গরমে শিশু ও বৃদ্ধদের প্রতি বিশেষ নজর দিতে হবে by শিশির মোড়ল

গত এক সপ্তাহে ডায়রিয়া, জন্ডিস, জ্বর, সর্দি-কাশির রোগী হাসপাতাল ও চিকিৎসকদের ব্যক্তিগত চেম্বারে বেশি এসেছে। টাইফয়েডের রোগীও বাড়ছে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা বলছেন, হঠাৎ গরম পড়ায় এমন হয়েছে। তাঁরা শিশু ও বয়স্কদের বিশেষ যত্নে রাখার পরামর্শ দিয়েছেন।


তবঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) মেডিসিন অনুষদের ডিন অধ্যাপক এ বি এম আবদুল্লাহ বলেন, গরমে ঘামের সঙ্গে শরীর থেকে লবণ বের হয়ে যায়। এতে ডিহাইড্রেশন বা পানিশূন্যতা দেখা দেয়। তিনি বলেন, এ সময় সতর্কভাবে দুটি কাজ করা দরকার, পানি ও শরবত বেশি বেশি পান করতে হবে। আর যা কিছুই খাওয়া হোক না কেন, তা পরিষ্কার বা বিশুদ্ধ কি না, সে ব্যাপারে নিশ্চিত হতে হবে।
আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) মহাখালী কলেরা হাসপাতালে এই সপ্তাহে প্রতিদিন সাত শতাধিক ডায়রিয়ার রোগী ভর্তি হয়েছে। তাদের ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ তীব্র ডায়রিয়া বা কলেরার রোগী। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, দূষিত পানি এবং বাসি খাবার ডায়রিয়া প্রকোপের প্রধান কারণ।
অধ্যাপক আবদুল্লাহ বলেছেন, বেশি গরমে ঘাম বের হতে হতে একপর্যায়ে কিছু মানুষের শরীর থেকে ঘাম বের হওয়া বন্ধ হয়ে যায়। এতে তারা হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে যায়। এই পরিস্থিতিকে বলা হয় ‘হিট স্ট্রোক’। যাঁরা কায়িক শ্রম বেশি করেন, তাঁদের হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি বেশি। এই পরিস্থিতি এড়ানোর জন্য বেশি পানি বা তরল খাবার খাওয়া উচিত। তিনি গরমে হালাকা ঢিলেঢালা জামাকাপড় পরারও পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, আঁটসাঁট পোশাক ঘাম ঝরতে বাধা দেয়।
রাস্তার ও অপরিষ্কার হোটেলের খাবার, শরবত, আখের রস, কাটা ফল না খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা। রোদে কাজ করেন যাঁরা, তাঁরা ছাতা বা মাথায় কমপক্ষে কাপড় যেন ব্যবহার করেন।
গরমের এই সময় শিশুরা বেশ নাজুক অবস্থায় থাকে—এমন কথা বললেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিভাগের প্রধান অধ্যাপক মো. আবিদ হোসেন মোল্লা। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, এ সময়ে শিশুদের ব্যাপারে বাবা-মা ও অভিভাবকদের বিশেষ সতর্ক থাকতে হবে। স্কুলের পথে বা ফটকের সামনে শিশুরা যেন কোনো খাবার না খায়, সে ব্যাপারে নিশ্চিত হতে হবে। আইসক্রিম বা পানীয়র কারণে শিশুরা ঠান্ডায় পড়ছে। ফুসকা, চটপটি, ঝালমুড়ি থেকেও শিশুদের দূরে রাখতে হবে। যত দূর সম্ভব রোদ ও ধুলা থেকে শিশুদের দূরে রাখতে হবে।
আবিদ হোসেন মোল্লা বলেন, বমি বা পাতলা পায়খানা দেখা দিলেই সতর্ক হতে হবে। প্রয়োজনে কাছের চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। শিশুদের আট ঘণ্টা প্রস্রাব না হওয়া খারাপ লক্ষণ। আর শিশুসহ বাসার সবাইকে অবশ্যই হাত ধুয়ে খাবার খেতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.