অশালীন ও উসকানিমূলক বক্তব্য পরিহার করুন-জাতীয় সংসদে কী কথা হয়?

প্রধান বিরোধী দল বিএনপি ও তাদের সহযোগীরা সংসদে যোগ দেওয়ার পর জনগণ আশা করেছিল, এবারে সেখানে জাতীয় জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে। বিরোধী দল সরকারের ব্যর্থতা-দুর্বলতা তুলে ধরবে। গঠনমূলক সমালোচনা করবে।


অন্যদিকে সরকারি দলও জনমানুষের সমস্যা-সংকট মোচনে তাদের পরিকল্পনা-কর্মসূচির কথা দেশবাসীকে জানাবে। কোথাও ভুলত্রুটি হলে তা সংশোধন করে নেবে। এটাই গণতন্ত্রের রীতি।
কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, সে ধরনের ইতিবাচক ধারা পরিলক্ষিত হয়নি। গত কয়েক দিনে দুই দলের কোনো কোনো সাংসদ প্রতিপক্ষের প্রতি এমন সব ভাষা ব্যবহার করেছেন, যা শুধু অসংসদীয় নয়, অমার্জিত, অশালীন ও উসকানিমূলকও। রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর বক্তব্য দিতে গিয়ে তাঁরা অপ্রাসঙ্গিকভাবে প্রতিপক্ষকে আক্রমণ করেছেন। স্পিকার বাধ্য হয়ে কয়েকজন সাংসদের বক্তব্য এক্সপাঞ্জ করেছেন। তাতে খুব একটা লাভ হয়নি। বর্তমানে সংসদ টিভির মাধ্যমে সাংসদদের বক্তব্য সরাসরি প্রচার করা হয়। তাঁদের এসব শালীনতাবর্জিত কথা শুনে দেশবাসীর মনে কী প্রতিক্রিয়া হয়, তা সহজেই অনুমান করা যায়।
রোববার প্রথম আলোর খবরে বলা হয়েছে, গত দুই বছরে ১৯০ কার্যদিবসে সাংসদেরা চার হাজারেরও বেশি জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে নোটিশ দিলেও আলোচনা হয়েছে সামান্যই। এ কথা ঠিক, সব জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা সম্ভব নয়। কিন্তু নাগরিকদের জানমালের নিরাপত্তা, আইনশৃঙ্খলার অবনতি, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক সংস্কারের মতো বিষয়গুলো কেন আলোচনা হবে না? জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনার নোটিশ শুধু বিরোধী দল নয়, দিয়েছেন সরকারি দলের সাংসদেরাও। তার পরও এ নিয়ে আলোচনা হয়নি। এতে সংসদের প্রতি সরকারি দলের অনীহাই প্রকাশ পেয়েছে।
আর বিরোধী দলও সংসদে ক্ষণিকের অতিথির মতো এসে কিছু বক্তব্য দিয়ে চলে যায়। ১৫ মার্চ বিরোধী দল সংসদে যোগ দেওয়ার পর সংসদের প্রতি জনগণের আগ্রহ বেড়েছিল। প্রত্যাশা ছিল, দেশে বর্তমানে যেসব সমস্যা রয়েছে, তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে। কিন্তু বিরোধীদলীয় নেত্রী খালেদা জিয়া প্রথম দিনে অনির্ধারিত বক্তব্যে এক ঘণ্টা সাত মিনিট বক্তব্য দেওয়ার পর আর সংসদে যাননি। এখন তিনি চিকিৎসার জন্য বিদেশে। সে ক্ষেত্রে তাঁর সমাপনী ভাষণ থেকেও দেশবাসী বঞ্চিত হলো। তাঁর অনুপস্থিতিতে দলের অন্য সাংসদেরা কাঙ্ক্ষিত ভূমিকা রাখবেন বলে আশা করি।
২৪ মার্চ পর্যন্ত এ অধিবেশন চলবে। রোববার বিরতির পর পূর্বঘোষণা ছাড়াই বিরোধী দলের সাংসদদের সংসদে ফিরে না আসাও রহস্যজনক। তাহলে কি তাঁরা আবার সংসদ বর্জনের দিকে যাচ্ছেন? আগামী কয়েক দিনে অন্তত উভয় পক্ষের সাংসদেরা জাতীয় জনজীবনের সমস্যা, বিশেষ করে লিবিয়ায় আটকে পড়া শ্রমিকদের ফিরিয়ে আনা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, দ্রব্যমূল্য, শেয়ারবাজার ইত্যাদি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবেন, সেটাই সবার প্রত্যাশা। সংসদ বর্জনের সংস্কৃতি থেকে বিরোধী দলকে বেরিয়ে আসতে হবে। আর সরকারি দলকেও উসকানিমূলক বক্তৃতা-বিবৃতি পরিহার করতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.