ছয় দশকে চার গুণ by শুভাশিস ব্যানার্জি শুভ

পৃথিবী এখন বিজ্ঞানের কলাকৌশলের একটি ধ্রুব অংশ। এখানের বর্তমান প্রেক্ষাপট বিশ্লেষণে সর্বাধিক আলোচ্য এবং বিপজ্জনক কারণটি হচ্ছে, জনসংখ্যার অত্যধিক ঘনত্ব। অধিক জনসংখ্যার প্রভাবে পৃথিবী ক্রমান্বয়ে ভারসাম্য ও স্বকীয়তা হারিয়ে ফেলছে।


প্রকৃতির ভারসাম্য ও পরিবেশ রক্ষার জন্য যে বিষয়টির প্রতি নজর দেওয়া আবশ্যক, সেটি হলো পরিবার পরিকল্পনা। ছোট পরিবারে শিক্ষা বিস্তার যেমন দ্রুত সম্ভব, তেমনি সম্ভব দারিদ্র্যের অভিশাপ থেকে পরিত্রাণ পাওয়া। বাংলাদেশের মতো একটি উন্নয়নশীল দেশ যেখানে ৬০ শতাংশ মানুষ বসবাস করে দারিদ্র্যসীমার নিচে, সেখানে পরিবার পরিকল্পনা প্রণয়নের ধাপগুলোকে সর্বাধিক গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করাই সময়ের অন্যতম মুখ্য দাবি।
জানা যায়, ১৯৮৭ সালে বিশ্বের জনসংখ্যা ৫০০ কোটিতে উপনীত হয়। পরীক্ষা করে দেখা যায়, ১৯৫০ থেকে ১৯৫৫ সালে বিশ্বের জনসংখ্যায় বছরে যুক্ত হতো ৪ কোটি ৭০ লাখ মানুষ। ১৯৮৫ থেকে ১৯৯০-এর সময়ে এ হার উন্নীত হয় ৮ কোটি ৬০ লাখে। এই দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়টি বিশ্ববাসীর মনোযোগ আকর্ষণ করে এবং এ ক্ষেত্রে জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ গ্রহণের আবশ্যকতা অনুভূত হয়। বিশেষত জনসংখ্যা বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে সমস্যাগ্রস্ত উন্নয়ন পরিকল্পনা ও কর্মসূচি নিরিখে বিষয়টি ভেবে দেখা হয়। এ ক্ষেত্রে আরও পরিলক্ষিত হয়, ১৯২৭ সালে বিশ্বে মোট জনসংখ্যা ছিল মাত্র ২০০ কোটি। ১৯৬০ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৩০০ কোটিতে। ক্রমেই জনসংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়টি অনেকটা সতর্ক সংকেতের রূপ লাভ করতে থাকে। ফলে ১৯৮৯ সালে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) সুপারিশে প্রতিবছর ১০ জুলাই 'বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস' পালনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। ১৯৬০ সালে বিশ্বে জনসংখ্যা বৃদ্ধির ৭০ শতাংশ ছিল উন্নয়নশীল দেশগুলোতে। এ হার বেড়ে এখন দাঁড়িয়েছে ৮০ শতাংশে। অন্য পক্ষে জনসংখ্যা বৃদ্ধির ১৫ শতাংশ ঘটে পৃথিবীর উন্নয়নশীল দেশগুলোতে। বর্তমানে বিশ্বের জনসংখ্যা ৮০০ কোটি অতিক্রম করেছে। ১৯৬০ সালের ৩০০-এর স্থলে বর্তমানে ৮০০ কোটি জনসংখ্যায় উপনীত হওয়ার পেছনে যেসব গুরুত্বপূর্ণ বা নির্ধারকের ভূমিকা, তা হচ্ছে 'মৃত্যুহারের নজিরবিহীন হ্রাস'। উন্নয়নশীল দেশগুলোর অগ্রগতির অন্তরালে জনসংখ্য বৃদ্ধি একটি মৌলিক এবং অনস্বীকার্য সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত। খুব স্বাভাবিকভাবেই একটি উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশও এ সমস্যার ঊর্ধ্বে নয়। আর তাই জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে রাখতে বাংলাদেশে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে ব্যাপক উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে এবং হচ্ছে। পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতির মাধ্যমে সত্তরের দশকে জনসংখ্যা বৃদ্ধি হ্রাসের হার ৮ থেকে ৫১ শতাংশে উন্নীত করা সম্ভব হয়েছে। বাংলাদেশ সরকারের লক্ষ্য ছিল, ২০০৫ সালের মধ্যে সর্বজনীন দু'সন্তানের পরিবার গড়ে তোলা বা এনআরআর-১ অর্জন করা। এ লক্ষ্যে পাঁচ বছরব্যাপী স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা কার্যকর প্রোগ্রামের আওতায় ১৯৯৮ সালের জুলাই থেকে প্যাকেজসেবা প্রদানের কর্মসূচিও গ্রহণ করা হয়েছিল। কিন্তু সে কর্মসূচি কতটা সফল তা প্রশ্নবিদ্ধ!
প্রসঙ্গত, ১৯৫১ সালে বর্তমান বাংলাদেশ নামের ভূখণ্ডে জনসংখ্যা ছিল মাত্র ৪ কোটি। আজ তা প্রায় ১৬ কোটি। আশঙ্কা করা হচ্ছে, ২০২০ সালে এ সংখ্যা ২১ কোটি ছাড়িয়ে যাবে। জনসংখ্যার এ বৃদ্ধি বাংলাদেশের অর্থনীতিতে, সামাজিক জীবনে, পরিবেশ সংরক্ষণে, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পুষ্টি এবং সর্বোপরি কর্মসংস্থানে এক ভয়াবহ পরিস্থিতির অশনি সংকেত। সরকারি হিসাব অনুযায়ী জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ৩ থেকে ১.৬ শতাংশে নেমে এসেছে বলে দাবি করা হলেও বেসরকারি হিসাবের পরিপন্থী। ১৯৬৯ সালে গঠিত জাতিসংঘ তহবিলের (ইউএনইপিএ) স্বেচ্ছায় দেওয়া চাঁদায় উন্নয়নশীল দেশগুলোর জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে সর্বাধিক সহায়তা দিয়েই যাচ্ছে। এ তহবিলের প্রধান কাজ হচ্ছে, আন্তর্জাতিক ভিত্তিতে জনসংখ্যা ও পরিবার পরিকল্পনার চাহিদার প্রতি সাড়া দানের সমর্থন গড়ে তোলা, জনসংখ্যা প্রশ্নে সচেতনতা সৃষ্টি, জনসংখ্যা কর্মসূচি ও প্রকল্প প্রণয়নে সরকারগুলোকে সহায়তা করা এবং সেগুলো বাস্তবায়নে আর্থিক সাহায্যের ব্যবস্থা করা। বাংলাদেশ জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিলের নির্দেশনা অনুযায়ী ১৯৯০ সাল থেকে বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস পালন করে আসছে। নারীর নিরাপদ জীবন সামাজিক জীবনে উন্নয়নের প্রতিফলন ঘটাতে পারে_ এই ব্রতের আলোকে দিবসটি পালন করা বাঞ্ছনীয়।
jsb.shuvo@gmail.com
 

No comments

Powered by Blogger.