দক্ষিণ সুদান-নতুন দেশ নতুন সম্ভাবনা

আমাদের মতোই এক সাগর রক্তের বিনিময়ে স্বাধীনতা লাভ করল দক্ষিণ সুদান। সাবেক সুদানের উত্তর অংশের সঙ্গে শান্তি চুক্তি এবং দক্ষিণের গণভোটে নিরঙ্কুশ রায়ের পরিণতি হচ্ছে এই শান্তিপূর্ণ স্বাধীনতা ঘোষণা। আমরা আশা করি, এর মধ্য দিয়ে ওই অঞ্চলে সাড়ে পাঁচ দশকের বিরোধ, দুই দশকের গৃহযুদ্ধে যে তিক্ততা জমেছিল, তার অবসান হবে।


৯ জুলাইয়ের মাহেন্দ্র ক্ষণটি সদ্য স্বাধীন অংশে যেভাবে নেচে-গেয়ে উদযাপিত হয়েছে, তাতে নতুন সীমান্তের অন্য পাশের আনন্দ ও স্বস্তিও প্রতিফলিত হয়েছে বলে আমরা বিশ্বাস করি। স্বাধীনতাপ্রাপ্তির বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানে অখণ্ড সুদানের সর্বশেষ প্রেসিডেন্ট ওমর আল বশিরের উপস্থিতি উত্তর অংশের শুভেচ্ছাই বহন করেছে। গোষ্ঠী ও আঞ্চলিকতাবাদে বিভক্ত আফ্রিকা মহাদেশের বিবদমান পক্ষগুলো যদি এভাবে শান্তিপূর্ণ সমাধান খুঁজে নেয়, দক্ষিণ সুদানের স্বাধীনতা নিঃসন্দেহে আরও তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠবে। জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক পক্ষগুলো আন্তরিক হলে যে কোনো বিরোধই যে মীমাংসাযোগ্য, ঐতিহাসিক এ ঘটনা সে বার্তাই রটিয়ে দিচ্ছে। কেবল আনুষ্ঠানিকতা নয়, দক্ষিণের তেলক্ষেত্রসহ খনিজ সম্পদের সুষম বণ্টনের মাধ্যমে সুদানের শান্তি টেকসই করার দায়িত্বও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশেরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার অবকাশ রয়েছে। আমরা জানি, ২০০৫ সাল থেকে সুদানে নিযুক্ত জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী মিশনের অংশ হিসেবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সাফল্যের সঙ্গে কাজ করে চলছে। দক্ষিণ সুদানের সর্বোচ্চ পর্বতচূড়া কিনিতায় ২৭ জুন নতুন দেশের পতাকা স্থাপনের দুঃসাহসিক কাজটি করে আমাদের সেনাবাহিনীর সদস্যরা এরই মধ্যে বিপুল প্রশংসা কুড়িয়েছেন। নতুন দেশ গঠনেও তারা সাফল্য অর্জন করবেন বলে প্রত্যাশা। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকও দক্ষিণ সুদানে স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে কাজ করছে। সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে ভারত এরই মধ্যে স্বীকৃতি দেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। বাংলাদেশও শিগগিরই ইতিবাচক পদক্ষেপ নেবে আশা করা যায়। অনেক ত্যাগ ও রক্তের বিনিময়ে পাওয়া স্বাধীনতার মূল্য আমরা জানি। দক্ষিণ সুদান স্বাধীনতার মর্যাদা রক্ষা ও সুফল লাভে সফল হোক_ নতুন দেশটি নিয়ে এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
 

No comments

Powered by Blogger.