আগামী বাজেট-উন্নয়ন বাজেটে ২০ হাজার কোটি টাকার বৈদেশিক ঋণের প্রস্তাব by আরিফুর রহমান

আগামী অর্থবছরের (২০১২-১৩) উন্নয়ন বাজেটে ২০ হাজার ২০ কোটি টাকা বৈদেশিক ঋণ বরাদ্দের প্রস্তাব করেছে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ। এর মধ্যে বিনিয়োগ প্রকল্পে ১৮ হাজার ৬৩৫ কোটি টাকা এবং কারিগরি প্রকল্পে এক হাজার ৩৮৫ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে।


অনুমোদিত ও চলমান প্রায় ৪০০ প্রকল্পের জন্য এ অর্থ বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। আগামী অর্থবছরের উন্নয়ন বাজেটে যে বৈদেশিক ঋণ বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে, তা চলতি অর্থবছরের মূল বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) বরাদ্দের চেয়ে এক হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা বেশি। আর সংশোধিত এডিপির চেয়ে পাঁচ হাজার ১৯ কোটি টাকা বেশি। মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো এডিপির বিভিন্ন প্রকল্পের বিপরীতে বরাদ্দের প্রস্তাব অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগে (ইআরডি) পাঠিয়েছে। ইআরডি প্রস্তাবগুলো যাচাই-বাছাই করছে।
ইআরডির এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা গতকাল বুধবার কালের কণ্ঠকে জানান, প্রকল্পের বিপরীতে বরাদ্দ চূড়ান্ত করে আগামী সপ্তাহে পরিকল্পনা কমিশনের কার্যক্রম বিভাগে পাঠানো হবে। তিনি জানান, এটি এখনো চূড়ান্তভাবে অনুমোদন দেওয়া হয়নি। আগামী সপ্তাহে অনুমোদন দেওয়া হবে। তবে বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ বাড়তেও পারে। এ ছাড়া থোক হিসেবে কিছু অর্থ বরাদ্দ রাখা হতে পারে।
এদিকে আগামী অর্থবছরের এডিপির আকার ৫৪ হাজার ৩০০ কোটি টাকা হবে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। এর মধ্যে বৈদেশিক ঋণ বাবদ ২০ হাজার কোটি টাকা প্রস্তাব করেছে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ। তাই আগামী অর্থবছরের এডিপিতে সরকারি কোষাগার থেকে ৩৪ হাজার ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিতে হবে।
ইআরডি সূত্র জানায়, পরিবহন খাতে সব মিলিয়ে দুই হাজার ৬৩৪ কোটি টাকা বৈদেশিক ঋণ বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে তৃতীয় কর্ণফুলী সেতু নির্মাণ প্রকল্পে ১০ কোটি টাকা, ইস্টার্ন বাংলাদেশ ব্রিজ ইমপ্রুভমেন্ট প্রকল্পে ১৮০ কোটি, নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলায় তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতু নির্মাণ প্রকল্পে ৩৪ কোটি টাকা বৈদেশিক ঋণ বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া রেলওয়ে খাত উন্নয়ন প্রকল্পে ৪৯৮ কোটি, ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলওয়ে উন্নয়ন প্রকল্পে ৩৪০ কোটি, টঙ্গী-ভৈরব রেলকে ডাবল লাইনে উন্নীতকরণ প্রকল্পে ৪৩৮ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে।
ইআরডি সূত্র জানায়, যোগাযোগ খাতে এক হাজার ২৪২ কোটি টাকা বৈদেশিক ঋণের চাহিদাপত্র দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে থ্রিজি প্রযুক্তি চালুকরণ প্রকল্পে ৭৭৭ কোটি টাকা বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। চীন এ প্রকল্পে ঋণ দিচ্ছে। এ ছাড়া টেলিকমিউনিকেশন নেটওয়ার্ক উন্নয়ন প্রকল্পে ৪৬১ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
শিল্প খাতের মধ্যে সবচেয়ে বেশি অর্থ বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে শাহজালাল সার কারখানা প্রকল্পে। আগামী অর্থবছরের এডিপিতে এ প্রকল্পে সর্বোচ্চ এক হাজার ৩০০ কোটি টাকা বৈদেশিক ঋণ বরাদ্দের প্রস্তাব চাওয়া হয়েছে। এ প্রকল্পে ইতিমধ্যে চীনের সঙ্গে ঋণচুক্তি সই হয়েছে।
সূত্র জানায়, বিদ্যুৎ খাতে দুই হাজার ৭৭০ কোটি ২৬ লাখ টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে পল্লী বিদ্যুৎ আধুনিকায়ন প্রকল্পে ৩৬১ কোটি ৯৫ লাখ টাকা চাওয়া হয়েছে। এ ছাড়া বাংলাদেশের ভেড়ামারা ও ভারতের বহরমপুর বিদ্যুৎ সংযোগ প্রকল্পে ৩৫০ কোটি টাকা বৈদেশিক ঋণ বরাদ্দের প্রস্তাব চাওয়া হয়েছে। এ প্রকল্পে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ঋণ দিচ্ছে।
জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ খাতে ৮৮৩ কোটি ৪১ লাখ বৈদেশিক ঋণ বরাদ্দের প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে ভেড়ামারা-খুলনা গ্যাস ট্রান্সমিশন প্রকল্পে ৬৬ কোটি এবং বাখরাবাদ-সিদ্ধিরগঞ্জ গ্যাস ট্রান্সমিশন পাইপলাইন প্রকল্পে ১২০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব দিয়েছে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ। হযরত শাহজালাল বিমানবন্দর আধুনিকায়নে ২২০ কোটি টাকা বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। ডানিডা এ প্রকল্পে অর্থায়ন করছে।
আগামী অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) বৈদেশিক ঋণ বরাদ্দ নির্ধারণে গত ১৫ এপ্রিল থেকে চার দিন সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সঙ্গে বৈঠক করেছে ইআরডি। এতে কৃষি, পল্লী উন্নয়ন ও পল্লী প্রতিষ্ঠান, পানিসম্পদ, শিল্প, শিক্ষা ও ধর্ম, ক্রীড়া ও সংস্কৃতি, স্বাস্থ্য পুষ্টি জনসংখ্যা ও পরিবার কল্যাণ, গণসংযোগ, সমাজকল্যাণ, জনপ্রশাসন, বিজ্ঞান, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান, বিদ্যুৎ, তেল-গ্যাস ও প্রাকৃতিক সম্পদ, পরিবহন, যোগাযোগ, ভৌত, পরিকল্পনা, পানি সরবরাহ ও গৃহায়ণ সেক্টরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক করে ইআরডি।

No comments

Powered by Blogger.