উপকূলীয় উন্নয়নচিত্র

প্রকল্প অসমাপ্ত কিন্তু বরাদ্দের টাকা শেষ কেন? প্রাকৃতিক দুর্যোগপূর্ণ এ দেশের, বিশেষ করে উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের জীবন বলতে গেলে প্রায় সব সময়ই বিপদসংকুল। এই উপকূলবাসীকে জলোচ্ছ্বাস ও ঘূর্ণিঝড়ের থাবা থেকে রক্ষার জন্য বিস্তীর্ণ উপকূলজুড়ে সবুজ বেষ্টনী গড়ে তোলা হলেও দেখভালের অভাবে সেই বন এখন আর বন নেই।


অন্যদিকে, উপকূলীয় উন্নয়ন প্রকল্প এখনো বাস্তবায়িত হয়নি। উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণের পর দীর্ঘ ৯টি বছর কেটে গেলেও ২৪টি ইউনিয়ন পরিষদ ভবনের একটিও নির্মিত হয়নি, ১১টি সাইক্লোন শেল্টারের কাজ এখনো অনেক বাকি। অথচ আবার ফিরে এলো দুর্যোগপ্রবণ মৌসুম। বারবার প্রকল্প পরিচালক বদল, প্রকল্প সংশোধন, উন্নয়ন সহযোগীদের প্রতিশ্রুতি ইত্যাদির বৃত্তবন্দি হয়ে আছে উন্নয়ন।
সিডর এবং আইলায় দেশের উপকূলীয় অঞ্চলের বিভিন্ন জনপদে যে ক্ষত সৃষ্টি হয়েছিল, তা আজও শুকায়নি। বিপুল প্রাণহানির সঙ্গে ঘটেছিল সম্পদহানিও। এখনো সেসব অঞ্চলের অসংখ্য মানুষ বয়ে বেড়াচ্ছে নানা রকম বিড়ম্বনা। ঘুরে দাঁড়ানোর অবিরাম চেষ্টা সত্ত্বেও এখনো অনেক মানুষ ফিরে যেতে পারেনি আগের জায়গায়। সরকারের তরফে ওই সব মানুষের কল্যাণে কোটি কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নেওয়া হলেও সেসবের সিংহভাগই এখন পর্যন্ত হয়নি বাস্তবায়িত। সবুজ বেষ্টনী উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের অনেকটা রক্ষাকবচ। অথচ সেই সবুজ বেষ্টনীর অসংখ্য গাছ কেটে নিয়ে গেছে স্বার্থান্বেষী মহল। অভিযোগ আছে, বন বিভাগের এক শ্রেণীর অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীর যোগসাজশে এখনো এই আত্মঘাতী কর্মকাণ্ড চলছে। বিলম্বে হলেও সেনাবাহিনীকে বনায়নের দায়িত্ব প্রদানের যে সিদ্ধান্ত হয়েছে, তা ইতিবাচক। অন্যদিকে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরীবিক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৯ বছরে ১৮৯ কোটি টাকা খরচ করার পর প্রকল্পের ইতি টানা হলেও অনেক কাজই অসমাপ্ত রয়ে গেছে। সব উপকূলীয় এলাকায় গ্রামীণ অবকাঠামো গড়ে তোলার উন্নয়ন প্রকল্প ব্যর্থ হয়েছে। অথচ দুর্যোগপ্রবণ এলাকায় অবকাঠামোগত অত্যন্ত জরুরি। বরাদ্দের অর্থ খরচের খাতায় উঠে গেলে উপকূলের অনুন্নয়ন চিত্র অনেক প্রশ্নই দাঁড় করায়।
দেশের জনগোষ্ঠীর যে অংশ উপকূলবাসী তাদের জীবনযাপন ঝুঁকিমুক্ত ও মসৃণ করার লক্ষ্যে অদূরদর্শিতা, অপরিকল্পনা আর নানা অসংগতির যে খতিয়ান রয়েছে, তা একদিকে যেমন বিস্ময়কর, অন্যদিকে প্রশ্নবোধকও। পরিস্থিতি বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, প্রাকৃতিক দুর্যোগের পর সাহায্য-সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি, অঙ্গীকার কিংবা শুধু আশ্বাসের ভিত্তিতে মানুষকে তোলার অর্থহীন চেষ্টা যেন রুটিনওয়ার্কে পরিণত হয়েছে। মানুষ একদিকে প্রকৃতির বৈরী আচরণ, অন্যদিকে বঞ্চনা সহ্য করে এখন পর্যন্ত বেঁচে ও টিকে আছে তাদেরই প্রাণান্ত চেষ্টায়। এ পরিস্থিতি অত্যন্ত দুঃখজনক। আমাদের প্রত্যাশা সরকার বাস্তবতা আমলে নিয়ে বিপন্ন-বিপর্যস্তদের কল্যাণকাজ দ্রুত সম্পন্ন করবে এবং তাদের জীবনযুদ্ধে সহযাত্রী হয়ে সার্বিক পরিস্থিতির উন্নতি ঘটাবে। প্রতিশ্রুত বিদেশি সাহায্য ফিরিয়ে আনতে এবং গ্রহণ করে সাহায্য-সহযোগিতা পাওয়ার ক্ষেত্রে জোরদার প্রচেষ্টা চালাতে হবে। সময় বয়ে গেছে অনেক, আর যেন তা না হয়, এ ব্যাপারে সতর্ক থাকা চাই।

No comments

Powered by Blogger.