চারদিক-এগিয়ে যাওয়ার কৌশল by কিঙ্কর আহ্সান

দারুণ রোদ। প্রচণ্ড গরমে একটু পরপর তেষ্টা পায়। এ সময়টায় শসা ও গাজর বিক্রেতাদের পৌষ মাস। দেদার বিক্রি হয় এসব। লবণ মাখানো গাজর কিনে তা খেতে খেতে হেঁটে শাহবাগ থেকে গেলাম কলাভবনের দিকে। লক্ষ্য, আরসি মজুমদার মিলনায়তন। পৌঁছাতেই দেখি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই মিলনায়তনের সামনে ছাত্রছাত্রীদের জটলা।


ঘড়ির কাঁটায় যখন দুইটা বেজে ৩০ মিনিট, তখনই মঞ্চে উঠলেন মারুফ খান। আন্তর্জাতিকভাবে প্রশিক্ষিত বিশিষ্ট লাইফ স্কিল এক্সপার্ট এই মানুষটি আত্মশক্তি অর্জনের কৌশল নিয়ে কথা বলবেন ‘আমার অভিভাবকত্ব আমার’ শীর্ষক আত্মশক্তি পাঠশালায়। শিক্ষার্থীরা সব ক্ষেত্রে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ, স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা এবং বাস্তবায়নের কৌশল সম্পর্কে যেন জানতে পারেন—এর জন্যই এ আয়োজন।
১৫ ও ১৬ মার্চ সৃজনশীল পরামর্শ ও প্রশিক্ষণের ব্যতিক্রমী এ উদ্যোগে শামিল হতে হাজির হন শিক্ষার্থীরা। ‘দক্ষ ও সৃজনশীল নাগরিক গঠনে অবদান রাখার অভিপ্রায়ে আমাদের পথচলা। তরুণেরা যেন সঠিক পথের নির্দেশ পায় এবং আত্মবিশ্বাসী হয়ে কাজ করতে পারে, সে লক্ষ্যেই দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে যাচ্ছে আত্মশক্তি পাঠশালা,’ বলছিলেন আত্মশক্তি পাঠশালার প্রধান নির্বাহী ও ক্রিয়েটিভ ট্রেনিং স্পেশালিস্ট মারুফ খান। যৌবনে হঠাৎ করেই মানুষ পেয়ে যায় অবাধ স্বাধীনতা। তখন তাদের একদিকে থাকে জ্ঞানের জগৎ, অন্যদিকে চাকচিক্য, লোভ-লালসার হাতছানি। সব মন্দ জিনিস এড়িয়ে জীবনের অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে হলে প্রয়োজন নিজের মনের ওপর নিজেরই নিয়ন্ত্রণ। চলার পথের চড়াই-উতরাই পেরিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়ার সৎ সাহস থাকলেই মানুষ সুবিবেচক ও আত্মপ্রত্যয়ী হয়ে ওঠে। এমন মানুষদের জয়রথ থামানো যায় না। সব ভালো কাজেই তাদের আগ্রহ অপরিসীম।
উন্মুক্ত আলোচনার ভেতর দিয়ে শুরু হয় অনুষ্ঠান। দর্শকদের নানা প্রশ্নের উত্তর দেন বক্তা। এখানে জানা যায় দক্ষতা ও সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার কৌশল সম্পর্কে। বিভিন্ন খেলা, ম্যাজিক ও গল্প বলার মধ্য দিয়ে কোর্সের প্রশিক্ষক চেষ্টা করেন অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের ভেতরকার চিন্তাশক্তি, সম্ভাবনা ও গুণের সন্ধান দিতে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-নির্দেশনা ও পরামর্শদান দপ্তরের সহযোগিতায় আয়োজন করা হয় এ কোর্সের। এখানে আলোচনা করা হয় চিন্তা বা বুদ্ধির দক্ষতা সম্পর্কে। এ দক্ষতা মানুষকে সর্বক্ষণ স্বাভাবিক পরিবেশে, স্বাভাবিক থাকতে এবং বিপদ মোকাবিলা করতে সাহায্য করে। জীবনের লক্ষ্য নির্ধারণ এবং সঠিক পরিকল্পনা তৈরির ক্ষেত্রে এর জুড়ি মেলা ভার।
জীবনের সঙ্গে লড়াই করে মানসিক চাপের ভেতর থেকে মানুষকে পার করতে হয় প্রতিটি দিন। কাজের মধ্য থেকে আনন্দ খুঁজে নিতে পারলেই কখনো আর হতাশা এসে থমকে দিতে পারে না চলার পথ। ‘এ কোর্স থেকে আমরা জানতে পারলাম কীভাবে আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। জীবনের নানা বিভ্রান্তি দূর করতে সাহায্য করেছে আজকের আলোচনা।’ আত্মশক্তি পাঠশালার আয়োজন নিয়ে বলছিলেন এক শিক্ষার্থী আতিকুর রহমান। এখানে চারটি বিষয়ের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়। এগুলো হলো—মানুষের জীবনের বিশ্বাস, দুর্বলতা, সুযোগ ও ঝুঁকির আশঙ্কা। সব ধরনের পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিতে হবে নিজেকে। গভীরভাবে চিন্তা করতে হবে সমস্যা নিয়ে। বুদ্ধি ও পরিশ্রমের সমন্বয় হলেই মিলবে সব সমস্যার সমাধান।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আত্মপ্রত্যয়ী, দক্ষ সিদ্ধান্তগ্রহণকারী ও সুবিবেচক হয়ে উঠলেই এগিয়ে যেতে পারে দেশ। চলার পথের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে তা সমাধানে কাজ করার চেষ্টা করলেই সব স্বপ্ন বাস্তবায়ন করা সম্ভব। যেকোনো পরামর্শের জন্য শিক্ষার্থীদের রয়েছে আত্মশক্তি পাঠশালায় আসার সুযোগ।
আলোচনার মাধ্যমে এখানে তাঁরা যাচাই করে নিতে পারবেন নিজেকে।
হাসি, ঠাট্টা, প্রশ্ন আর আলোচনার ভেতর দিয়ে আনন্দমুখর পরিবেশে একটা সময় শেষ হয় পাঠশালার কাজ। সঙ্গের বন্ধুর সঙ্গে কথা বলতে বলতে বের হওয়া শিক্ষার্থীদের দেখে মনে হচ্ছিল, কিছুটা ভারমুক্ত এ মুহূর্তে তাঁরা। কাজকর্ম আর মানসিক চাপ এড়িয়ে করতে আসা কয়েক ঘণ্টার এ কোর্স বাড়িয়ে দিয়েছে সাহস। বাড়িয়ে দিয়েছে ভেতরকার আত্মবিশ্বাস বহুগুণে...।

No comments

Powered by Blogger.