রাজধানীতে সাত ভুয়া চিকিৎসকের কারাদণ্ড

উচ্চমাধ্যমিক পাসের পরে আল আমিন বছর খানেক এক দাঁতের চিকিৎসকের চেম্বারে সহকারীর কাজ করেছিলেন। এরপর তিনি নিজে দাঁতের চিকিৎসক সেজে রোগী দেখা শুরু করেন। দন্ত চিকিৎসালয়ের মালিকও হন। এম কাওসার আহমেদের ইতিহাসও একই রকম।


গতকাল রোববার রাজধানীর উত্তরখান, দক্ষিণখান ও দারুসসালাম এলাকার বিভিন্ন চিকিৎসালয়ে অভিযান চালিয়ে র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত আল আমিন ও কাওসারের মতো সাতজন ভুয়া চিকিৎসককে প্রতারণার অভিযোগে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দিয়েছেন। কার্ড ও প্যাডে এরা নামের আগে ‘ডাক্তার’ শব্দটি বসিয়েছেন, কেউ সেজেছেন ‘অভিজ্ঞ’, ‘বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক’। লাগিয়েছেন নানা ডিগ্রি। এদের পেশাচর্চার অনুমোদন নেই।
দণ্ড পাওয়া অন্য পাঁচজন হলেন, আতিয়ার রহমান, হাসিনা বেগম, এস এম মহিউদ্দীন, ফাতেমা সাখাওয়াত হোসেন ও আনোয়ার হোসেন।
গতকাল র‌্যাব সদর দপ্তরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের হাজির করা হয়। র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক এম সোহায়েল সাংবাদিকদের বলেন, বাংলাদেশ মেডিকেল ও ডেন্টাল কাউন্সিল ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে নিয়ে র‌্যাবের সাতটি অভিযান দল ও তিনটি ভ্রাম্যমাণ আদালত দিনভর কাজ করে সাতজন ভুয়া চিকিৎসককে চিহ্নিত করেন। আদালত তাৎক্ষণিকভাবে এদের দণ্ডিত করেন।
কথিত ‘জেনারেল প্রাকটিশনার’ আতিয়ার রহমানকে দেড় বছরের কারাদণ্ড ও দেড় লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। আয়ুর্বেদিক কলেজ থেকে পাস করা আতিয়ার নামের আগে ‘ডাক্তার’ আর শেষে ‘এমবিবিএস’ লগিয়ে রোগী দেখছিলেন। একইভাবে আয়ুর্বেদিক কলেজে পড়ে ‘অ্যালোপ্যাথিক’ চিকিৎসক সেজেছেন আনোয়ার হোসেন। তাঁকে দুই বছরের দণ্ড দেওয়া হয়েছে।
হাসিনা বেগমের কার্ডে লেখা ‘গাইনি ও মেডিকেল বিষয়ে অভিজ্ঞ’। খুলে বসেছেন হাসিনা মেডিকেল সেন্টার। তাঁর শুধু ‘প্যারামেডিকস’ কোর্সের একটি সনদ আছে। তাঁকে ছয় মাসের কারাদণ্ড ও দুই লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। হাসিনা মেডিকেল সেন্টারের অন্য কথিত চিকিৎসক মহিউদ্দীনের শিক্ষাগত যোগ্যতার কোনো সনদ নেই। একটি বেসরকারি হাসপাতালে সহকারী ছিলেন। তাঁকে এক বছরের কারাদণ্ড ও এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
আরমান ক্লিনিক অ্যান্ড নার্সিং হোমের মালিক ফাতেমা সাখাওয়াত হোসেন দুই বছরের প্যারামেডিকস কোর্স করে ‘গাইনি চিকিৎসক’ হয়েছেন। অনুমোদন না থাকায় তাঁর ক্লিনিকটিও বন্ধ করে দিয়েছেন আদালত। আর তাঁকে দুই বছরের দণ্ড ও দুই লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
কথিত দুই দন্ত চিকিৎসক আল আমিন ও কাওসার আহমেদকে এক বছরের কারাদণ্ড ও দুই লাখ টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। আল আমিনের দি সিটি ডেন্টাল আর কাওসারের সেবা ডেন্টাল কেয়ার বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সাংবাদিকদের কাছে দুজনই দাবি করেছেন, তাঁরা ‘ডাক্তারের মতোই’ রোগীদের সেবা দেন।
ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনাকারী র‌্যাবের ম্যাজিস্ট্রেট আনোয়ার পাশা বলেন, কথিত দাঁতের চিকিৎসকেরা প্রতিবার রোগীর কাছ থেকে ৫০০ টাকা করে নিতেন। কেউ তাঁদের সন্দেহ করেনি।

No comments

Powered by Blogger.