অধিক অনিশ্চয়তা। আশা করব, সরকার এসব বিষয় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করবে। পরিস্থিতি যথেষ্টই উদ্বেগজনক এবং তা থেকে বেরিয়ে আসার উদ্যোগ সরকারকেই গ্রহণ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে কালক্ষেপণেরও অবকাশ নেই। বাজেট সংলাপে সরকারের 'শেষ বছরে' অর্থনৈতিক বিবেচনার চেয়ে দলীয় নির্বাচনী স্বার্থকে যেন বড় করে দেখা না হয়, সে সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছে। চলতি বছর বাহবা নিতে উন্নয়ন কর্মসূচি বড় আকারেই গ্রহণ করা হয়েছিল। কিন্তু সরকারের অদক্ষতা ও বৈদেশিক সহায়তা কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় না পাওয়ায় যথেষ্ট কাঁটছাট করা হয়েছে। তার চেয়েও বড় সমস্যা_ ৯ মাসে লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেকও অর্জিত না হওয়া। বাকি সময়ে বরাবরের মতো তাড়াহুড়ায়
সরকার তথা জনগণের বিপুল অর্থ গচ্চা দেওয়া হবে কি?

No comments

Powered by Blogger.