বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশৃঙ্খলা -জাতির ভরসা কোথায়?

বিদ্যাশিক্ষা মানুষের মূল্যবোধ জাগ্রত করে। একজন মানুষকে নার্সিং করে তার মানসিকতাকে পরিশীলিত করে, রুচিবোধ জাগিয়ে তোলে, মানুষের মানবিক গুণাবলির বিকাশ ঘটায়। বিশ্বাস নয়, এটাই পৃথিবীব্যাপী পরীক্ষিত সত্য। আর এ বিদ্যাশিক্ষার প্রধান মাধ্যম হলো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।


শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষার্থীরা যে শুধু পুস্তকজ্ঞান লাভ করে তা-ই নয়, আচার-আচরণ, নৈতিকতা গঠনেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভূমিকা থাকে মুখ্য। সে মতে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের সবচেয়ে মর্যাদাসম্পন্ন ও অনুকরণীয় প্রতিষ্ঠান হওয়ার কথা। এ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের প্রতি সারা দেশের মানুষের শুধু সম্মানবোধই যে আছে তা-ই নয়, তাঁদের অনুসরণ ও অনুকরণও করে থাকে দেশের শিক্ষিত সমাজ। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, আজ এ বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থী এ কথা ভুলে গেছেন। সে কথাই আরো একবার প্রমাণ হলো বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক ডিগ্রি অর্জনকারী শিক্ষার্থীদের সমাবর্তন অনুষ্ঠান সামনে রেখে গাউন ও উপহারসামগ্রী বিতরণে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির ঘটনায়। উপহারসামগ্রীর প্রতিটি থলেতে ছিল একটি মগ, একটি কলমদানি এবং ছেলেদের জন্য টাই ও মেয়েদের জন্য হাতব্যাগ। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে লাইন ভেঙে, নিয়মশৃঙ্খলার তোয়াক্কা না করে বেশ কিছু ছাত্র একটি থলের বদলে একাধিক থলে নিয়ে নেন। বিষয়টি ছিল অনেকটাই লুটের মতো। এ পরিস্থিতি সামাল দিতে স্বয়ং উপাচার্য সেখানে হাজির হন এবং ছাত্রদের উদ্দেশে বলেন, 'তোমাদের আমরা এই শিখিয়েছি, এই শিক্ষা দিয়েছি?'
প্রশ্নটি শুধু উপাচার্যের নয়, গোটা জাতির। কী শিখলেন তাঁরা? সামান্য উপহারের একটি অতিরিক্ত থলে তুলে নিতে যাঁরা নিয়মকানুন ভঙ্গ করে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করলেন, তাঁরা জাতির বৃহত্তম দায়িত্ব গ্রহণের পর লোভ, অনিয়ম, অন্যায়, দুর্নীতি থেকে নিজেকে কতটা দূরে সরিয়ে রাখতে পারবেন, নিজেকে কতটা সংবরণ করতে পারবেন? নিশ্চয়ই বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষার্থী এ ঘটনার সঙ্গে যুক্ত নন। কিন্তু এ বিশৃঙ্খলা একজন বা দুজন শিক্ষার্থী করেননি। সংখ্যাটা ছিল চোখে পড়ার মতো। এমন পরিস্থিতি, এমন সংকীর্ণ আচরণ যেখানে দেখা যায়, সে প্রতিষ্ঠানে কতটা উন্নত পরিবেশ বিরাজ করছে, তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। এ বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই অসংখ্য কৃতী ছাত্র বের হয়ে দেশকে নেতৃত্ব দিয়েছেন, দেশের প্রশাসনের গুরুদায়িত্ব পালন করেছেন। ভবিষ্যতেও এ বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি বড় সংখ্যক শিক্ষার্থী প্রশাসনে গুরুদায়িত্ব পালন করবেন। শুধু কিতাবি শিক্ষা ও পরীক্ষার নম্বর জাতির জন্য কতটা সুফল বয়ে আনবে, সেটি একটি বড় প্রশ্ন। এখন সময়, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে ভেবে দেখতে হবে নৈতিক শিক্ষার জন্য এবং রুচিবোধ তৈরির জন্য কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া যায়।

No comments

Powered by Blogger.