কার্যকর সংসদের বিকল্প নেই

গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে জাতীয় সংসদের ভূমিকা অনন্য। সংসদীয় গণতন্ত্রের অন্যতম স্তম্ভ এটি। শুধু আইন প্রণয়নই নয়, এখানকার আবহ দেশের রাজনীতিকে প্রভাবিত করে। রাজনীতিবিদদের ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা নির্ধারণে সহায়তা করে এবং সর্বোপরি দেশ পরিচালনায় দিকনির্দেশনার জন্য যুগের উপযোগী আইন প্রণয়ন করে।


সুতরাং যে দেশে সংসদ যত শক্তিশালী সে দেশের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ও পরিবেশ তত শক্তিশালী। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলো, আমাদের সংসদ সব সময় রাজনীতিবিদদের দ্বারাই উপেক্ষিত হয়। যে দল ক্ষমতার বাইরে থাকে সে দলই সংসদকে উপেক্ষা করে। ফলে গণতন্ত্র বিধিসম্মত হলেও এখানে সংসদ চলে একদলীয় কিংবা সমমনা কিছু দলের ইচ্ছামাফিক। আর বিরোধী বড় শক্তি বাইরে থাকায় সংসদ অধিবেশনগুলো হয়ে পড়ে নিষ্প্রাণ। সংসদে এসে বিরোধী দলের যে কথা বলা প্রয়োজন সে কথাগুলো তারা সংসদের বাইরে বলে। ফলে বৃহত্তর পর্যায়ে তাদের বক্তব্য পেঁৗছতে পারে না। জাতীয় উন্নয়নে বিরোধী দলের যে ভূমিকা থাকার কথা সে কারণে তাও পূর্ণাঙ্গ হয় না।
সংসদ অধিবেশন শুরু হচ্ছে আজ থেকে। এটি ২০১০-২০১১ অর্থবছরের শেষ অধিবেশন। তাই বাজেটও পাস হবে এ অধিবেশনে। বাজেট অধিবেশন সাধারণত জুন মাসে আহ্বান করা হয়। কিন্তু সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা থাকায় এ বছর মে মাসেই অধিবেশন ডেকেছেন রাষ্ট্রপতি। বাজেট ছাড়াও এ অধিবেশন বিভিন্ন কারণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ অধিবেশনেই সংবিধান সংশোধনের বিষয়েও আলোচনা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আলোচনা-পর্যালোচনার মাধ্যমে তা পাসও হতে পারে। সংবিধান সংশোধনের জন্য গঠিত সংসদীয় কমিটি এরই মধ্যে ব্যাপক আলোচনা-পর্যালোচনা করে তার প্রস্তুতিও নিয়েছে। সমাজের বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের সঙ্গে আলোচনা ও তাদের মতামত গ্রহণ করেছে সংসদীয় কমিটি। সুতরাং বিভিন্ন দিক বিশ্লেষণ করে বলা যায়, এ অধিবেশনটি অন্য সব অধিবেশন থেকে সংগত কারণেই অত্যন্ত গুরুত্ববহ। দুর্ভাগ্যজনক হচ্ছে, বিরোধী দল এ অধিবেশনেও যোগ দিচ্ছে না। এটা প্রায় নিশ্চিত। কারণ ইতিমধ্যে সংসদে যোগ দেওয়ার ব্যাপারে তারা যে শর্ত আরোপ করেছে, তাতে মনে হয় না তারা সংসদে যোগ দেবে। তাদের দাবি অনুযায়ী মধ্যবর্তী নির্বাচন দিলেই তারা সংসদ অধিবেশনে যোগ দিতে পারে। সুতরাং এ দাবি দেখেই মনে করা যায়, তারা সংসদে যোগদান থেকে বিরত থাকছে।
যদি এ অধিবেশনেই সংবিধান সংশোধনের ব্যবস্থা করা হয়, তাহলে বিরোধী দলের সেখানে যোগ দেওয়া অপরিহার্য। কারণ সংবিধান সংশোধন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এ বিষয়ে যাতে কোনো ত্রুটি-বিচ্যুতি না থাকে, তা দেখার দায়িত্ব সরকারি দল, বিরোধী দল নির্বিশেষে সবার। সরকারি দল সংশোধনের বড় কাজটি করলেও সেখানে বিরোধী দলের পরামর্শ-সমালোচনা ত্রুটি কমিয়ে আনতে সহায়তা করবে। একইভাবে বাজেটের কথাও বলা যায়। বাজেট সম্পর্কে তাদের নির্দিষ্ট প্রস্তাবনা ও সমালোচনাগুলো বাজেটকে যথার্থ করার কাজে সহায়তা করবে। এ পরিস্থিতিতে বিরোধী দলের সংসদে যোগ না দেওয়ার কোনো যুক্তি থাকতে পারে না। তাই বিরোধী দল এখনো তাদের মত পরিবর্তন করে সংসদ অধিবেশনে যোগ দেবে_এই প্রত্যাশা সবার।

No comments

Powered by Blogger.