কার্যকারিতাও বাড়ানো দরকার-সংসদীয় কমিটি পুনর্গঠন

জাতীয় সংসদের কার্যকারিতার একটি দিক হলো সংসদীয় স্থায়ী কমিটিগুলোর সক্রিয় ভূমিকা। সংসদ ও সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মধ্যে যোগসূত্র হলো এই কমিটিগুলো। এক অর্থে সরকারি কাজকর্মের নীতিগত ও প্রায়োগিক দিকগুলো দেখভাল করার বেলায় সংসদীয় কমিটিগুলোর ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।


কিন্তু প্রায়ই দেখা যায়, কমিটিগুলো ঠিকমতো গঠিত হয় না কিংবা গঠিত হলেও তাদের কাজকর্ম প্রশ্নের ঊর্ধ্বে থাকে না। গতকাল বুধবারের প্রথম আলোয় দেখা যায়, পাট মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির একজন সদস্য কমিটির একটি বৈঠকেও উপস্থিত হননি। অন্যদিকে চারটি স্থায়ী কমিটি পুনর্গঠিত হওয়ার সংবাদও একই দিনের পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। কমিটিগুলোতে এমন কয়েকজন সাংসদ অন্তর্ভুক্ত ছিলেন, যাঁদের ব্যক্তিগত ও ব্যবসায়িক স্বার্থ জড়িত ছিল। সুখবর এই যে, পুনর্গঠিত কমিটি থেকে তাঁরা বাদ পড়েছেন। সংসদের কার্যবিধি অনুযায়ী এসব কমিটিতে থাকারও সুযোগ ছিল না। কিন্তু এখনো অনেক ক্ষেত্রে ব্যত্যয় লক্ষ করা যায়।
সংসদীয় কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে একটি আবশ্যকীয় শর্ত হলো, কোনো বিষয়ে তদারকির জন্য এমন কাউকে না নেওয়া, যাঁর ওই বিষয়ের সঙ্গে স্বার্থসংশ্লিষ্টতা রয়েছে। এটি জাতীয় সংসদের কার্যবিধির ১১৮ ধারার নির্দেশিকা। গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটিতে যে দুজন আবাসন ব্যবসায়ী এত দিন ধরে অবস্থান করছিলেন, তা তাহলে কীভাবে হলো? একই কথা পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের বেলায়ও প্রযোজ্য। আশার কথা যে, এই কমিটি দুটোই পুনর্গঠিত হয়েছে। তাহলেও কেবল কমিটি গঠনের মধ্যেই দায়িত্ব শেষ করলে চলবে না। সম্প্রতি বেসামরিক বিমান পরিবহন-সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির বেলায় এ রকম অনিয়মের ঘটনা সংবাদ শিরোনাম হয়েছে। অন্যদিকে বেশির ভাগ কমিটির সুপারিশই পালিত হয় না, কার্যকর করা হয় না। তা-ই যদি হবে, তবে কমিটিগুলোর ভূমিকা হয়ে দাঁড়ায় যাত্রার বিবেকের মতো, যিনি ভালো ভালো কথা বলবেন কিন্তু তাঁর কথা নাটকের পাত্রপাত্রীরা কেউ শুনবেন না। বর্তমান সরকারের সংসদীয় ভূমিকার বেলায় এই পর্যবেক্ষণ উড়িয়ে দেওয়া যায় না। জাতীয় সংসদের যাত্রার শুরুতেই সংসদীয় স্থায়ী কমিটিগুলো গঠন করা হয়েছিল। এমনকি বিরোধীদলীয় সাংসদেরা সংসদ বর্জন করে চললেও সংসদীয় কমিটিগুলোতে তাঁদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত ছিল। কিন্তু এত কিছু করেও সরকারের বাস্তব কর্মকাণ্ডে কমিটিগুলোর তদারকি ও নজরদারির ভূমিকা লক্ষণীয় নয়।
সংসদীয় গণতন্ত্র যেমন একটি জীবন্ত ও আলোচনামুখর সংসদ চায়, তেমনি তার জন্য দরকার কার্যকর সংসদীয় কমিটি। এ দিকটা যেন স্পিকারসহ সংসদের সরকারি দল ও বিরোধী দলগুলোর সাংসদেরা খেয়াল রাখেন। নইলে সবই অলংকারসর্বস্ব হবে, লোক দেখানো হবে; এসবের বাস্তব সুফল দেশ ও মানুষ পাবে না।

No comments

Powered by Blogger.