সামনের সব কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ হোক-ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ কেন?

দেশের রাজনীতি কী অনিশ্চিত পথে ধাবিত হচ্ছে, তা ভেবে আমরা উদ্বেগ ও শঙ্কা বোধ করছি। বিএনপির নেতা ইলিয়াস আলী তাঁর গাড়িচালকসহ নিখোঁজ হওয়ার প্রতিবাদে বিএনপি ইতিমধ্যে পর পর তিন দিন হরতাল পালন করেছে। হরতাল শুরুর আগের দিন থেকে শেষ দিন ২৪ এপ্রিল পর্যন্ত,


বিশেষ করে সিলেট জেলার বিশ্বনাথসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। দুজন মানুষ নিখোঁজ হওয়ায় যে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে, তার ফলে ঝরে গেল পাঁচটি প্রাণ। বিএনপির পক্ষ থেকে সামনে আবারও যেসব কঠোর কর্মসূচির ঘোষণা করা হয়েছে, তাতে না জানি আরও কত রক্ত ঝরবে!
২৪ এপ্রিল দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এক সংবাদ সম্মেলনে ঘোষণা করেছেন, আজ বৃহস্পতিবার সারা দেশে বিক্ষোভ-সমাবেশ এবং ২৮ এপ্রিল থানা শহরগুলোতে বিক্ষোভ-মিছিল হবে। ২৮ এপ্রিলের মধ্যেই ইলিয়াস আলী ও তাঁর গাড়িচালককে তাঁদের পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার সময়সীমা বেঁধে দিয়ে খালেদা জিয়া বলেছেন, নইলে ২৯ এপ্রিল থেকে আবারও কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে।
ইলিয়াস আলী ও তাঁর গাড়িচালককে উদ্ধার করা সরকারের অবশ্যকর্তব্য। সরকার এখনো পর্যন্ত তা করতে ব্যর্থ হয়েছে। সুতরাং, খালেদা জিয়ার এই বক্তব্য সঠিক যে, যেহেতু তাঁদের জনসমক্ষে হাজির করা হয়নি, সেহেতু আন্দোলন থামানোর কোনো সুযোগ নেই।
কিন্তু তিন দিনের হরতাল ও আনুষঙ্গিক নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির ব্যাপারে জনগণের প্রতিক্রিয়া নেতিবাচক। জবরদস্তিমূলক, সহিংস কোনো কর্মসূচিই গ্রহণযোগ্য নয়। হরতাল আহ্বান করে জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত সাড়ার অপেক্ষায় না থেকে হরতাল আহ্বানকারীরা যদি ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগসহ নানা হঠকারী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়ে ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি করেন, তাহলে সেটাকে নিয়মতান্ত্রিকভাবে রাজনৈতিক অধিকার প্রয়োগ বলা যায় না। কারণ, তার ফলে নাগরিকদের শান্তি, নিরাপত্তা ও জীবিকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। হরতালসহ রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন গণতান্ত্রিক অধিকার বটে; তবে একই সঙ্গে নাগরিকদের নিরাপদে চলাফেরা, জীবিকা উপার্জন, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড চালানোর অধিকারও সংবিধানে নিশ্চিত করা হয়েছে।
সুতরাং, আন্দোলন চালাতে গিয়ে বিএনপিকে নিশ্চিত করতে হবে: সামনের সব কর্মসূচি হবে শান্তিপূর্ণ; জবরদস্তিমূলক, ভীতিসঞ্চারী নয়। ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ থেকে বিরত থাকতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.