লোডশেডিং না কমালে জন-অসন্তোষ বাড়বে-বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি

বিদ্যুতের মতো জরুরি সেবার মূল্যবৃদ্ধি ভোক্তার কাছে গ্রহণযোগ্য করতে হলে লোডশেডিং কমাতে হবে। পঞ্চমবারের মতো দাম বাড়ার সময় জনগণের বড় আক্ষেপ ও পরিহাস হবে, যখন ঘাটতি প্রকট হচ্ছে, তখন সরকার বিদ্যুতের দাম বাড়াচ্ছে। বেশি দাম দেওয়ার কষ্ট মেনে নেওয়া যায়, কিন্তু অব্যাহত লোডশেডিং অসহনীয়।


বর্তমান সরকার বিদ্যুত্ উত্পাদনে অগ্রাধিকার দিলেও তার টেকসই সুফল নিশ্চিত করতে পারেনি। কুইক রেন্টাল কেন্দ্র স্থাপন করে সরকার বিদ্যুত্ সমস্যার যে দ্রুত সমাধান করার উদ্যোগ নিয়েছিল, তা-ও অনেকটা প্রশ্নবিদ্ধ।
২০০৯ সালে ৩২০০-৩৩০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত্ উত্পাদন নিয়ে সরকার যাত্রা শুরু করেছিল। গত সাড়ে তিন বছরে বহুল আলোচিত কুইক রেন্টালসহ নতুন প্রকল্পগুলো থেকে সরকার ৩২০০ মেগাওয়াটের বেশি নতুন বিদ্যুত্ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত করেছে। যদিও ওই প্রকল্পগুলো থেকে ২০০০ মেগাওয়াটের বেশি নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুত্ পাওয়া যায়নি। আর অনধিক ২০০০ মেগাওয়াটের এই বর্ধিত বিদ্যুত্টুকু খেয়ে ফেলেছে বর্ধিত চাহিদা। সুতরাং, বিদ্যুত্ খাতে সরকারের সাফল্যের দাবি শুভংকরের ফাঁকিতে পরিণত হয়েছে। সাধারণ মানুষ হিসাব চায় না, বিদ্যুত্ চায়।
সরকার যুক্তি দিতে পারে, বাড়ানোর পরও বিদ্যুতের দাম নেপাল, শ্রীলঙ্কা ও ভুটানের মতো প্রতিবেশী দেশকে ছাড়িয়ে যায়নি। এ কথাও সত্য, বর্তমান সরকার পঞ্চম দফায় দাম বাড়ালেও মোট বৃদ্ধি ইউনিটপ্রতি এক টাকা অতিক্রম করেনি। সুতরাং, বিরোধী দলের মূল্যবৃদ্ধির কঠোর সমালোচনার বাণ ততটা কার্যকরী নয়। কিন্তু মানুষের তাতে আশ্বস্ত হওয়ার কথা নয়। কারণ, তারা বিদ্যুত্ না পেয়ে সরকারের প্রতি বিরক্ত। লোডশেডিং নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাবে কি না, সেটাই তাদের বড় উদ্বেগের বিষয়।
গত এশিয়া কাপে চূড়ান্ত খেলার দিন সারা দেশে ৬০০০ মেগাওয়াটের বেশি বিদ্যুতের সরবরাহ মিলেছিল। এর বাইরে চট্টগ্রামে নতুন করে ৩০০ মেগাওয়াট যুক্ত হলো। সুতরাং, এই প্রায় সাড়ে ৬০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত্ তৈরির সামর্থ্য যদি প্রায় পুরোটাই কাজে লাগানো যায়, তাহলে বিদ্যুত্ বিভাগ তারিফ পেতে পারে। আমরা এ ক্ষেত্রে তাদের সর্বোচ্চ সক্ষমতা আশা করি।
সরকারি মহল থেকে গ্যাস ও কয়লাভিত্তিক বড় কেন্দ্রগুলো সম্পর্কে বলা হচ্ছে, অনেকগুলো কেন্দ্রের জন্য কার্যাদেশ দেওয়া হয়ে গেছে। সুতরাং, কাজও শিগগির শেষ হবে। কিন্তু প্রতিটি প্রকল্পই তফসিল নির্দিষ্ট অগ্রগতির চেয়ে পিছিয়ে আছে। এটা হালনাগাদ করতে হবে। এ ছাড়া সরকার একদিকে বলছে, কয়লা তোলা হবে না, ভবিষ্যত্ প্রজন্মের জন্য রেখে দেওয়া হবে। অন্যদিকে, ২০৩০ সালের মধ্যে দেশীয় কয়লা ব্যবহার করে ১১ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত্ উত্পাদনের নীতি ঘোষণা করেছে। এই দ্ব্যর্থকতা ও দোদুল্যমানতার অপনোদন করতে হবে। জনগণকে সহনীয় দামে বিদ্যুেসবা দেওয়ার সক্ষমতা অর্জন করতে হলে দেশের কয়লা ও গ্যাস সম্পদের সুষম ব্যবহার নিশ্চিত করতেই হবে। তাই সমুদ্রসহ যেখানেই গ্যাস ওঠানোর সম্ভাবনা আছে, সেখানে ত্বরিত পদক্ষেপ নিতে হবে। আর প্রতিবেশী দেশ থেকে বিদ্যুত্ আমদানির সিদ্ধান্তও যাতে অহেতুক বিলম্বিত না হয়, সে বিষয়টিও আমলে নিতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.