শিশু হত্যা-কোথায় চলেছে সমাজ?

আবারও নিষ্ঠুর ও বর্বর মানুষের জিঘাংসার শিকার হলো একটি নিষ্পাপ শিশু। হত্যাকারী একই বিল্ডিংয়ে বসবাসকারী প্রতিবেশী। ধারণা করা হচ্ছে, পূর্বশত্রুতার জের ধরে হযরত আলীর বাসার ভাড়াটে জহিরুল ইসলাম অপহরণ করে ছোট শিশু তন্ময়কে। শিশুটিকে অপহরণ করার পর বিশাল অঙ্কের মুক্তিপণ দাবি করা হয় হযরত আলীর কাছে।


কিন্তু সামান্য দর্জি দোকানের মালিক হযরত আলী কোথা থেকে দেবেন এত টাকা? তাই তিনি শরণাপন্ন হন পুলিশের। অপহৃতের পরিবার সুদূর কল্পনাতেও ভাবেনি যাদের সঙ্গে একই ভবনে ৫ বছরের বেশি সময় বাস করছেন তারা, যারা নিখোঁজ তন্ময়কে খোঁজার জন্য তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে বেরিয়ে পড়েছিল রাস্তায়, তারাই তাকে অপহরণ করতে পারে। অপহরণের অভিযোগ পুলিশে জানানোর পর গোয়েন্দা পুলিশের তৎপরতা শুরু হয়। মুক্তিপণ আদায়ের জন্য করা ফোনকল ট্রেকিং করে জানা যায়, অপহরণকারী ও অপহৃতের বসবাস একই ভবনে। পুলিশ অভিযান চালালে ওই ভবনের ভাড়াটিয়া জহিরুলের ঘর থেকে উদ্ধার হয় শিশুটির লাশ। এ ঘটনাটি যে কাউকে উদ্বিগ্ন ও চিন্তাগ্রস্ত করে তুলবে। আমাদের সমাজ কি অবক্ষয়ের এমনই এক প্রান্তে পেঁৗছে গেছে যে, একই ভবনের প্রতিবেশীর সন্তানকে হত্যার মতো ঘটনাও ঘটতে শুরু করেছে। এই নিষ্ঠুরতা, জিঘাংসার উৎস কোথায়? একই ভবনে বাস করে, সুখে-দুঃখে একসঙ্গে থেকে কেউ কি কারও সন্তানকে অপহরণ করে হত্যা করতে পারে? এ অপরাধ শুধু ক্ষমার অযোগ্য নয়_ সামাজিক অশান্তি ও অবিশ্বাসকে বাড়িয়ে তোলার জন্য দায়ী বলেও বিবেচিত হবে। প্রতিবেশীদের সম্পর্ককেও ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। তাই এ ঘটনার সঙ্গে দায়ী ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া দরকার। আর কেউ যেন এ ধরনের অপরাধ না করতে পারে সে ব্যবস্থাও নিশ্চিত হওয়া দরকার। এ কথা সত্য, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চেয়ে পরিবারগুলোর সতর্কতামূলক ভূমিকা এ ক্ষেত্রে বেশি জরুরি। তবে অপহরণ ও মুক্তিপণের মতো ঘটনা ঘটলে সঙ্গে সঙ্গে পুলিশকে জানানো দরকার। আর পুলিশেরও উচিত এমন ঘটনায় দ্রুত তৎপর হওয়া। অপহরণের ঘটনা সমাজে তীব্র অনিশ্চয়তা, অনিরাপত্তার বোধ সৃষ্টি করে। ফলে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এ অপরাধ দমন করা দরকার। এই হত্যাকাণ্ডের ক্ষেত্রে পুলিশ ইতিবাচক ভূমিকা নিয়েছে। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে হত্যাকারীকে শনাক্ত করে শিশুটির লাশ উদ্ধার করেছে। পুলিশি তৎপরতা আরও প্রশংসা পেত যদি উপযুক্ত সময়ে মোবাইল ট্রেকিং করে শিশুটিকে জীবিত উদ্ধার করা যেত। তবে শুধু আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দায়দায়িত্বের ওপর সব ছেড়ে দিলে সমাধান আসবে না। সমাজে যে নির্মমতা, নিষ্ঠুরতা, হত্যা, সন্ত্রাস, অপহরণের মতো ঘটনা বেড়ে চলেছে_ নিষ্পাপ শিশুরাও রেহাই পাচ্ছে না, এ নিয়ে ভাববার সময় এসেছে। সমাজের মধ্যে সহনশীলতা, সৌহার্দ্য, বিশ্বাস ও ভালোবাসার সম্পর্ক পুনরুদ্ধারের উদ্যোগে দেরি হলে এমন নিষ্ঠুরতার মুখোমুখি বারবার হতে হবে আমাদের। সেটি কেউ-ই চায় না। তাই এখনই গঠনমূলক উদ্যোগ দরকার।

No comments

Powered by Blogger.