কাপ্তাই বাঁধ হুমকিতে-পানিবিদ্যুৎ প্রকল্পটি বাঁচিয়ে রাখুন

ষাটের দশকে পার্বত্য চট্টগ্রামের কাপ্তাইয়ে কর্ণফুলী নদীতে বাঁধ দিয়ে স্থাপন করা হয় দেশের প্রথম পানিবিদ্যুৎ কেন্দ্র। এ থেকে বিদ্যুৎ মেলে স্বল্প খরচে। একই সঙ্গে বাঁধ ও নবসৃষ্ট হ্রদ বা লেক এলাকা পরিণত হয় আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্রে। আলোর এ উৎসের নিদারুণ অন্ধকার দিকও ছিল_ কাপ্তাই হ্রদের পানি প্লাবিত করে বিপুল এলাকা।


প্রধানত পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর বসতবাড়ি, সহায়-সম্পদ ও ফসলের জমি তলিয়ে যায় পানিতে। রাজবাড়ীর মতো ঐতিহাসিক স্থাপনারও সলিলসমাধি ঘটে। অন্তত এক লাখ উদ্বাস্তু হয়। তাদের যন্ত্রণা-কষ্ট ক্ষোভে পরিণত হলে তৎকালীন শাসকরা বেছে নেন নিষ্ঠুর নিপীড়নের পথ। ঘরবাড়িহীন হাজার হাজার নারী-পুরুষ-শিশুকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাড়িয়ে বেড়ায় এবং অনেককে দেশান্তরী হতে বাধ্য করা হয়। এর প্রতিক্রিয়ায় সৃষ্টি হয় সুদূরপ্রসারী আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক সমস্যা। প্রতিবেশী দেশের সঙ্গেও সম্পর্কে সৃষ্টি হতে থাকে তিক্ততা। রোববার সমকালে 'দেশের একমাত্র পানিবিদ্যুৎ কেন্দ্র হুমকিতে :কাপ্তাই বাঁধ মৃত্যুর মুখে' শিরোনামের খবর দেখে ভুক্তভোগীরা প্রশ্ন করতেই পারেন, তাহলে কেন তাদের জীবন এমন দুঃসহ করে তোলা হয়েছিল? কাপ্তাইয়ের পাঁচটি ইউনিট থেকে সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ পাওয়া যায় মাত্র ২৩০ ইউনিট। শুষ্ক মৌসুমে হ্রদের পানি ভীষণ হ্রাস পায় এবং এতে প্রতিবছরই এ সময়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন বিপুলভাবে হ্রাস পায়। চলতি বছর যা নেমে গিয়েছিল ৪৮ মেগাওয়াটে। সমকালের প্রতিবেদনে বলা হয়, অযত্ন-অবহেলা, হ্রদে কচুরিপানার স্তূপ, তলদেশ ভরাটসহ বিভিন্ন কারণে কাপ্তাই বাঁধ এখন হুমকির মুখে। ভূমিকম্প আঘাত হানলে বাঁধের অস্তিত্ব নিয়ে বিশেষজ্ঞদের সংশয় প্রবল। হ্রদে এখন অবগাহনের উপায় নেই। স্বচ্ছ কাচের মতো পানিই ছিল দেশি-বিদেশি পর্যটকদের বড় আকর্ষণ। এখন তা মারাত্মক দূষণের শিকার। হ্রদে কচুরিপানার স্তূপ নৌযান চলাচলও রীতিমতো অসম্ভব করে তোলে। অথচ কাপ্তাই বাঁধের আয়ুষ্কাল ধরা আছে ১০০ বছর এবং এখন পর্যন্ত তার মাত্র অর্ধেক অতিক্রান্ত হয়েছে। দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন ধারাবাহিকভাবে বেড়ে চলেছে। লোডশেডিংয়ের তীব্র যন্ত্রণা থাকার পরও আশার আলোর মতো সরকারি ঘোষণা রয়েছে যে, ২০১৫ সালে উৎপাদন ১৫ হাজার মেগাওয়াট ছাড়িয়ে যাবে। গ্যাস, ডিজেল, ফার্নেস অয়েল, সৌরশক্তি_ নানা ধরনের জ্বালানি এখন বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহার করা হচ্ছে। পারমাণবিক শক্তি কাজে লাগিয়েও বিদ্যুৎ উপাদনের প্রকল্প আমাদের হাতে রয়েছে। এ অবস্থায় সর্বোচ্চ ২৩০ মেগাওয়াট ক্ষমতার কাপ্তাই পানিবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি টিমটিম করে চলতে থাকলে তার অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা আদৌ প্রয়োজনীয় কি-না, এ প্রশ্ন নিশ্চয়ই উঠবে। কাপ্তাই বাঁধ রক্ষণাবেক্ষণ ও সংস্কারের দায়িত্ব যাদের ওপর ন্যস্ত, তারা এরপরও কি সক্রিয় হবেন না? কেন্দ্রটি থেকে সম্ভাব্য সর্বোচ্চ যে বিদ্যুৎ মেলে, তার পরিমাণ দেশের প্রয়োজনের তুলনায় সামান্য। কিন্তু এর উৎপাদন ব্যয় তুলনামূলক কম এবং কালের যাত্রায় হ্রদটিও নিজের এক ধরনের উপযোগিতা তুলে ধরেছে। সবচেয়ে বড় কথা, এটি হচ্ছে দেশের একমাত্র পানিবিদ্যুৎ প্রকল্প। এমন উৎস কি বন্ধ হয়ে যেতে দেওয়া হবে?
 

No comments

Powered by Blogger.