ঘুরেফিরে সেই চার দল by একরামুল হক

চট্টগ্রামে বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটে চারটির বেশি দল নেই। প্রায় এক যুগ আগে গড়ে ওঠা চারদলীয় জোটের বিলুপ্তি ঘটে ১৮ এপ্রিল। ওই দিন বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ১৮ দলীয় জোট গঠনের ঘোষণা দেন। কিন্তু চট্টগ্রামে এর কোনো অস্তিত্ব নেই। ঘুরেফিরে চারটি দলই শুধু সক্রিয় রয়েছে।


খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৮টি দলের মধ্যে সাংগঠনিকভাবে চট্টগ্রামে বিএনপির অবস্থান সবচেয়ে মজবুত। এর পরেই রয়েছে জামায়াতে ইসলামী। পরের অবস্থান ইসলামী ঐক্যজোটের। এ ছাড়া এলডিপিরও একটি শক্ত অবস্থান আছে দক্ষিণ চট্টগ্রামে। বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি ছাড়াও জামায়াতে ইসলামী ও এলডিপির প্রার্থী একটি করে আসনে জিতেছেন।
নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শাহাদাৎ হোসেন এ প্রসঙ্গে প্রথম আলোকে বলেন, ‘ইলিয়াস আলীর মুক্তির দাবিতে ১৮ দলীয় জোটের নেতাদের নিয়ে আমাদের চট্টগ্রামে বৈঠকে বসার কথা ছিল। আসলে জোটের মধ্যে সব কটি দলের স্থানীয় নেতাদের আমরা চিনি না। তাই আমাদের ওই বৈঠক হয়নি। তবে ঢাকাতে তো সব কটি দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক রয়েছেন। তাঁরা কাউকে না কাউকে চট্টগ্রামের দায়িত্ব দেবেন। পরে না হয় জোটের স্থানীয় নেতাদের নিয়ে আমরা বৈঠক করব।’
বিএনপি ও এলডিপি নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চট্টগ্রামে জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা) প্যাডসর্বস্ব সংগঠন। এই সংগঠনের নেতা-কর্মীদের অবস্থান সম্পর্কে কেউ কিছু জানাতে পারেননি। তবে পত্রিকা কার্যালয়ে বিভিন্ন বিবৃতি পাঠিয়ে আসছে সংগঠনটি। মাঝেমধ্যে মুসলিম লীগের প্যাডেও দু-একটি বিবৃতি পত্রিকা কার্যালয়ে আসে। মাঠে-ময়দানে সংগঠনটির অস্তিত্ব সম্পর্কে বিএনপির নেতারা কোনো ধারণা দিতে পারেননি। ১৮ দলীয় জোটের মধ্যে অন্য দলগুলোর ব্যাপারেও তাঁরা কিছু জানাতে পারেননি।
জামায়াতে ইসলামীর নগর কমিটির আমির ও সাংসদ শামসুল ইসলাম বলেন বিপরীত কথা। তাঁর প্রশ্ন—‘কে বলেছে চট্টগ্রামে ১৮ দলের অস্তিত্ব নেই? আপনি চায়ের দাওয়াত দেন তখন সবাইকে চিনতে পারবেন।’
সাংসদ শামসুল ইসলাম আরও বলেন, ‘সরকারবিরোধী আন্দোলনে প্রতিটি সংগঠনের স্থানীয় নেতাদের মাঠে-ময়দানে দেখা যাবে। তখন সবাইকে চেনা যাবে। এজন্য বেশি দিন অপেক্ষা করতে হবে না।’
লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব শাহাদাৎ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, এলডিপি, ইসলামী ঐক্যজোট ও কল্যাণ পার্টি ছাড়া ১৮ দলীয় জোটের আর কোনো দল আমার চোখে পড়ছে না। তবে জোটে যাঁরাই থাকুন, তাঁদের নিয়ে আন্দোলন চলবে।’
শাহাদাৎ হোসেন আরও বলেন, চট্টগ্রামে এলডিপির অবস্থানও শক্ত। কারণ, কর্নেল (অব.) অলি আহমদের গ্রহণযোগ্যতা আছে। তাই গত জাতীয় নির্বাচনে তিনি দুই বড় সংগঠনের প্রার্থীকে পরাজিত করে জয়ী হন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কল্যাণ পার্টির প্রধান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিমের গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে। সেনা-অভ্যুত্থানে জড়িত থাকার অভিযোগে ১৯৯৬ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি আবদুর রহমান বিশ্বাস কয়েকজন ঊর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তার সঙ্গে তাঁকেও চাকরিচ্যুত করেন। অনেক দিন তিনি লেখালেখি এবং টেলিভিশনের টক শো-তে ব্যস্ত ছিলেন। গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে তিনি গঠন করেন কল্যাণ পার্টি। এর প্রধান তিনি নিজেই। তাঁর সংগঠনের কর্মকাণ্ড রাজধানী ঢাকাতেই সীমাবদ্ধ বলে জানা গেছে।
চট্টগ্রামে জাতীয় পার্টির একাংশের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম বিএনপিতে যোগ দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন জামায়াতের সাংসদ শামসুল ইসলাম। তিনি এ প্রসঙ্গে বলেন, জাহাঙ্গীরের পরিবর্তে নুর মোহাম্মদ খান এখন চট্টগ্রামের দায়িত্বে আছেন।
বিএনপির নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রাতারাতি সংগঠন সৃষ্টির ক্ষেত্রে জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবির পারদর্শী। যেকোনো ইস্যুতে ভিন্ন ব্যানারে জামায়াতে ইসলাম ও শিবির আন্দোলন-সংগ্রাম গড়ে তুলতে সক্ষম। ১৮ দলীয় জোটের শূন্যস্থান পূরণে জামায়াতের পেছনের সারির নেতারা এগিয়ে আসলে বিস্মিত হওয়ার কিছু থাকবে না। তখন চট্টগ্রামের ১৮ দলীয় জোটে জামায়াতের প্রভাব আরও মজবুত হতে পারে বলে খোদ বিএনপির নেতারা মন্তব্য করেছেন।
উল্লেখ্য, জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী ঐক্যজোট, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি, খেলাফত মজলিশ, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ছাড়া বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটে নতুন করে যোগ হয়েছে এলডিপি, কল্যাণ পার্টি, জাগপা (জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি), এনপিপি (ন্যাশনাল পিপলস পার্টি), বাংলাদেশ লেবার পার্টি, এনডিপি (ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি), বাংলাদেশ ন্যাপ (বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি), মুসলিম লীগ, ইসলামিক পার্টি, ন্যাপ ভাসানী, ডেমোক্রেটিক লীগ ও পিপলস লীগ।

No comments

Powered by Blogger.