চয়ন মৌসুম-চা-পল্লিতে জীবনের জয়গান by উজ্জ্বল মেহেদী

চায়ের কচি পাতায় সূর্যের আলো। চিক চিক করছিল সবুজ। পাতায় আড়াল হয়ে থাকা হাতগুলো নড়ছিল পরম মমতায়। একটি একটি করে তোলা হচ্ছে গাছের ডগা থেকে কচি পাতা। বাগানজুড়ে কর্মমুখর হাতগুলোর সঙ্গে শোনা যাচ্ছিল গুনগুনিয়ে গান। ‘পাতি (পাতা) তোলা বড় সুখের কাম/বাগানের নাম—পাতি তোলা বড় সুখের কাম...’।


গান আর কাজের এ রকম উৎসবমুখরতা সিলেট শহরতলির লাক্কাতুরা চা-বাগানে। শুধু এ বাগানটি নয়, চা-পাতা চয়ন (সংগ্রহ) মৌসুম শুরু হওয়ায় সিলেট অঞ্চলের চা-বাগানগুলোতে চলছে এমন উৎসব। আগাম বৃষ্টি হওয়ায় এবার চয়নও শুরু হয়েছে একটু আগেভাগেই। ন্যাশনাল টি কোম্পানির অধীন সিলেটের সবচেয়ে বড় চা-বাগান লাক্কাতুরায় এক সপ্তাহ আগেই শুরু হয়েছে চা-পাতা চয়ন।
আগাম বৃষ্টি অনেকটা আশীর্বাদ হয়েছে জানিয়ে বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক মাইনউদ্দিন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘গতবারের তুলনায় এবার কম বৃষ্টি হয়েছে। চয়ন মৌসুমে আরও বৃষ্টিপাত হলে উৎপাদন এবার ভালো হবে।’
চা গবেষণা ইনস্টিটিউটের হিসাবে বাংলাদেশে ১৬৩টি চা-বাগান। এসব বাগান ঘিরে সাত লক্ষাধিক চা-জনগোষ্ঠীর বসবাস। ১৬৩টি চা-বাগানের মধ্যে পাঁচটি চট্টগ্রামে আর বাকিগুলো সিলেট বিভাগের তিন জেলায়। এর মধ্যে মৌলভীবাজারে ৯২টি, হবিগঞ্জে ৪৪টি ও সিলেটে ২২টি।
লাক্কাতুরার সহকারী ব্যবস্থাপক জিলকার চৌধুরী জানান, আগাম বৃষ্টি হওয়ায় সবার আগে তাঁদের বাগানে চা-পাতা চয়ন শুরু হয়। চলতি সপ্তাহে সিলেট অঞ্চলের সবকটি বাগানে চা-পাতা চয়ন শুরু হয়েছে। মোট ৩২টি ধাপে আগামী ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত চা-পাতা চয়ন চলবে।
চা-পাতা চয়নের সময়টি শ্রমিকদের সবচেয়ে পছন্দের বলে জানালেন লাক্কাতুরার শ্রমিক স্মিতা ছত্রী। কারণ বাড়তি কাজের সুযোগ মেলে এ মৌসুমে। ঘরে ঘরে থাকে বাড়তি রোজগারের আনন্দ। খাদিমনগরের একটি চা-বাগানের শ্রমিক জয় বুনার্জি বলছিলেন, এই আনন্দে অতিরিক্ত কাজের ধকলও তাঁদের জন্য সহনীয়।
‘সুরমা ভ্যালি চা-শ্রমিক ইউনিয়ন’-এর সভাপতি শ্রীবাস মাহালি বলেন, বছরের এই চা-পাতা চয়ন মৌসুমকে সামনে রেখে চা-পল্লিতে নানা রকম কাজের পরিকল্পনা চলে। কাজ থাকলেই রোজগার—তাই যে যত বেশি কাজ করবে, তত বেশি রোজগারের চিন্তাও মাথায় থাকে। তবে এবার বেতন না বাড়ায় অনেকের মধ্যে হতাশাও রয়েছে।
লাক্কাতুরা, খাদিমনগর, মালনিছড়া চা-বাগান ঘুরে দেখা যায়, দিনমান কাজের মধ্যে দুপুরের খাবার শ্রমিকেরা বাগানে বসেই সারেন। নারী শ্রমিকেরা দুপুরের খাবার খান চায়ের কচি পাতার ভর্তা দিয়ে। সুস্বাদু এ ভর্তা ‘পাতি সানা’ নামে পরিচিত।

No comments

Powered by Blogger.