মুকুট না থাক, ব্যান্ডানা তো আছে

চাঁদিফাটা রোদ্দুরে পিঠে ল্যাপটপ, হাতে মোবাইল সামলে কাঁহাতক আর ছাতা ফুটিয়ে মাথা বাঁচানো যায় বলুন? বৃষ্টি এন্ট্রি নট-এর আশ্বাস না দিলেও, মাথা আর কেতা দুই বাঁচিয়ে চলার উপায় এখন শহরের ফুটপাথ থেকে পাঁচতারা মলে-সবেতেই। কী? না...এক টুকরো কাপড়।

সাহেবি কেতায় যাকে  ব্যান্ডানা বলা চলে। ফুরফুরে রোদের জন্মদিন কাব্য ছেড়ে কাঠফাটা রোদে পরিণত হতেই হালফ্যাশনের নব্য যুবা-যুবতী মাথা ঢাকতে ওই এক টুকরো কাপড়। আপাত বিন্দাস, কিন্তু আদতে-‘যাক বাবা! মাথাটা তো বাঁচল’।

সামার মানে নো ফ্যাশন যারা বলে, তারা আসলে ফ্যাশনটা বোঝেই না। হাওয়াই শার্ট আর রদ্দি জিনসের সঙ্গে মাথায় ব্রাইট কালারের একটা ব্যাণ্ডানা পুরো লুকটা পালটে দিতে পারে। ছাতা মাথায় ঝাড়ির সমস্যা আর নেই। বরং ঠিকঠাক রঙের মানে ব্রাইট ইয়েলো বা চেরি রেড শেডের একটা ব্যাণ্ডানা মাথায় ক্যারি করতে পারলে, উল্টো রাস্তার হট বেব আপনার পকেটে।

চোখ এদিক-ওদিক ঘুরলেই দেখতে পাবেন জাতীয় পতাকা যত না যত্নে-তার চেয়ে পরিপাটি লুক মাথার এই ফেট্টির। মাথায় পেঁচিয়ে মুটেদের মতো হোক বা কেতাবাজি হাফ পাগড়ির মতো, অথবা ঘাড়ের কাছে খানিক ঝুলিয়ে রকস্টারোচিত ফ্যাশন-‘সামার সামার কুল কুল’ তকমা পেতে এই শিরোবস্ত্রের জুড়ি নেই।

টুপির পরা বা পরানোর মতো কোনও দ্বর্থবোধ লুকিয়ে নেই অথচ কেতা ও কাজে এক্কেবারে পারফেক্ট ব্যান্ডানার তাই জয়জয়্কার।

হঠাৎ করে ছাতা-টুপিকে সরিয়ে ব্যান্ডানার এই রমরমা কেন? আসলে এখন তো পুরোটাই প্যাকেজিং-এর যুগ। মানে ভালো গার্নিশিং না হলে আমরা টেস্টি খাবারও খাই না। ব্যান্ডানার কেসটাও তাই। মানে ধরুন মনে মনে রোদ থেকে বাঁচার ইচ্ছে,কিন্তু কেতা তো মারতেই হবে। তাই সস্তায় পুষ্টিকর ডিজাইনার ব্যান্ডানা মাথায় পাগড়ির মতো বাঁধলে বেশ একটা কেয়ারফুলি কেয়ারলেস বৈষ্ণবী-লুক আসে। মাথাও বাঁচল আবার রাস্তায় লোকজন ঘাড় ঘুরিয়ে দেখল-আর কী চাই!

রাজা-রাজড়ার আমল হলে মুকুট পরতাম। এখন না-হয় ব্যান্ডানা।১৯৯০-৯০-এর দশকে ক্যালিফোর্ণিয়ার এক গুন্ডাদল নিজেদের লোক চেনার জন্য কালো রঙের ব্যান্ডানা ব্যবহার করত। হিপিদের হাত ধরে ব্যান্ডানা-প্রেমের সূত্রপাত। জেন ওয়াই এখন শুধু প্যাকেজের ভাষাই চেনে। তাই মনে মনে ‘মাথা বাঁচাও’-এর প্যাকেজ হলো এই নিউ সামার ফ্যাশন এইছোট গামছা বা ব্যান্ডানা।

শেষ কথা, টাক ঢাকতে ব্যান্ডানার মতো আর কিছু নেই।

No comments

Powered by Blogger.